|
লেখাজোকা শামীম
|
|
চড়ুই চড়ুই খেলা -০১
14 May 2015, Thursday
প্রোডিউসার তার গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। লক্করঝক্কর মার্কা গাড়ি। এই ব্যাটার সব কিছুই লক্কর ঝক্কর। যেমন গাড়ি লক্কর ঝক্কর, তেমনি ড্রাইভারও লক্কর ঝক্কর। সেই লক্কর ঝক্কর ড্রাইভার সকাল বেলা আমার বাড়ির সামনে এসে আমাকে না ফোন দিয়ে ফোন দিল প্রোডিউসারকে। প্রোডিউসার ঘুম ভেঙ্গে ফোন দিল আমাকে। আমি তখন ছিলাম বাথরুমে। শাওয়ার ছেড়ে গুনগুন করছি। ফলে একের পর এক ফোন বেজে গেল। আমি শুনতেও পেলাম না।
বাথরুম থেকে ফিরে যেই মোবাইলে প্রোডিউসার ফোন দিয়েছিল সেটা না দেখে অন্য মোবাইল দিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করলাম । অদ্ভুত নাম ব্যাটার - পোকা মিয়া। এবার পোকা মিয়া ফোন ধরে না। আমি ফোন করেই চলেছি।
হঠাৎ করে অন্য ফোনটা বেজে উঠল। দেখি প্রোডিউসার ফোন করেছে। ধরলাম এবং ঝাড়ি খেলাম।
‘ধুর, মিয়া এত ঘুমান ক্যান ? ৫ বার ফোন দিলেও ধরেন না।’
‘আমি বাথরুমে ছিলাম। ’
‘ড্রাইভার সকাল থিকা আমারে ফোন দিয়া জ্বালাইতাছে। আপনের বাড়ির সামনে গাড়ি।’
‘আমাকে ফোন না দিয়ে আপনাকে ফোন দিচ্ছে কেন ?’
‘ওই হারামজাদাটারে একটা থাবড়া দিয়া এই কথাটা জিগান।’
আমি প্রোডিউসারের ফোন কেটে দিয়ে আবার অন্য ফোন দিয়ে ড্রাইভারকে ফোন করলাম। ব্যাটার ফোন বিজি। আর ফোনাফুনি করে লাভ নাই। সোজা নেমে এলাম নিচে।
গাড়ি আমার বাড়ির সামনে। কিন্তু ড্রাইভার নেই। ফোন দিলাম। ফোন এখনও বিজি। অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নাই।
প্রোডিউসারের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আমার হাসি পেল। গাঢ় খয়েরি রঙের একটা গাড়ি। পুরোনো মডেলের টয়োটা করোলা। মেরামতে মেরামতে সেটা এখন আর জাপানী গাড়ি নয়, চায়নিজ গাড়ি হয়ে গেছে। পুরাই লক্কর ঝক্কর।
আমি কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে লাইট পোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম। ড্রাইভার গাড়ি রেখে কোথায় গেল বুঝতে পারছি না।
নবনীতাকে ফোন দিলাম। আজ দুপুরে ওর আসার কথা। এটা ক্যান্সেল করতে হবে। নইলে অনর্থক এসে ঘুরে যাবে। তারপর আমাকে ফোন করে ঝাড়ি দিতে শুরু করবে। ওর ঝাড়ি খাওয়াটা মজা লাগে, কিন্তু মাঝে মাঝে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। অসভ্য অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে। ওর মতো মেয়ের মুখে অশ্লীল শব্দ মানায় না।
নবনীতা এক অদ্ভুত মেয়ে। বখে যাওয়া তবে খুব মেধাবী। শিশা লাউঞ্জে নাকি এক সময় খুব পড়ে থাকত। ওর বয়ফ্রেন্ড ওকে ফেলে চলে যাওয়ার পর শিশা লাউঞ্জে আর যায় না।
এখন চেষ্টা করতে অভিনেত্রী হওয়ার। ওর মতো আগুন-সুন্দরীর পক্ষে বিখ্যাত অভিনেত্রী হওয়াটা কোন ব্যাপার না। সমস্যা একটাই -ওকে দেখলে সব পুরুষ লোকরাই তাতিয়ে ওঠে।
নবনীতার ফোন বেজেই চলেছে। ধরছে না। ওর ঘুম খুব গাঢ়। এখনও কোন নেশা করে কি না জানি না। ইয়াবা তো এখনকার প্রিয় নেশা সবার। ইয়াবা খেয়ে আউলা মাথা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোটা এখনকার ফ্যাশন। একবার যে নেশা ধরে সে কি আর ছাড়তে পারে ?
একদিন আমার অফিসে বসে ঝিমাচ্ছি এমন সময় ডোর বেল বেজে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলে হা হয়ে গেলাম। ব্রাউন কালারের ঝাঁকড়া চুলের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুনো চেহারা। লাল-ফর্সা মেয়েটি একটা টি শার্ট ও জিন্স পরেছে। গলায় হেলাফেলায় একটা ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছে।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে জানতে চাইল, ‘ডিরেক্টর আরিয়ান আছেন ?’
আমি বললাম, ‘আছেন।’
আমি দরজা থেকে সরে গেলাম। ও ভেতরে ঢুকল। আমি রিসেপশন পেরিয়ে সোজা ওকে আমার রুমে নিয়ে এলাম।
ও চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ‘উনি কোথায় ?’
আমি চেয়ারে বসতে বসতে বললাম, ‘বলেন।’
ও বিস্মিত হয়ে বলল, ‘আপনিই সেই ডিরেক্টর ?’
প্রত্যুত্তরে আমি হাসলাম। ও ফস করে বলে বসল, ‘আপনি তো খুব পিচ্চি। ’
আমি হা হা করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে ও বিব্রত ভঙ্গিতে হাসতে চেষ্টা করল। আসলে ও লজ্জা পেয়েছে। লজ্জা পেয়ে ওর ফর্সা গাল লাল হয়ে উঠেছে। ওর সেই ফর্সা বুনো গাল দেখে আমার শরীর শির শির করে উঠল। এই মেয়ে তো আগুনের গোলা।
ও বলল, ‘সরি, আমার এভাবে বলা উচিত হয় নি।’
‘ইটস ওকে।’
সেই থেকে নবনীতা আমার সঙ্গে আছে। অভিনয় শিখছে। কী শিখছে কে জানে। আমি মোটেও সময় দিতে পারছি না।
তবে আমার লাভ হচ্ছে। প্রথমত ওর সঙ্গ আমার খুব ভালো লাগে। উষ্ণ সরস একটা মানুষ। ওর সঙ্গে কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায়।
তারপর হল খাবারের লোভ। ও আসার সময় কিছু না কিছু খাবার দাবার কিনে নিয়ে আসে। ও অভিনয়ের নানা রস প্রাকটিস করে আর আমি একের পর এক ফাস্ট ফুড গিলে যাই। খাবার সাবাড় করতে করতে ওর রংঢং দেখি।
ইদানিং ও আমার গায়ে হাত দিয়ে কথা বলে। কথা বলতে বলতে আমার চুলে হাত দেয়, আমার শার্টের বোতাম নিয়ে খেলা করে, কখনও কাঁধের উপর থেকে ধুলো ঝেড়ে দেয়। এটাও ভালো লাগে। ও সামনে এলে একটা বুনো গন্ধ পাই। কখনও মনে হয়, গন্ধটা ওর চুলের, কখনও মনে হয় গন্ধটা ওর মুখের, কখনও মনে হয় গন্ধটা ওর ঘামে ভেজা ঘাড়ের। মাঝে মাঝে ও পারফিউম ব্যবহার করে। তখন ভালো লাগে না। ওর শরীরের বুনো গন্ধটা যে কোন পারফিউমের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।
(চলবে)
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন