|
মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত
|
|
রম্যগল্প - একজন ধর্ষকের অভিযোগ
14 May 2015, Thursday
পুলিশের আইজিপি সাহেব গভীর ঘুমে। ঘুমে স্বপ্ন দেখছেন যে তিনি বিচিওয়লা কলা খাচ্ছেন । ঐ কলা না, মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত বিচিওয়ালা কলা। হেভভি টেস্ট। হঠাৎ উনার রুমে কাফনের কাপড় পড়া একজন উপস্থিত। খাটের কিনারায় বসতে গিয়ে শব্দ হয়ে গেল। বড় সাহেবের ঘুম গেল ভেঙ্গে। কাফনের কাপড় পড়া লোকটি লজ্জা পেয়ে বলল -
- সরি স্যার , শব্দ হইয়া গেছে , গুস্তাফি মাফ করবেন
আইজিপি সাহেব ঘুম ঘুম চোখে বলল -- তুমি কে ?
- স্যার , আমি লাশ। নাম শামিম । বয়স ৩৫।
আইজিপি সাহেবের ঘুম পুরোপুরি চটে গেল। স্বপ্নে দেখেছেন নাকি বুঝতে নিজের গালে নিজেই চড় বসিয়ে দিল , বাপরে বাপ । ব্যাথা লাগে । এরমানে ঘটনা সত্য সত্য ঘটছে। উনার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন ট্রেনিং থাকায় ভয়কে তিনি কন্ট্রোল করতে শিখেছেন। মন্ত্রী নেতাদের তিনি চুটতিতে সামাল দিয়েছেন আর এ তো লাশ !! তার এখন উনার ভয় পেলে চলবে না। যথাসম্ভব পালটা আক্রমণ করে লাশকে ভয় দেখিয়ে দিতে হবে। এতদিনের ট্রেনিং, আজ কাজে লাগাতে হবে। তিনি কোনমতে গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বললেন -
--শামিম্মা , তোর সাহস তো কম না !! জানোস আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে । দিমু গুল্লি কইরা , ভাগ হালারপুত
শামিম নাক ঝেড়ে বিছানায় হাত পরিষ্কার করে বলল --স্যার , কাউয়ারে যেমন আলকাতরার ভয় দেখাইয়া লাভ নাই তেমনি লাশরে পিস্তলের ভয় দেখাইয়া লাভ নাই। বুঝচ্ছেন নি?
পুলিশের বড় সাহেব , নিজের ভুল বুঝতে পারলো। সত্য কথা। লাশরে পিস্তলের কথা কইয়া ফয়দা নাই , তাকে ভিন্ন লাইনে এগিয়ে যেতে হবে। সূরা কালাম পড়ে ফু দেয়া যায় , কিংবা রসূন আগুন দেখালেও একটা লাভ হতে পারে। কিন্তু এতো রাতে রসূন কই পাবে ? সমস্যা হল সূরাও ঠিক মতো মনে পড়ছে না। ভালো বিপদে পড়া গেল। লাইন নাম্বার তিন । উনাকে এখন যেতে হবে কনভিন্সিং লাইনে। লাশকে কথার যাদুতে কনভিন্স করে ফেলতে হবে। এইটাও উনার ট্রেনিং এর অংশ।
--শামিম ভাই , চা কফি কিছু খাবেন ?
-- না স্যার , চা খাই না । খাওয়ার সাথে সাথে পিছন দিক দিয়া বের হয়ে যায়। মইরা এই হইছে এক বিপদ। কিছুই রাখতে পারি না। সঙ্গে সঙ্গে খালাস হইয়া যায়।
-- ও আইচ্ছা।
-- স্যার , আমি একটা অভিযোগ নিয়া আইছি , যদি অনুমতি দেন তো পেশ করি
-- বিলকুল ,শামিম ভাই । আপনি বলতে থাকেন , আমি নোট করে নিচ্ছি। কাল ভোরেই অ্যাকশনে যাবো ইনশা আল্লাহ্। বলুন ভাই
-- স্যার, আমি বেশ কিছুদিন আগে নেত্রকোনায় ১৫ বছরের এক কিশোরীকে আচ্ছামত ধর্ষণ করি। খেক খেক ( হাসি )
-- সো স্যাড।
--- সমস্যা হইল স্যার , আমারে তো ফাঁসি দিয়া দিল। ফাঁসি দিছে যখন তখন আমার আপত্তি ছিল না। বাচ্চা একটা মেয়েরে ধর্ষণ করছি , আমি অনুতপ্ত আছিলাম। ফাঁসি দিছে তখন খুশি হইছি। ফাঁসিতে থ্রিল আছে স্যার। কিন্তু আইজ আমার খুশি নাই , আইজ আমি বেজার।
-- বেজার কেন ?
-- ওমা , ধর্ষণের বিচার ফাঁসি ক্যামনে হয় ? আমার সাথে স্যার অবিচার হইছে। আমি এর বিচার চাই
-- বলেন কি !!! ধর্ষণ একটা অপরাধ। জঘন্য এই অপরাধের বিচার তো ঠিক ই আছে !
-- স্যার ঠিক নাই । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের TSC র পাশে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘তিন-চারটা ছেলের দুষ্টামি ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা’ বলা হইলে , আমার ধর্ষণের বিচার ডিরেক্ট ফাঁসি ক্যামনে হয় ? আমি না হয় একটু বেশী দুষ্টামি করছি , তাই বলে ফাঁসি !! মানতে পারলাম না স্যার। আমি এর বিচার চাই । আমার ফাঁসি উইথড্র করতে হইবে , নাইলে আমরা সকল ধর্ষণ মামলার আসামিরা অসহযোগ আন্দোলনে নামবো। তখন কেউ রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারবে না। ভয় দেখাইয়া সবাইরে বিছানায় মুতাইয়া দিমু। হুম, এই বলে আমি দিলাম স্যার !
পুলিশের আইজিপি, এইবার ঘামা শুরু করলেন। এই প্রথম তিনি অসহায় বোধ করছেন। হায় হায় , সত্যি সত্যি যদি তারা আন্দোলন শুরু করে , তবে রাতে ঘুমিয়ে তিনি কলা খাওয়া দেখবেন কীভাবে !
খুব ই চিন্তার বিষয় !! চিন্তায় উনার পুটু ঘেমে যাচ্ছে
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন