|
রোকসানা লেইস
|
|
পথ চলার গল্প
08 May 2015, Friday
বেশ কয়েক মাস ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ঘরের চেয়ে পথ আর আজানার সাথে বেড়েচ্ছে শখ্যতা। দৈনন্দিন জীবন হয়েছে ভিন্নতর। কাছের মানুষ দূরে আর পৃথিবীর কত অচেনা মানুষের সাথে হয়ে যাচ্ছে চেনা জানা। প্রাত্যহিক হিসাব নিকাশ দৈনন্দিন জীবন যাপনে এক ভিন্নতর সুর। ঘুম, খাওয়ার নেই কোন ঠিক ঠিকানা। আজ যে সময়ে সকাল কাল সে সময় দুপুর বা রাত আমার জন্য আমার ঘড়ির সময় মতন। অথচ প্রতিটি জায়গায় ঘড়ির কাটা চলছে এক ঘূর্ণিপাকে।
প্রতিটি নতুনকে দেখার তাড়নায় আমি চোখ মেলে রাখি নিরন্তন। শরীর এবং চোখে ক্লান্তি তবু মনে অফুরন্ত উচ্ছাস। ক্লান্তিময় চোখে তবু পৃথিবী দেখার আকাঙ্খায় মেলে রাখি যতদূর পথ চলা তত সময় চোখ ও মন। আর কোথাও পৌঁছানোর পর শুরু হয় পথ চলা প্রতিটি বিষয় হৃদয়ের কাছে তুলে আনার জন্য, দু পায়ে ভর করে ছুটে ছুটে চলা অবিরত। যতক্ষণ সময় ততক্ষন দুচোখ ভরে দেখা, মনের সিন্দুকে বন্দী করা নতুনের সংগ্রহ।
এ ভাবে গত কয়েক মাসে পার হতে হলো অনেক পথ পেরিয়ে গেলাম অনেক গন্তব্য। অনেক রেল বাস বিমান বন্দর।
অচেনা অজানা বিদেশী ভাষা, সংস্কৃতির পার্থক্য মনের মাঝে খানিক শংকা জাগালেও এক সময় জেনে যাই মানুষ আসলে এক জাতী, এক অনুভব, এক অনুভুতি। অচেনা মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে আপন করে নেয়ার এক যাদুকরী মায়া প্রতিটি মানুষের মনে।
হোক না ভাষার পার্থক্য কথা বলায় অসুবিধা। তারপরও কিভাবে যেন আমরা বিনিময় করি নিজেদের মনোভাব। সে এক আশ্চর্য আনন্দ অনুভব।
আকাশের কোল থেকে মাটির পৃথিবীতে নেমে মনে হয় যেন অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে ফিরে আসা সচল জীবনে, খোলা হাওয়া মুক্তির স্বাধ লাগে গায়ে বিমানের কোরিডোর পেরিয়ে বিমান বন্দরে পা রাখার সাথে।
নিয়মের বাধা পেরিয়ে বাইরে বেরুতেই এক অন্য জীবন, অন্য আনন্দ উচ্ছাস এক নতুনের স্বাধ। এবার দেখার পালা দুচোখ ভরে পান করা হৃদয় ভরে অচেনা মদিরা, পৃথিবীকে ভালোবাসা।
এভাবে গত কয়েক মাসে পেরিয়েছি প্রায় ষোল সতেরটি বিমান বন্দর। না পৃথিবীর কোন দেশে কোন ছোট বড় বিমান বন্দরে এতটুকু অসুবিধা হয়নি নিয়ম পেরুতে। বাক্স প্যাটেরা খুঁজে পেতে। বিশাল বিমান বন্দর হেঁটে এসে অনেক সময় পেয়েছি আমার ব্যাগ নিখুঁত অবস্থায় অপেক্ষা করছে ব্যাগেজ ব্যাল্টের উপর বা পাশে কেউ নামিয়ে রেখেছে যত্ন করে।
শুধু নিজের দেশে এসে পেলাম আমার স্যুটকেসের তালাটি উধাও হয়ে গেছে। ভিতরের জিনিস পত্র উল্টা পাল্টা করা হয়েছে্ তুলে নিয়েছে আমার কিছু জিনিস আপন মনে করে বিমান বন্দরের কোন চোর কর্মচারী। ভিন্ন দেশে যখন ভয়ে থেকেছি, কেউ কিছু টেনে নেয় কিনে কিনা। অথচ নিরাপদ নিশ্চিন্ত ভাবে পেয়ে গেছি সব সুবিধা। অচেনা মানুষকে ভরষা করে যখন নিশ্চিন্ত ভাবে জানতে চেয়েছি পথের দিশা। কথা বলেছি পেয়েছি সহযোগীতার হাত। তখন নিজের দেশে কারে সাথে কথা বলায় দূরত্ব বজায় রাখতে হয়েছি সচেষ্ট। যতদূর সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছি।
সব আনন্দের এক নিরানন্দ বিরক্তিকর অনুভূতি দিল নিজের দেশ। প্রতিটি দেশে এক একটি বিশাল বিমান বন্দর, সুন্দুর ঝক ঝক করছে।
আর আমাদের একটি মাত্র বিমান বন্দরের কী দৈন্যদশ। নোংরা যেমন পরিচ্ছনাতায়, তেমনি নোংরা ব্যাবহার কর্মচারীদের। কারো কোন সাহায্যকারী মন নেই। আছে প্রখর শকুন চোখ কি ভাবে যাত্রীটিকে শোষন করা যায় তার দিকে। আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে যদি আর্ন্তজাতিক মান রক্ষা না হয় বর্হিবিশ্বের যাত্রীদের কাছে তুলে দেয়া হয় আমাদের দৈন্য করুণ চিত্র। আশাকরি যথাযথ কতৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর দিবেন। এবং সুস্থ, সুন্দর মানসিকতা ও পরিবেশ বিরাজ করেবে দেশের বিমান বন্দরে। সাহায্য পাবে প্রতিটি যাত্রী সমান ভাবে কর্মচারীদের থেকে।
সব শেষের এই অনুভব ছাড়া বাকি সব ছিল সুন্দর।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন