|
অক্টোপাস পল
|
|
অণুগল্পঃ ভালোবাসা
30 March 2015, Monday
বছরখানেক পর আজ একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করলো। না খাওয়ার জন্য অনেকটা পথ জোরে জোরে হাঁটছিলাম। নিউমার্কেটের সামনে দুই ভ্যান পুলিশ সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে আমাকে খানিকক্ষণ মাপলো। তারপর মন দিলো তাদের থামিয়ে রাখা খোশগল্পে।
নীলক্ষেতের গলিতে অনেকবার ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেলাম। গাট্টাগোট্টা একটা বেওয়ারিশ কুকুরের লেজে অজান্তে পা দিতেই সে কুঁই কুঁই করে এমনি মরাকান্না জুড়ে দিলো যে অন্য পথচারীরা আমাকে রীতিমতো কটাক্ষ করলো। ঢাকা শহরে পশুপ্রেমী মানুষের সংখ্যা এখন অনেক বেশী। পশু নির্যাতন করে পার পাওয়া যাবে না। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সটকে পড়লাম। এদিকে শরীরে ঘুমিয়ে থাকা নিকোটিনের ভূত ঘষা খাওয়া চেরাগের দৈত্যের মতো প্রাণপণে আবির্ভুত হতে চাইছে। মাথার ভেতর মগজ তখন ফেনিল ভাতের মতো টগবগ করে ফুটছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। কপালের ডান পাশের রগটা অকারণে দপ দপ করে লাফাচ্ছে। খেয়াল করলাম গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড তৃষ্ণা হচ্ছে। এ তৃষ্ণা পানির নয়। এর জন্ম অন্য কোথাও। অন্য কোন জগতে। মানিব্যাগ থেকে একটা দশ টাকার লাল নোট বের করলাম।
খেয়াল করেছি বেশীরভাগ সিগারেটওয়ালাই প্রচন্ড ধূমপান বিদ্বেষী। সিগারেটের ক্ষতিকর ব্যাপারগুলো এরা আগাগোড়াই জানে। মৃত্যুর ফেরিওয়ালার মতো হাসিমুখে এরা সিগারেট বেচে যায়। অবসরে বুক পকেটের টাকা গোনার সাথে সাথে যোগ-বিয়োগ করে মৃত্যুর হিসেবও। এই সিগারেটওয়লা ব্যতিক্রম। চোখে নিরাসক্তি আর ঠোঁটে সিগারেট রেখে সে বেশ ব্যস্ত হয়ে সিগারেট বিকোচ্ছে। আমি দশ টাকাটা তার সামনে রাখলাম। "সাদা না লাল?", এক দৃষ্টিতে সে আমাকে আগাগোড়া মেপেছে। "সাদা", হাত বাড়িয়ে সিগারেটটা নেই। তারপর সেটা মুচড়ে দেই। পায়ের নিচে ফেলে পিষতে থাকি প্রচন্ড আক্রোষে। "ভাইজান উনারে আইজ চুমাটা দিলেও পারতেন। তারে দেইখা কিছু বুঝেন নাই?" , আমি বিস্ময়ে বোবা হয়ে যাই। ছিন্নভিন্ন সিগারেটটাকে ঝেড়েপুঁছে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করি। প্রেমিকাকে চুমু বঞ্চিত করার আফসোস ততক্ষণে ধোঁয়া হয়ে আমার ফুসফুস স্পর্শ করেছে।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন