|
খেয়া ঘাট
|
|
(টুটুন বালতি-একটি ভিন্ন রকমের মোরাল গল্প। আশাকরি, আপনাদের ভালো লাগবে।)
28 March 2015, Saturday
(টুটুন বালতি-একটি ভিন্ন রকমের মোরাল গল্প। আশাকরি, আপনাদের ভালো লাগবে।)
শেষ পর্যন্ত টুটুন বালতিটা বিক্রি হয়নি। বালতি নিজেও জানতো ও কোনোদিনও কারো কাছে বিক্রি হবেনা। ওকে কিনে নিবেই বা কে? ওর তলায় যে বেশ কয়েকটি ফুটো। তাইতো ও দোকানে অবহেলায় পড়েছিলো অনেকদিন।
আস্তে আস্তে একদিন মালিকের দোকান পাকা হলো।নতুন নতুন মাল ওঠলো। যে জিনিসগুলো একেবারেই কোনো কাজে লাগবেনা মালিক সেগুলো রাস্তার কিনারে ফেলে রাখলেন।
বালতি জানতো, এবার সে নিয়মিত পথচারীদের লাথি উষ্ঠা খাবে। টুং করে শরীর বেজে ওঠলেই ও লাত্থিটা খুব ভালো ভাবেই অনুভব করতে পারতো।
এভাবে কতজনের কত লাত্থি গায়ে লাগলো তার। তারপর, কারো একজনের অনুগ্রহ হয়ে -বালতিটা একদিন এক দরিদ্র গৃহে আশ্রয় পেলো।
বালতিটা নিয়ে মালিককে সেই দূরের একমাত্র জলকুয়োয় যেতে হয়। রুক্ষ মরু পথে অনেক দূর হাঁটতে হয়। এই এলাকায় জলমেঘ না থাকায় আশে পাশে কোথাও পানির সন্ধান নেই। প্রতিদিন বালতি ভর্তি করে পানি নিয়ে ঘরে ফিরতেই অর্ধেক খালি হয়ে যায়। অনেকবার চেষ্টা করেও ফুটোগুলো বন্ধ করা যায়নি। এদিক ওদিক দিয়ে পানি পড়বেই।
মালিক গজগজ করেন। মনে মনে বলেন- সেদিন বাজার করতে গিয়ে পকেটচুরি না হলে -এই কানা বালতি নিয়ে কেউ কি ঘরে ফিরে?
এভাবে দিনের পর দিন যায়। এরপর কতদিন গেলো। কতপথ একসাথে হাঁটা হলো তার। কত গাল মন্দ জুটলো তার জীবনে।
মরু এলাকা থেকে অনেক দূরে এক জমিদারবাড়ী। ওরা দেখেনি কখনো। শুধু গল্প শুনেছে সে বাড়ীর। যে বাড়ীর ভিতর এতো কাট খোট্টা না। এমন রুক্ষ প্রকৃতি না। গাছপালা আছে, ফুল আছে, লতাপাতা আছে। এক সুন্দর ছায়াঢাকা মায়াময় পরিবেশ আছে। শুনে আর ভাবে, মাটিতে এতো সুন্দর উদ্ভিদ জন্ম নেয় কেমন করে?
বালতি মাঝে মাঝে যখন মালিকের হাত ধরে ঘরে ফিরে, তখন দেখে এক ঝাঁক পাখি ডানা মেলে কী সু্ন্দর দূরের কোনো আকাশে ওড়ে যায়। তার গায়ে পড়ে তখন সে পাখীগুলোর ছায়া। না হয় সারাক্ষণই কটকটে রোদের ভিতর দিয়েই ওদের চলতে হয়। মাঝে মাঝে ওর গায়ে কদাচিৎ কোনো শস্যদানা অথবা অন্য কোনো কিছু যেন ওড়ে এসে পড়ে। পাখীর গা থেকে খসে যাওয়া এগুলো নিশ্চয় পালক নয়।
এভাবে আরো কতদিন যায়। আহা! বালতি যদি সেই উড়ে যাওয়া পাখী হতো। তাহলে-কি আর প্রতিদিন এভাবে মালিকের রুক্ষ কটকটে কথা শুণতে হয়। আর মালিকের কথা কর্কশ হবেই বা না কেন? এই এলাকার প্রকৃতিটাই যে এমন। ঘাস নেই, ফুল নেই, লতা নেই,সবুজের কোনো চিহ্ন নেই। মানুষের মন কোমল হবে কেমন করে?
তারপর একদিন। মালিক প্রতিদিনকার মতো পানি নিয়ে পাথুরে পথ ধরে বাড়ি ফিরছেন । হঠাৎ খেয়াল করেন- রাস্তার দুপাশে-ছোট ছোট কিছু চারা অঙ্কুরোদগম হয়েছে। শুধু তাই না-নাম না জানা কি একটা সবুজাভ গাছে যেন একটা ফুলের মতো কলিও এসেছে।
মালিক ভাবেন, আহা! এ হলো কেমন করে? মেঘ নেই,বৃষ্টি নেই, জল নেই,দানা নেই। এসব ছাড়া কি গাছ হয়, কি কোনো ফুল হয়?
বালতির ফুটো দিয়ে ঝড়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা পানি পেয়েই তবেই কি পাথুরে মাটি সতেজ হয়েছে আর পাখির ঠোঁট থেকে খসে পড়া দানা থেকেই কি তবে এই ছোট শিশু গাছের অঙ্কুরোদগম হয়েছে?
ঘরে পৌঁছালে গিন্নী বলেন- এই ফুটো বালতি দিয়ে এভাবে আর কতদিন চলবে? হয় নতুন আরেকটা কিনে নিয়ে এসো। অথবা ফুটোগুলো ভালোভাবেই বন্ধ করো। না হয়-ঐ ময়লার স্তুপে রেখে আসো।
মালিক বলেন-আহা! কোনো কিছুই করতে হবেনা।আর দরকারও নেই। সবেমাত্রতো সবুজ চারা দেখা দিয়েছে। আর কয়েকটা কলিও ফুটেছে।
গিন্নী, এ কথার কোনো আগা মাথাই বুঝেন না। টুটুন বালতিটা শুধু মিটিমিটি হাসে। আজ এতোদিন পর ওর মনেও যে সেই ভেজা মাটির মতো সজীবতার পরশ লেগেছে।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন