|
লেখাজোকা শামীম
|
|
চলচ্চিত্রের গল্প : যে পুরোনো ঘোরটি মানুষকে আজও মুগ্ধ করে
20 March 2015, Friday
পৃথিবীর প্রাচীনতম কাজ হল গল্প বলা।
সারা দিনের কাজ শেষে সেই দূর আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রাচীন মানুষ গল্পের ঝাঁপি খুলেছে।
একটা শিকার শেষ করার পর সেই শিকারের বীরত্বগাঁথা নিয়ে গল্প ফেঁদেছে।
একটা লড়াই শেষ হওয়ার পর সেই বিজয়ের গল্প সবাইকে জানিয়েছে।
নতুন শস্যের ভাণ্ডার দেখে খুশিতে আপ্লুত হয়ে গল্পে গল্পে নবান্ন উৎসব করেছে।
ভাষা শেখার আগে অঙ্গভঙ্গি করে গল্প বলেছে।
নেচে নেচে গল্প বলেছে। গান গেয়ে গল্প বলেছে।
মুখের ভাষা ফোটার পর মানুষ মুখে মুখে গল্প বলেছে।
যখন আঁকতে শিখেছে, গুহার গায়ে ছবি এঁকে গল্প বলেছে।
যখন লিখতে শিখেছে, তখন গল্প লিখেছে।
তারপর যখন ছবি তোলার যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, সেই যন্ত্র ব্যবহার করে গল্প বলেছে।
যেই গল্প বলাটা শুরু হয়েছিল মুখে মুখে, সেই গল্প এখন মানুষ বলছে চলমান ছবিতে। সেই চলমান ছবিতে গল্প বলাটাকে আমরা বলি চলচ্চিত্র। আজ পৃথিবীতে গল্প বলার সবচেয়ে আধুনিকতম মাধ্যম হল চলচ্চিত্র।
মানুষ কেন এত গল্প বলতে চায় ? কারণ মানুষ গল্প শুনতে চায়। মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপর মানুষের গল্প শুনতে চায়।
শ্রোতা ছিল বলেই কথকও ছিল।
পাঠক ছিল বলেই লেখক ছিল।
দর্শক আছে বলেই চলচ্চিত্র নির্মাতাও আছে।
এই গল্প বলাটা কখনও একপাক্ষিক নয় - দ্বিপাক্ষিক।
শ্রোতা আছে বলেই কথক আছে।
পাঠক আছে বলেই লেখক আছে।
দর্শক আছে বলেই চলচ্চিত্র নির্মাতা আছে।
পৃথিবীর প্রাচীনতম কলার নাম গল্প বলা।
হাজার বছর ধরে মানুষের গল্প বলার ধরন বদলায় নি।
গল্প শোনার ধরনও বদলায় নি।
বদলাবে না কোন দিন।
পৃথিবীর প্রাচীনতম গল্পে যা আছে, আধুনিকতম গল্পে প্রায় তা-ই আছে।
কেবল গল্পের চরিত্র, সময় ও স্থান বদলে গেছে।
একটা গল্প কখন শ্রোতা বার বার শুনতে চায় ?
যখন গল্পটি তার ভালো লাগে।
কখন গল্পটি ভালো লাগে ?
যখন গল্পের ঘটনাগুলো শ্রোতার মনে উদ্বেগ তৈরি করে।
যখন গল্পের চরিত্রের সঙ্গে শ্রোতা একাত্ম হয়ে যায়।
যখন গল্পকে শ্রোতা মনে করে তার নিজের জীবনের গল্প।
গল্প বলার মাধ্যম যা-ই হোক,
মুখে বলা গল্প
লিখে বলা গল্প
ছবি দিয়ে বলা গল্প।
সব গল্পের নিয়ম একই ।
এই নিয়ম থাকলে শ্রোতা
পাঠক অথবা দর্শকের কাছে
গল্প ভালো লাগবে।
মাধ্যম বদলালেও গল্প বলার কৌশল সেই পুরোনোই থেকে গেছে।
সেই নিয়ম যিনি জানেন, তিনি যে কোন মাধ্যমেই গল্প বলতে পারেন।
কেবল আলাদা আলাদা মাধ্যমের কিছু কিছু কৌশল আয়ত্ব করতে হয়।
কোন মাধ্যমের চমক দিয়ে
শ্রোতা
পাঠক
দর্শককে
আটকানো যায় না।
আটকাতে হয় গল্প দিয়ে, গল্পের শক্তি দিয়ে।
যদি আপনার গল্পে সেই শক্তি না থাকে,
সেই কৌশল না থাকে
আপনাকে দিয়ে গল্প বলা হবে না।
চলচ্চিত্র গল্প বলার নবীনতম মাধ্যম।
কিন্তু সেই পুরোনো রীতির গল্প দিয়েই
দর্শককে গাঁথতে হয়।
যিনি গল্প দিয়ে দর্শককে গাঁথতে পারেন না।
তিনি চলচ্চিত্রে নানা চমক যোগ করেন ---
কেউ দেখান নাচের চমক
কেউ দেখান গানের চমক
কেউ দেখান শরীরের চমক
কেউ দেখান পোশাকের চমক
কেউ দেখান ছবির চমক
কিন্তু গল্পের চমক না থাকলে দর্শককে কোন দিন গেঁথে ফেলা যায় না।
কারণ দর্শক শেষ পর্যন্ত গল্প চায়।
সেই পুরোনো গল্প।
কেবল নতুন ভঙ্গিতে, নতুন রূপে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে।
এমন এক ভঙ্গিতে সেই পুরোনো গল্পকে বলতে হয়
যাতে দর্শকের মনে হয়, সে একটা নতুন গল্প দেখছে।
সে একটা নতুন গল্পের ঘোরে আটকে যায়।
গল্পের ঘোরে পড়ার জন্য সে প্রস্তুত হয়েই থাকে।
যে নেশা ধরানো গল্প বলতে পারে
তার গল্পকে সে পছন্দ করে।
যে মাধ্যমে গল্প বলা হোক না কেন
গল্পের ঘোর তৈরি করার কৌশল জানতেই হবে।
চলচ্চিত্রে গল্পের সেই ঘোর না থাকলে সেই চলচ্চিত্র ফ্লপ হবেই।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন