সকাল সকাল কোত্থেকে এসে লালু দফাদার কিছু একটা দিয়ে দরজায় ঘা দিচ্ছিল জোরেশোরে আর চিৎকার করে ডাকছিল, মইত্যারে, ওই মইত্যা। হালার পুত মইরা গেছস না বাইচ্যা আছস? কী খাইয়া এত ঘুম হয় তর? মইত্যা!
রাতের দিকে ঘুমুতে ঘুমুতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল মতির। সব্জির চালান নিয়ে ঢাকা যাবার সময় কিছু লোকজন গাড়িটাকে ভেঙেচুরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল। তা নিয়ে থানা চেয়ারম্যান শ্রমিক ইউনিয়নসহ নানা জায়গায় ছুটোছুটি করে বেজায় ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল মধ্যরাতে। লালু দফাদারের চিৎকার চেঁচামেচিতে পুরো না হওয়া ঘুমটা ভেঙে যেতেই মনটা তিতা হয়ে যায় তার।
গায়ের কাঁথাটা সরিয়ে ঘুম জড়ানো চোখ ডলতে ডলতে উঠে পড়ে কোমরের কাছে লুঙ্গীটা জড়াতে জড়াতে দরজা খুলে দিয়ে লালুর উদ্দেশ্যে বলল, এমন বিয়ান বিয়ান কী মরা লাগল আবার?
-অখনই তরে যাইতে হইব আমার লগে। চেয়ারম্যান খবর কইছে।
-ব্যাডার বউ গাভ ছাড়ছেনি যে, কওনের লগে লগেই আমারে দৌড় পাড়তে হইব?
এমনিতেই ঘুমটা নষ্ট হয়েছে বলে মেজাজ খারাপ ছিল, তার ওপর লালুর কথা শুনে গরম তেলে পানির ছিটা পড়ল যেন।
হাতের লাঠিটা ঘুরাতে ঘুরাতে লালু ফের বলে, তুই আমার লগে যাবি, না গলায় গামছা লাগাইয়া টাইন্যা নিয়া যামু?
-যেমন ভাব দেহাইতাছ জানি খুনের আসামী আমি। আমারে চেতাইলে ভালা হইব না কইয়া দিতাছি!
-এত কথা না কইয়া বাইর হ ঘর থাইক্যা।
-আইচ্ছা, দুইডা মিনিট দেরি কর, প্যাটটা পাতলা কইরা আইতাছি।
মতি ঘরে তালা দিয়ে দরজার সামনে থেকে প্রায় দোমড়ানো আর শ্যাওলা ধরা অ্যালুমিনিয়ামের ঘটিটা তুলে নিয়ে ঘরের পেছনে চলে যায় কোথাও।
মতির বদ্ধ ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতের লাঠিটা এক হাতে ধরে অন্য হাতের তালুতে আঘাত করে তালির মতো শব্দ করে। তারপর হয়তো মতির বিলম্বের কারণেই পেছনের রাস্তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অস্থির ভাবে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করতে থাকে।
বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেলে মতি ফিরে আসতেই লালু তাড়া লাগায়, তর আর কতক্ষণ?
-আমার হইছে। তয় নাস্তা করানি লাগব কইলাম!
-আগে মেলা কর। নাস্তা তর কোনখান দিয়া দেওন যায় পরে ভাইব্যা দেখমু।
লালু দফাদারের সামনে থেকে পথ চলতে চলতে অনেক ভেবেও কুলিয়ে উঠতে পারে না মতি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার সম্পর্কটা খুব মন্দ না হলেও তেমন একটা ভালো নয়। সাধারণত ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজই তাকে দিয়ে করাতে পছন্দ করে লোকটা। তাই এবার আরো খারাপ কিছু করানোর উদ্দেশ্যেই তাকে ডাকিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত প্রায়।
না থেমে একটানা পথ চললেও পেছন থেকে মাঝে মধ্যেই লালু হাতের লাঠিটা দিয়ে মতির কাঁধে কখনো বা পিঠে খোঁচা দিচ্ছিল। সে সঙ্গে এও বলছিল, আরো চালাইয়া হাঁট!
গেরস্থ তার হালের বলদকে যেভাবে নানা বিচিত্র শব্দে মাঠ বা ক্ষেতের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় লালুর ব্যাপারটাও তেমন কিছু একটা মনে হচ্ছিল মতির কাছে। আস্তে আস্তে তার রাগ বাড়তে থাকলেও প্রাণপণ চেষ্টা করছিল সংযত থাকতে। কিন্তু আরেকবার মাথার পেছনে ওপর লাঠির খোঁচা লাগতেই তার কী হয় নিজেই বুঝতে পারে না। হঠাৎ পেছন দিকে ঘুরে গিয়ে এক হাতে লালুর লাঠি ধরা হাতের কবজি আর অন্যহাতে গলার কাছে খাকি উর্দির কলার চেপে ধরে বলে, আলবদরের পুত! কী মনে করস নিজেরে? আমারে গরু চোর পাইছস না মাগিবাজ পাইছস? তারপরই লালুকে এক ঝটকায় মাটিতে পেড়ে ফেলে তার বুকে চেপে বসে সে।
লালুর চোখে আতঙ্ক দেখতে পায় সে। কিছু বলবার আগেই মতি লালুর হাত থেকে লাঠিটা কেড়ে নিয়ে সেটির এক মাথা লালুর মুখের ভেতর ঠেসে ধরে ফের বলে, ক হারামজাদা!
মুখের ভেতর লাঠি থাকায় জিহ্বা নাড়াতে পারছিল না লালু। হয়তো শ্বাসও ফেলতে পারছিল না। চোখ দুঠো ঠেলে বেরিয়ে আসবার মতো হয়ে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে মুখটা বেশ লালচে হয়ে উঠছিল। কিছু বলতে চেষ্টা করেও না পেরে দুর্বোধ্য গঁ-গঁ শব্দ করছিল সে।
আসন্ন বিপদ টের পেয়ে লালুর মুখ থেকে লাঠিটা বের করে নিয়ে দুহাতে সেটা লালুর গলায় হালকা ভাবে চেপে ধরে মতি। তারপর বলে, কী মনে করস নিজেরে? এক জাতায় তরে শেষ কইরা দিলে চেয়ারম্যান বাঁচাইতে আইব না।
লালু হঠাৎ দু হাত জোর করে বলে, তুই আমার ধর্মের বাপ! মাইয়াডা অখনতরি বাপ কইয়া ডাকতে শিখে নাই।
-আইজগাই তুই দফাদারি ছাড়বি। আরেকদিন আমার দুয়ারে তুই আইলেই মনে করবি হেইডা তর শেষ দিন।
লালুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় মতি। লাঠিটা হাত থেকে না ফেলে বরং হাতিয়ার হিসেবে সঙ্গে নেয়। তারপর কী মনে করে সেটাকে পাশের একটা ঝোপের দিকে ছুঁড়ে মারে। চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে সে একবার পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পায়, লালু সেখানেই মাটিতে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে।
চেয়ারম্যান তখনও বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেনি। অফিস ঘরের বাইরে সরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে নিয়ে আসা কাঠের বেঞ্চগুলোতে নানা ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে লোকজন। কয়েকজন নারীর পাশে বসে থাকা ষোল কি সতের বয়সের একটি মেয়ে কালো ওড়না দিয়ে মাথার চুল ঢেকে রেখেছে। একটু পরপরই সে মাথা ঘুরিয়ে দেখছিল মতিকে। কিন্তু ব্যাপারটা তার বোধগম্য হচ্ছিল না। মেয়েটাকে সে চিনতে পারে না মোটেও। চেয়ারম্যান কেন তাকে খবর পাঠিয়েছে তা জানা না থাকাতে কয়েক রকম ভাবনায় প্রায় অস্থির হয়ে ওঠেছিল বলে অন্য কিছুতে মনোযোগ দিতে আগ্রহ হয় না তার।
বেঞ্চগুলোর কোথাও বসবার মতো ফাঁকা জায়গা না পেয়ে এক পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। মানুষ যেমন অনেক তাদের সমস্যাও তেমন বিচিত্র। পরস্পরের আলাপ আলোচনা থেকে অল্প কিছুটা জানতে পারছিল সে। তবে, মেয়েটির সঙ্গের মানুষগুলোর মুখ দেখতে যেমন বিরস মনে হচ্ছিল তেমনই মনে হচ্ছিল ভেতরে ভেতরেও বেশ ভাঙাচোরা। ভেতরের উদ্বেগ চাপা দিতে পারলেও অন্যান্যদের মতো মুখর ছিল না তারা। কিন্তু মেয়েটির ঘন ঘন মাথা ঘুরিয়ে তাকাবার ফলে তার কৌতূহল বেড়ে যাচ্ছিল। তবু সে তেমন একটা গুরুত্ব না দেবার ভান করে খানিকটা পেছনে হটে গিয়ে একটি খড়ের গাদায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
আর ঠিক তখনই যেন কোনো একটি সংকল্প নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মেয়েটি। সঙ্গের বয়স্ক মহিলাটির কানের কাছে মুখ নিয়ে ঝুঁকে পড়ে কিছু হয়তো বলে। তারপর সরাসরি এগিয়ে আসে মতির দিকে।
খানিকটা দূরত্ব রেখে থামতে থামতে মেয়েটি বলল, এমন ভাব লইয়া রইছেন ক্যান, আমারে চিনতে পারতাছেন না?
মতি সত্যি সত্যিই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে, আপনের কিছু ভুল হইতাছে লাগে।
-ভুল আমার না, আপনের। আমি হিরু।
কোন হিরু? কোথাকার হিরু? এ নামের কাউকেই সে জানে না। দেখেনি কোনো কালে। তবু সৌজন্য রক্ষার্থেই যেন বলে, তো, চেয়ারম্যানের কাছে কোন কামে?
-আমাগো চোরার নামে নালিশ করতে।
-নালিশের কাম লাগল কী লইয়া?
-বছর পার হইয়া গেল না দেয় খরচাপাতি না লয় খোঁজ-খবর।
-আইচ্ছা। চোরায় তাইলে করতাছে কি অখন?
-হুনছি বিদেশ যাইবো।
-হুম। তাইলে তো একটা নালিশের জাগা হইছেই!
মেয়েটি আরো এক পা এগিয়ে এসে বলে, আইচ্ছা, আপনেরে জিগাই, বুজি মরছে তিন বছর আর কতকাল একলা থাকবেন?
ভেতর থেকে আসা বেদম হাসিটাকে জোর করে চাপতে গিয়ে এক রকম কুঁজো হয়ে যায় মতি। যে লোক বিয়েই করল না মেয়েটা তাকেই কিনা বলছে বউ মরেছে তিন বছর! তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে মতি বলল, দেখি, কপাল ভালা হইলে দোকলা হওন যাইবো।
হঠাৎ লোকজন কেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে। কয়েকটি কণ্ঠের সিম্মিলিত গুঞ্জরন শোনা যায়, আইতাছে, আইতাছে!
চেয়ারম্যান আইছে লাগে, আমি যাই! বলতে বলতে মেয়েটি এলোমেলো পদক্ষেপে ফিরে যায় তার সঙ্গের লোকজনের কাছে।
মতি ফের খড়ের গাদায় পিঠ দিয়ে হেলে পড়ে মেয়েটিকে নিয়ে ভাবে কিছুক্ষণ। কিন্তু তার পরিচয়ের কোনো হদিস করতে পারে না।
চেয়ারম্যান অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বা শুনতে শুনতে একবার মতির দিকে ফিরে বলে, তুই ঘুইরা ফিরা আয়, আমি ততক্ষণে কথাবার্তা হুইন্যা লই।
চেয়ারম্যানের কথা শুনে ফের মতির সব রাগ গিয়ে পড়ে লালু দফাদারের ওপর। ইচ্ছে হয় ফিরে গিয়ে আচ্ছা মতো ধোলাই দেয় তাকে। কিন্তু ক্ষমতা আর পদের দিক দিয়ে ছোট হলেও সে সরকারি লোক। তাকে মার দিয়ে হজম করাটা তেমন সহজ হবে না।
কিছু করবার ছিল না বলেই হয়তো ঘন ঘন হাই ওঠে তার। পেটের খিদেটাও বেশ বেড়ে গেছে। তৈরি খাবার খেতে হলে তাকে এখন বাজারে যেতে হবে, নয়তো ঘরে গিয়ে ভাত রান্না করতে হবে। আজকাল ভাত রান্না করতে ইচ্ছে হয় না তার। তা ছাড়া পাশের ঘরের ছোট দাদি তাকে রান্না করতে দেখলেই বলবেন- গোলাম, বিয়া করিস না, হাত-পাও পুইড়া খা! আজকাল কী যে হয়েছে তার হালকা-পলকা রসিকতাও তার সহ্য হয় না।
চেয়ারম্যনের ঘরের সামনে লোকজনের ভীরটার দিকে তাকিয়ে সে অনুমান করতে চেষ্টা করে যে, লোকজন সব নিজেদের অভাব অভিযোগ জানিয়ে কতক্ষণে বিদায় হতে পারবে। আর তখনই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যে, বাজারে গিয়ে রশিদের দোকানে নান-রুটি আর নেহারি খাবে।
নানা দিক ছুটোছুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে বলে অনেকদিন সেদিকে যাওয়া হয় না তার। তারপর দেশে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে অরাজকতা। চারদিকে কেবল জ্বালাও-পোড়াও। সব দলের লোকেরাই যেন মিলেমিশে ঠিক করেছে দেশটাকে ধ্বংস করে দেবে। তারপর ধ্বংস স্তূপ থেকে ছাই সরিয়ে খুঁজে নেবে নিজেদের ঐতিহ্যের কয়লা। হরতাল-অবরোধে কোনো কাজকর্মে মন দিতে পারছে না সে। তার ওপর সবজীর চালান নিয়ে শহরে যাবার সময় বোমার কারণে তার ব্যবসাটার ভরাডুবি হয়ে গেল। এখন পকেটের টাকা খরচ করে খেতে খেতে কদিন নিজেকে সামাল দিতে পারবে সে দুর্ভাবনাটাও বড় হয়ে উঠছে দিনদিন। এদিকে চেয়ারম্যানের অভিসন্ধি জানতে না পেরে মনটা ফের বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিল।
মতিকে সঙ্গে নিয়ে দিনভর এদিক সেদিক ছুটে বেড়ায় চেয়ারম্যান। কিন্তু কার সঙ্গে কী কথা হয় কিছুই জানা হয় না তার। তাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ঘরের ভেতর কিছুক্ষণ গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর সেরে মুখ অন্ধকার করে বের হয়ে আসে। একবার জিজ্ঞেস করলেও উপযুক্ত জবাব পায়নি সে। চেয়ারম্যান গম্ভীর কণ্ঠে জানিয়েছিল, আছে একটা শক্ত বিষয়।
মাঝি বাড়ির ধনু মাঝির ঘরে ঢোকার পর এক ঘণ্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও চেয়ারম্যানের বের হয়ে আসবার কোনো লক্ষণ দেখতে পায় না মতি। এদিকে মাগরিবের আজান শুনে আরো বেশি অস্থির হয়ে পড়ে সে।
ধনু মাঝির ঘরের সামনে গিয়ে জানালা আর দরজা দিয়ে কয়েকবার উঁকিঝুঁকি মেরেও হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে সে। তার কিছুক্ষণ পর হাসি হাসি মুখ করে বের হয়ে আসে চেয়ারম্যান। এক পাশে মুখ ঘুরিয়ে ফোত করে পানের পিক ফেলে মতির উদ্দেশ্যে বলল, কাজ হইছে! ল, আগে ইশকুলের ভিতরে যাই।
স্কুলের দিকে যেতে যেতে সন্ধ্যার লালচে আভাটুকুও হারিয়ে যায় আকাশের বুক থেকে। চারদিকে আবছা হয়ে নেমে আসতে থাকা অন্ধকার ক্রমশ গাঢ় হতে থাকে। স্কুলের পকেট গেটের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান বলল, এইবার তরে যেই কাজডা ধরাইয়া দিতাছি, কাম হওনের আগেই হাতে হাতে সব ট্যাকা পাইয়া যাবি।
তারপর টর্চের আলো ফেলতে ফেলতে ইশকুল ঘরের পেছন দিকে চলে যায় চেয়ারম্যান। কিছুক্ষণ পর ছোটখাটো একটি চটের ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসে। টর্চের আলোতে মতি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল, ব্যাগটার পেট কেমন ফুলে আছে। মতির পায়ের কাছে আলো ফেলে নিশ্চিত হয়ে চেয়ারম্যান বলল, পাইছি।
টর্চটাকে এক বগলের নিচে চেপে ধরে ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা বের করে আনে চেয়ারম্যান। আবার আলো জ্বেলে মতিকে দেখিয়ে বলে, কইতে পারস যাদুর বোতল। কোনো রকমে পলিতায় আগুন দিয়া ফাটাইতে পারলে লগে লগেই জাগাডা জাহান্নাম হইয়া উঠব।
ব্যাপারটা মতি নিজের চোখেই দেখেছে। ভাগ্য ভালো সেদিন সে ড্রাইভারের সঙ্গে ট্রাকের কেবিনে বসেনি। পলিতায় আগুন লাগিয়ে বোতলটা ছুঁড়ে মারতে দেরি ড্রাইভারের শরীর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে দেরি হয় নি। তাকে কোনো রকমে উদ্ধার করতে পারলেও ট্রাকের সামনের অংশটা পুড়ে শেষ হয়ে গেছে বলা যায়।
মতির হাতে একটি লাইটার আর একটি বোতল দিয়ে চেয়ারম্যান বলল, পলিতায় আগুন দিয়াই সামনে মেলা মারবি। আইজগা পরীক্ষা কইরা দেখি। কাইলকা সিএনজির মিছিল লইয়া যখন আমজাদেরা আইব, একটায় আগুন ধরাইয়া সামনের দিকে মাইরা দিবি। বাকি যেই কয়ডা থাকবো আগুন লাগানির কাম নাই। এমনেই মেলা মারলে চলব। আন্ধাইরে কে করছে ধরতে পারবো না কেউ। কাম সাইরা আইলে হাতে হাতে বিশ হাজার!
অন্ধকার বলেই হয়তো চেয়ারম্যান দেখতে পায় না মতির মুখের হালকা হাসিটুকু। তারপর লাইটার আর বোতল হাতে নিয়ে বেশ খানিকটা পিছু হটে যায় মতি। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা চেয়ারম্যানের ছায়ামূর্তিটার দিকে লক্ষ্য করে দেখে ভালো করে। পেছনের দেয়ালটার ওপর বোতলটা ফাটলে চেয়ারম্যান সরে যাবার আগেই ব্যাগের বোতলে লেগে যাবে আগুন।
অবশ্য চেয়ারম্যানকে বিনাশ করবার দায়িত্বটা মরবার আগে তার জন্মদাতাই তাকে দিয়ে গেছেন ।
(সমাপ্ত)
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন