|
তাহসিনুল ইসলাম
|
|
মুক্তগদ্য-১
04 March 2015, Wednesday
গালিব, তুই কখনো শিউলী ঝরা সকালে হেঁটেছিস। খুব সকালে। আমি হেঁটেছি। আমি তখন অনেক ছোট। রমজান মাস তখন আসতো শীতকালে। রোজা দিতে না পারলেও সেহরির সময় থালা বাসনের টুংটাং শব্দে ঠিকই জেগে উঠতাম। বাবার সঙ্গে মসজিদে যেতাম হাত ধরে। আর কোন নামাজ পড়া হতো কি-না মনে নেই তবে ওই ফজরের নামাজটা পড়তে যেতাম ঠিকই। সেটা যতোটা না নামাজের টানে তার চেয়ে বেশি শিউলী ফুলের টানে। মসজিদটা আমাদের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিলো। বাড়ি ও মসজিদের মাঝামাঝি দূরত্বে ঠিক রাস্তার পাশে ছিলো শিউলী গাছটি। আমি যখন শিউলী গাছের কাছে আসতাম তখন দেখতাম গাছের নিচে শিউলী ফুলের একটা সফেদ লালচে আস্তরণ জমে গেছে রাস্তার বুকে। রাস্তার বুকটা শিউলীর স্নিগ্ধ সুবাসে মৌ মৌ করতো। আমি দু’ একটা শিউলী পকেটে পুরে নিতাম। শিউলী পকেটে পুরেই মসজিদে ঢুকতাম। মসজিদে অবশ্য মন বেঁধে রাখতে পারতাম না। মন পড়ে থাকতো শিউলী গাছের কাছে। ইমাম সাহেবের দীর্ঘ কেরাত সেই অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিতো। ভেতরে ভেতরে শঙ্কিত হয়ে উঠতাম ভীষণ। না জানি এতোক্ষণে কেউ এসে হয়তো শিউলী ফুল সব নিয়ে গেলো? ইমাম সাহেব সালাম ফিরাতেই বাবাকে একা ফেলে দিতাম একটা দৌড়। দৌড়ে এসে থামতাম শিউলী গাছের কাছে। এসে দেখতাম দু’ একটা মেয়ে ততোক্ষণে চলে এসেছে। আমাকে দেখতে পেয়ে তারা আরও দ্রুত শিউলী ফুল জামার ফোঁকরে ঢুকাতে ব্যস্ত হয়ে উঠতো। আমিও তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তাম। যেটুকু শিউলী জুটতো সেটা বাড়িতে গিয়ে আপুর হাতে দিতাম। আপু সেটা সাদা সুতোর ভেতর চালান করে মালা তৈরি করতো। সেই মালার প্রতি অবশ্য আমার আকর্ষণ ছিলো না। আমার সুখ এটুকুতেই---শিউলী ফুল কুড়িয়ে আপুর হাতে হস্তান্তর করা পর্যন্ত।
জানিস, শৈশবে সেই যে আমি শিউলী ফুল বুক পকেটে পুরে মসজিদে ঢুকেছিলাম এখনও আমি মসজিদে ঢুকলে সেই শিউলী ফুলের সুবাস পাই। সুবাসটা যেনো আরও প্রশান্তিময় হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে আমার বুকের ভেতর ধীরে ধীরে একটা শিউলী গাছ বেড়ে উঠছে। এই গাছটা কেনো বেড়ে উঠছে তুই কি বলতে পারবি?
আমার নিজের কথা থাক তোকে এবার শিউলী ফুলের কথা বলি। ঠিক কথা না, কথার কথা। তুই তো জানিস শিউলী ফুল রাতে ফুটে আর ঠিক সূর্যের আলো ফোটার আগেই ঝরে যায়। কেনো শিউলী সূর্য ওঠার আগেই ঝরে যায় এ নিয়ে একটা পৌরাণিক গল্প আছে। গল্পটা হলো এমন-- একবার এক রাজকন্যা সূর্যের প্রদীপ্ত প্রভায় মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়েছিলো। প্রেমে পড়লে তো আর চুপ করে থাকা যায় না। সূর্যকে তাই সে তার মনের কথা জানালো। কিন্তু দাম্ভিক সূর্য সেই সুন্দরী রাজকন্যার প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করলো। প্রেম প্রত্যাখ্যিত রাজকন্যা তখন অভিমানে আত্মহত্যা করলো। এরপর রাজকন্যার মৃতদেহকে যেখানে দাহ করা হলো সেখানে তার চিতাভষ্ম থেকে জন্ম নিলো একটা গাছ। ধীরে ধীরে গাছটা বড় হতে লাগলো। শিশিরসিক্ত এক মৌসুমে তার শাখায় শাখায় স্নিগ্ধ সুবাসভরা শুভ্র ফুলের জন্ম নিলো রাশি রাশি। কিন্তু দেখা গেলো ফুলগুলো জন্ম নিলো ঠিক রাতের নিভৃতে আর ঝরে গেলো সূর্যের আলো আবির্ভাবের পূর্বেই যাতে তাকে দাম্ভিক সূর্য স্পর্শ করতে না পারে। কি বুঝলি? হুম, সেই রাজকন্যার চিতাভষ্ম থেকে জন্ম নেয়া অভিমানিনী ফুলটিই হলো শিউলী।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
Lot of smarts in that pontisg!
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন