|
সালমান মাহফুজ
|
|
শুধুই অবিশ্বাসের অন্ধকার : ১ম পর্ব (গল্প)
04 March 2015, Wednesday
অনিক, মারুফ, শুভ, ইমরান— চার মাস হল ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে ।
প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি ওদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । মারুফ এর জন্য বেশ চিন্তিত । যদি ভালো রেজাল্ট না করতে পারে; তবে তার ফিউচারের কী হবে । বাবা-মা কত কষ্ট করে খরচ যোগায় । এদিকে বন্ধুদের এড়িয়ে যেতেও তার মন সায় দেয় না ।
বাকী ৩ জনের অবশ্য কোন মাথাব্যথা নেই । আরে ফার্স্ট ইয়ার হল ইনজয় করার সময় । রেজাল্ট-ফেজাল্ট নিয়ে এখন ভাবতে গেলে লাইফের মজাটাই মাটি হয়ে যাবে ।
আজ আলতাফ স্যারের প্রাইভেটটা শেষ করেই ওরা চারজন মিরাজ আঙ্কেলের কনফিকশনারিতে ঢুকে পড়ে । মারুফ হাত ঘড়িটা দেখে নিয়ে বলে উঠে, ‘কীরে ১০টার উপরে বেজে গেছে । বাংলা ক্লাসটা করবি না ?’
‘ধুর বেটা ! তুই বাংলা ক্লাসের চিন্তায় মরছ— ওটা শুধু পরীক্ষার আগের রাত পড়লেই ৭০% মার্ক পাওয়া যায় । বস এখানে । কোনটা খাইবে সেটা ক । চা নাকি ঠাণ্ডা ?’ ইমরান কিছুটা ধমকের সুরে মারুফকে বলে ।
মারুফ কিছু না বলে বসে পড়ে ।
শুভ অনিকের দিকে চোখ বাঁকিয়ে বলে, ‘কী দোস্ত ! তোমার মায়ার কী খবর ? কেমন চলতাসে ?’
অনিক প্রথমে মুখটা নিচু করে একটু হাসে । তারপর বলে, ‘ভালোই । তবে মাঝে মাঝে কেমন গম্ভীর গম্ভীর ভাব দেখাবে । অতটা ফ্রি না ।’
‘আরে ফ্রি হয়ে যাবে । ওটা নিয়ে এত চিন্তার কারণ নাই । সব মেয়েরাই প্রথমে একটু ভাব ধরে । আর যদি দেখো ভাব কমছে না; তার ঔষুধও আছে ।’ ইমরান বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলে ।
‘তো মাম্মা, ঔষধটা কী তাও একটু বলে দাও না ।’ শুভর চোখে মুখে বেশ কৌতূহল ।
‘তা তোকে বলব কেন? প্রবলেমটা তো আর তোর না । ওটা অনিককে বলে দিব, সময় আসুক ।’
অনিকের কিছুটা অস্বস্তি লেগে উঠে । ‘আচ্ছা, তোরা থাম তো । ব্যাপারটা এখন বাদ দে । কে কী খাবি সেটা বল ।’
‘খাওনের জিনিস তো ভাই তোমার আছে । আমাগো ভাগ্যে তো আর জুটল না বন্ধু । ওই মায়ারে তো প্রথমে আমিই চাইছিলাম...’
কথাটা শেষ করতে পারে না শুভ । এতক্ষণ চুপ করে থাকা মারুফ রাগান্বিত হয়ে বলে, ‘এইসব ফালতু আলোচনা করতে তোগো ক্যামন লাগে বল তো দেখি । এবার একটু থামবি ।’
‘এই আঙ্কেল, আমাদের এখানে চারটা চা আর তিনটা গোল্ড লিফ দাও তো ।’ ইমরান মিরাজ আঙ্কেলকে অর্ডার করে ।
চা এসে গেছে । সবাই এক এক করে কাপ তুলে নেয় । প্রথমেই শুভ চুমুক দিয়ে বলে উঠে, ‘হেব্বি হইছি মাম্মা । এক্কেবারি পরানটা জুড়াই গেল ।’
ইমরান প্রথমে সিগারেট জ্বালিয়ে তারপর তার চায়ের কাপে চুমুক দেয় । মারুফ একটু দূরে সরে গেছে । সিগারেটের ধোঁয়া তার সহ্য হয় না । অনিকের কিছুটা মনমরা মনমরা ভাব । সে এখনো চায়ের কাপ স্পর্শ করে নি ।
‘কীরে অনিক ! তোর আবার কী হইল ? ওই গাধাটার কথাই মাইন্ড করছোস নাকি । বাদ দে, আমরা আমরাই তো ।’ ইমরান অনিকের ঘাড় চাপড়ে দেয় ।
শুভ মুচকে মুচকে হাসছে । ‘ না ইমরান, আমার কথায় অনিক রাগ করে নাই রে । মনে হয়, আজ ক্লাসে না যেতে পেরে মায়াকে খুব মিস্ করছে ।’
এবার অনিক হেসে উঠে । কাপ তুলে নিয়ে চায়ে চুমুক দেয় ।
‘এক কাজ কর অনিক । ইমরানের মোবাইল থেকে কিছু সেক্স ভিডিও নিয়ে যা । দেখলেই দেখবি মনের সব অশান্তি পানি হয়ে গেছে । আমি তো কালকে রাতে একটা দেখে পুরাই হট হইয়া গেছি । কী যে সেক্সি মাম্মা— পুরা রাত একটুও ঘুমাইতে পারি নাই । ও মাম্মা ! এখনো চোখের সামনে ভাসতাছে ।’ শুভ কথাগুলো শেষ করে সিগারেট জ্বালায় ।
অনিকের হাসির পরিমাণ আরো বেড়ে যায় । ‘তাই তো বলি, ইদানিং তোর অবস্থা এত বেগতিক কেন; তোর লজ্জা-শরম জিরোতে নেমে গেছে কেমনে— এখন তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছি ।’
‘লজ্জা শরমের মায়রে বাপ ! এখন থেকে ভাবতাছি খালি সেক্সের সাগরে হাবুডুবু খাব । কী কছ ইমরান ?’ শুভ ইমরানের দিকে চোখ তোলে ।
‘আইডিয়াটা খারাপ না । তোর পক্ষে সম্ভবও । বাপ-মামুর বস্তাভরা টাকা আছে । তোর আর চিন্তা কীসের ।’
‘আচ্ছা এবার ওঠা যাক । যেমনে হোক বাকী ক্লাসগুলো করতে হবে । ওঠ ওঠ । ’ মারুফ সবাইকে তাগাদা দেয় ।
‘এই এমন ক্লাস ক্লাস করস ক্যা । হাই স্কুলের ভাবটা তোর এখনো গেল না । টয়লেটে ধরলেও তো মানুষ এমন করে না । তোর ইমার্জেন্সি হলে তুই যা । আমরা আজ যাব না, কী কছ তোরা ।’ বেশ বিরক্তির ভঙ্গিতে ইমরান বলে । শুভ আর অনিকও ইমরানের সাথে সুর মেলায় । আর টু শব্দ না করে কাঁধে ব্যাগ ফেলে বেরিয়ে পড়ে মারুফ । একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কলেজের দিকে হাঁটা ধরে ।
ছুটির ঘন্টা বেজে উঠল । ক্লাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় মায়া । তার ফর্সা মুখখানি বেশ লাল হয়ে আছে । কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম রোদে চিকচিক করছে । তবে মুখের কোথাও স্বস্তির চিহ্ন নেই । চোখগুলোও কেমন লাল হয়ে আছে । মারুফকে দেখতেই তাকে হাত নেড়ে ডাক দেয় মায়া । এই ডাকের মানে আন্দাজ করে নেয় মারুফ; অনিকের কথা ছাড়া আর কী বলব । আস্তে আস্তে মায়ার কাছে এসে দাঁড়ায় মারুফ ।
‘তোমার ফ্রেন্ডের খবর কী ? আজ যে একদমও এল না !’ বারান্দা থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মারুফকে জিজ্ঞেস করে মায়া ।
‘আমি তাকে আসতে বলেছিলাম । কিন্তু এলো না । শুভ আর ইমরানের সঙ্গটাই এখন ওর কাছে ক্লাস থেকে বশি ইমপোর্টেন্ট । নিত্য নতুন ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছে ।’
‘তুমি একটু বুঝাতে পার না ? প্লিজ ওকে একটু বুঝিও । এভাবে ক্লাস ফাঁকি দিলে ওর সর্বনাশ হয়ে যাবে । ও হয়ত এখন বুঝতে চাইছে না । আমি ওকে কত্ত ভাবে বুঝাতে চাই । কিন্তু...’
‘দেখো মায়া, যে জেগেও ঘুমিয়ে থাকে— তার ঘুম কখনো ভাঙানো যায় না । তোমার আর আমার থেকে বুঝ নেওয়ার মত মানুসিকতা অনিকের নেই । ওর গুরু হল ইমরান আর শুভ ।’ কথাটা শেষ করে প্যাডেলে চাপ দিয়ে সাইকেলে উঠে পড়ে মারুফ । ‘যাই মায়া । টেনশোন করো না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।’
‘ওকে বাই । তুমি একটু বিকেলে দেখা হল ওকে বুঝিয়ে বোলো ।’
প্রখর রোদে উত্তপ্ত পিচঢালা পথে পা ফেলে শান্ত গতিতে আপন নীড়ের দিকে ছুটে যাচ্ছে মায়া । কিন্তু তার মনের আঙিনাজুড়ে শুধু একটা কিশোর-মূর্তি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । তাকে নিয়ে মায়ার ভাবনার অন্ত নেই ।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন