মূল গল্প : Day Time Stopped Moving
-Bradner Buckner
প্রথম অধ্যায়:
প্রকৃতস্থ থাকলে ডেভ এ কাজ কখনোই করতো না। সে এমন মানুষ নয় যে পরেরদিন সকালে খবরের কাগজে উঠবে, মাথা খারাপ লোকটা আত্বহত্যা করেছে। কিন্তু সে মাতাল, কঠিন রকমের মাতাল। এই মুহুর্তটা তারই ফলাফল। সে নিজের মাথায় দাদার আমলের পিস্তল ঠেকিয়ে বসে আছে। ভোরের আলো একটু একটু করে ঘরে ঢুকছে ছোট জানালাটা দিয়ে। ভোরের আলোয় চিরকুটটা কেমন ঘোলাটে দেখাচ্ছে। মাতালের মতো নাটকীয় ভঙ্গিতে সে বিড়বিড় করলো, 'এর জন্য আমি মরতে বাধ্য হচ্ছি।' চিরকুটটা সে পেয়েছে বিছানার পাশে ছোট টেবিলে, যখন সে ভোর বেলায় পাঁ চটার একটু আগে বাড়ি ফিরেছে মাতাল অবস্থায়। যেমনটি সে করেছে গত প্রায় বারোটি মাস ধরে। দোকান থেকে ফিরতে তার বরাবরই একটু দেরি হয়। বেশি না, এই আট দশ ঘন্টা মাত্র। প্রতিদিন। সে যায় স্থানীয় বার এ। মাতাল হতে।
শেষ পর্যন্ত হেলেন কাজটা করেই ফেলল। তিক্ত মনে সে ভাবে। কতবার ভয় দেখিয়েছে... 'চলে যাব তোমাকে ছেড়ে।'
'চিরকুট টায় বেশি কথা লেখা নেই। কিন্ত তার মধ্যেও কত কষ্ট আর হতাশা!' চিন্তা করে ডেভ।
“ছাড় দিতে,কষ্ট করতে আমার সমস্যা ছিল না ডেভ। যদি কোন মেয়ে বুঝতে পারে তার এই আত্বত্যাগটুকু তার স্বামীকে সাহায্য করছে তার খারাপ সময়ে তবে সে সব কিছুই করবে। যখন এক বছর আগে থেকে ব্যবসা খারাপ হওয়া শুরু করলো, আমি বলেছিলাম, যতভাবে সম্ভব সাহায্য করবো। তুমি আমাকে কিছু করতে দাও নি, নিজেও কিছু করনি। কঠিন কিছু দেখলেই পিছিয়ে যাওয়া, পালিয়ে যাওয়া তোমার স্বভাব। তখন তুমি তোমার সব টাকা-পয়সা আর শক্তি সামর্থ মদ- জুয়া আর ঘোড়ার দৌড়ের পেছনে ঢেলেছিলে। তুমি নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলে। একজন মাতালের সাথে থাকতে আপত্তি ছিল না আমার। কিন্তু একটা কাপুরুষ? না ডেভ..”
'তাহলে আমাকে এক হাত দেখাতে চেয়েছে!' উত্তপ্ত রাগে ভাবে ডেভ। সেও দেখিয়ে দেবে, 'কাপুরষ, হ্যা?' ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। এভাবে... মাথায় পিস্তল ধরা হাতটা শক্ত হয়। বুঝিয়ে দিতে হবে, তোমার দোষে আমি এই কাজ করেছি। কি সাহায্য করেছ তুমি? মদ খেতে দেখলেই প্রত্যেক দিনে খোটা। এটা কর না কেন, ওটা কর না কেন, মাতাল না হলে চলে না, কাজগুলো একটু দেখলে কি হয়.. আর রেসে দশটা ডলার ফেললেই চিৎকার চেচামেচি। কেন, তার যদি সুযোগ থাকে দশ ডলার ফেলে এক হাজার ডলার জিতে নেবার, সে চেষ্টা করবে না কেন? তার ঔষুধের দোকান কঠিন ঝামেলার মধ্যে আছে। এরকম সময়ে কেউ যদি একটু আধটু মদ খায় তাতে সমস্যা কি? মদ খেলেই কেমন যেন মনে হতে থাকে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে... কি শান্তি। এটুকুও তাকে পেতে দেবে না হেলেন! ডেভ মিলার রাগী ভাবে মাথা নেড়ে পিস্তলের ট্রিগারে আঙ্গুলের চাপ বাড়ালো। বুলেটে ট্রিগার আঘাত করার মুহুর্ত থেকে শুরু করে কানের কাছে অদ্ভুত ব্যথা হবার আগে ছোট্ট একটা মুহুর্তে হঠাৎ করে মিলারের কাছে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায়। এক ঝলক আলোর মতই সে বুঝতে পারে পুরো দোষটাই তার ছিল। হেলেন ঠিকই বলেছিল--সে একটা কাপুরুষ। বুকের মাঝে একটা কষ্ট অনুভব করলো, একজন স্ত্রীর পক্ষে যতটা করা সম্ভব ছিল, যতটা বিশ্বস্ত হওয়া সম্ভব ছিল, হেলেন তাই ছিল। ব্যবসার উন্নতির জন্য চিন্তা করতে পারতো যে সময়টা, সে তখন মদ থেয়ে মাতাল হয়ে চিৎ হয়ে পড়ে থাকতো বিছানায়। খদ্দেরদের খুশি করার চেষ্টার বদলে সে তাদের উদ্দেশ্যে খেকিয়ে উঠেছে। এমনকি মিলারও জানে, কেউ কখনো রেস থেকে কোন টাকা কামাই করতে পারেনি- অন্তত যখন তার দরকার। মদ, ঘোড়ার রেস আর ব্যবসা সব একসাথে গুলিয়েছে ডেভ মিলার। এখন মিলার দাড়িয়ে আছে মদে টুই-টুম্বুর, রাগে পাগল হয়ে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে। অসহায় রাগে কেপে ওঠে মিলার। করার মত এখন একটাই জিনিস বাকি আছে তার কাছে। “দেখিয়ে দেব তোমাকে, আমাকে ছেড়ে চলে যওয়া.. এই দেখিয়ে দেব আমি” পিস্তলের ট্রিগার আঘাত করে এবং ডেভ মিলার দেখিয়ে দেয়।
ডেভ মিলার চোখ খুলল। খুব পরিস্কার ভাবে সে একটা শব্দ শুনতে পেয়েছে। খুব পরিচিত শব্দ। তার দোকানের ক্যাশ রেজিস্টার খোলার শব্দ।
'কি..!' সে কথা হারিয়ে ফেলে।এবার খেয়াল করতে থাকে সে কোথায়। তার দোকানের ক্যাশ রেজিস্টারটি তার সামনে। খোলা। কাউন্টারের উপরে কয়েকটা ডলার। চোখ ঘুরিয়ে সে চারপাশে তাকালো। সে তার ঔষুধের দোকানের কাউন্টারের পেছনে। একজন দুজন অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে ডানপাশের কাস্টমার বসার জায়গাটিতে বসে কোক খাচ্ছে। খোলা দরোজার পাশে ম্যাগাজিন এর তাক এবং ঠিক তার সামনে একজন কাস্টমার। হায় খোদা! এতক্ষন কি সে তাহলে স্বপ্ন দেখছিল? হেলেনে এর চিঠি.. তার পিস্তল মাথায় ঠেকানো... তার.. কাউন্টারে খদ্দেরের উপস্থিতি তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। 'আগে একে ভাগাও!একটু একা হয়ে এরপর চিন্তা করা যাবে।' তার হাত ক্যাশ রেজিস্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে থেমে গেল আবার। সে জানে না কতটাকা বিল হয়েছে। এর থেকে কতটাকা তাকে রাখতে হবে। মহিলার নজর বাচিয়ে সে নিচু স্বরে জানতে চায়. “হুমম.. কত যেন বলেছিলাম আমি?” মহিলা কোন উত্তর দিল না। এবার গলা পরিস্কার করে উচু স্বরে জানতে চাইলো মিলার “আমি কি তিন ডলার বলেছিলাম ম্যাডাম?” এবারো কোন উত্তর এল না। আশে পাশের স্তব্ধ নিরবতা হঠাৎ করেই খেয়াল করলো মিলার। আস্তে আস্তে সে নজর উচু করে মহিলার চোখের দিকে তাকালো। মহিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার চোখ নড়ছে না।চোখের পাতাও পড়ছে না। তার ঠোট এমন হয়ে আছে যেন সে বলতে চাইছে “হ্যালো!” শিরশিরৈ একটা অনুভুতিতে ছেয়ে গেল মিলালের শরীর। অনুভব করলে তার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। কোকের কাউন্টারের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে তার আত্বা হিম হয়ে গেল। যে মেয়েটি কোক খাচ্ছে, সে তার গ্লাস নিয়েছে মুখের সামনে। কিন্তু খাচ্ছে না, স্থির। তার ছেলেবন্ধুর গ্লাস টেবিলের উপরে রাখা। সে সিগারেট খাচ্ছে ধোয়া ছেড়ে। অন্তত ছাড়ছিল। এখন এটাকে কি বলবে ভেবে পেল না ডেভ। সিগারেটের ধোয়া তার সামনে ঝুলে আছে একটা বেলুনের মত। সরু অংশটা তার মুখের কাছে, যেন ফু দিয়ে সে বেলুন ফোলাচ্ছে। ধোয়াটা কাচের মত স্থির হয়ে আছে তার সামনে। পুরো দৃশ্যটার মধ্যেই একটা ভয়ঙ্কর অশুভ কিছু আছে। মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত নামছে ডেভ এর। আস্তে করে ক্যাশ কাউন্টারের থেকে হাত উঠিয়ে সে মহিলার গালে হাত দিল। উষ্ণ, কিন্তু পাথরের মতই স্থির। কি মনে হতে, সে এবার হাত দিয়ে জোরে ধাক্কা দিল, তারপর শরীরের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করে ফলাফল যেটা পেল, শূন্য। আতংক এতক্ষন ছেকে ধরলো মিলারকে। তার সহকারীর উদ্দেশ্যে গলা ফাটিয়ে পাগলের মত সে চিৎকার দিল, “পিট! পিট! কি হচ্ছে এসব?” সোনালী চুলের পিট কোন জবাব দিল না। একটি গ্লাস মুছতে মুছতে স্থির হয়ে থাকে সেও। তাকে নাড়ানোর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় মিলারের। কাপতে কাপতে চেয়ারে বসে পড়লো ডেভ মিলার। এতক্ষনে তার মাথায় চিন্তা শক্তি কাজ করতে শুরু করেছে। মাতাল হয়ে গোলাপী হাতি দেখার থেকে বেশি সিরিয়াস আর ভয়ঙ্কর বিষয় এটা। তাকে কোন ধরনের ফাদে ফেলা হয়েছে। এখন যে কাজটি সে করতে চায় তা হল বাড়িতে গিয়ে দেখা হেলেন এখনও সেখানে আছে কিনা। স্ত্রীর কথা মনে হতেই সে একটু সহজ হল।হেলেন, তার স্ত্রী, গাঢ় নীল চোখ আর অদ্ভুত একটা শান্ত স্থিরতার সাথে তার সব কথা শুনবে। তাকে বলতে পারবে কি হয়েছে তার।
****
এক ছুটে দোকান থেকে বেড়িয়ে সে রওয়ানা দিল তার গাড়ির দিকে। তালা লাগায়নি, তারপরেও দরোজাটা শত চেষ্টা করেও খুলতে পারলো না সে। প্রত্যেকটি দরোজার সাথে যুদ্ধ করে একই ফলাফল পেল। হঠাৎ কি মনে হতেই তার শরীর শক্ত হয়ে গেল। চোখ তুলে গাড়ির উপর দিয়ে তাকিয়ে সারা শহরটাকে একই রকম স্থির দেখতে পেল সে। যতদুর চোখ যায়, সব স্থির। গাড়িগুলো রাস্তায় স্থির। কোনটা ডানে বামে মোড় নিচেছ তো কোনটা অপরটাকে পাশ কাটাচ্ছে। এক লোক লাফ দিয়ে ফুটপাথ থেকে নামতে গিয়ে মাঝ পথেই স্থির হয়ে আছে। পথচারীরা এক পা তুলে হাটার ভঙ্গিতে স্থির। একটা পাখি ওড়ার ভঙ্গিতে আকাশে স্থির। আর পারল না মিলার। শুরু করলো দৌড়, বাড়ির দিকে। হেলেন এর দেখা তার পেতেই হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে তখন। নিজের পরিচিত এলাকার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত সে একটানে দৌড়ে গেল।পরিচিত, কিন্তু কি ভীষণ রকম অপরিচিত দেখাচ্ছে জায়গাটা এখন। হেমন্ত চলছে। মাটিতে এখানে সেখানে সোনালী ও বাদামী পাতার ছড়াছড়ি। বাতাসেও ভাসছে কিছু। মাটিতে মারামারি করতে থাকা দুটি ছেলেকে পাশ কাটিয়ে সামনেএগুলো সে । পাতা পোড়ার একটা গন্ধ তাকে ডানে ফেরালো। পাশেরবাড়ির পড়শি পাতা স্তুপ করে পুড়াতে লেগেছে। আগুনটা স্থির হয়ে আছে একটা লালচে সোনালী আভা নিয়ে। স্বস্তির একটা নিশ্বাস ফেলে নিজের বাড়ির পায়ে হাটা পথে হাটা দিল সে। মুল দরোজাটা তালা বন্ধ অবস্থায় পেয়ে বিশেষ অবাক হল না। এরকই হবার কথা। বেল বাজাতে গিয়ে খেয়াল হল, সেটা সম্ভবত বাজানো যাবে না, বোতামটা নড়বেই না। পেছনের দরোজা দিয়ে ঢোকা যায় কিনা, চিন্তা করে সেদিকে রওয়ানা দিল। পেছনের হালকা কাঠের দরোজাটা এই মুহুর্তে ব্যাংকের ভল্ট এর মতই শক্ত লাগলো। সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কিয়েও কিছু করতে পারলো না সে। শেষে কিছু করতে না পেরে চিৎকার দিল
“হেলেন, কোথায় তুমি? কোথাও একটা কিছু গন্ডগোল হয়েছে। তুমি ঠিক আছো তো...” তার গলার ফাকা প্রতিধ্বনি তাকে তাকে থামিয়ে দেয়। এখানেও সবকিছু নিস্তব্ধ কবরের মতই। কেবলমাত্র নিজের প্রতিধ্বনি তাকে ব্যঙ্গ করতে লাগল, হেলেন, হেলেন বলে
নিস্তব্ধ মৃত এক পৃথিবীতে ডেভ মিলার একমাত্র জীবন্ত প্রানী। হতাশায় ক্লান্ত হয়ে সে হেটে বেড়াতে থাকে বাড়ির চারপাশে। মনে আশা, যদি কোন জানালার ফাকে তার স্ত্রীকে চোখে পড়ে। কিন্তু আধা অন্ধকারে সে কিছুই উদ্ধার করতে পারল না। তন্দ্রাচ্ছন্নের মত টলতে টলতে সে বাড়ির সামনে ফিরে আসে। এখন সে জানে তার আত্বহত্যার ঘটনাটা কোন স্বপ্ন ছিল না। সে মরে গেছে। মরে গিয়ে সে এইখানে আটকা পড়েছে নরকে। তিক্ততার সাথে সে অভিশাপ দিল নিজের মদের অভ্যাসটাকে। এই মদই তাকে পাগল বানিয়ে আত্বহত্যার দিকে নিয়ে এসেছে। আত্বহত্যা! ডেভ মিলার একটা কাপুরুষ! সবকিছু থেকে পালাবার জন্য সে আত্বহত্যা করেছে! হতাশায় কাদতে থাকে মিলার। যদি একটা বছর সময় পেত সে, একটা বছর, সব ঠিক করে ফেলত, সব। একটু পর সুস্থির হল সে। তার ভেতরের কিছু একটা তাকে জানান দিচ্ছে, সে মরে যায়নি।এটা তার চেনা পৃথিবী। কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি এখানে। কি ঘটেছে সেটা সে কেবল অনুমানই করতে পারে। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কোন ভাবে সব কিছু থেমে গেছে। কিন্তু কিভাবে? কোন উত্তর জানা নেই তার।
দ্বিতীয় অধ্যায়:
আগুন জ্বলবে না, দরোজা খুলবে না, পানি কাচের মত শক্ত। সব শক্তি দিয়েও ডেভ একটা ছোট পাথরও সরাতে পারছে না। ঘাস ঢাকা মাঠে হাটা হয়ে গেছে বিপজ্জনক। সরু ঘাস ব্লেড এর ফলার মত পায়ে বিধে। সব মিলিয়ে মিলার যা বুঝেছে, সব রকম পরিবর্তন থেমে গেছে। কোন কিছুকেই তার বর্তমান অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় নেয়া যাচ্ছে না। প্রচন্ড মাথা ব্যথা তাকে সবরকম চিন্তা থেকে সরিয়ে আনল। সারারাত মদ খাবার ফল হল এটা। তার এখন দরকার কয়েক মগ কড়া রকম কফি। কিন্তু একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢোকার পর তার হুশ হলো, সে সম্ভবত পানি জাতীয় কিছু খেতে পারবে না। একটা ব্যর্থ চেষ্টা তার এই চিন্তা সমর্থন করলো। হতাশ হয়ে সে বাইরে বের হয়ে আসলো। রাস্তায় দাড়িয়ে কি করবে ভেবে পলে না সে। 'হেলেন..!' চিৎকার করে তার স্ত্রীর নাম ডেকে রাস্তায় বসে কাদতে থাকে ডেভ মিলার। হেলেন..তার গলার আওয়াজ এখন ফিসফিসানি পর্যায়ে চলে গেছে। 'কোথায় তুমি..? কোথায় গেলে...?' নিশ্বব্দতা ছাড়া আর কেউ উত্তর দিল না। হাটু মুড়ে হাতে মাথা গুজে বসে থাকে ডেভ। হঠাৎ কতক্ষন পরে কে জানে, তার ডানে কিছু একটা শুনতে পায় সে। আশে পাশে দাড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর পাশ থেকে কিছূ একটা তার দিকে ছুটে এসে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বাদামী আর নরম কিছু একটা। তাকে ধাক্কা মেরে ফেরে দিয়ে সেটা লাল জিহ্বা বের করে তার মুখ চাটতে থাকে। একটু সুস্থির হয়ে উঠে সে দেখতে পায় এটা একটা পুলিশের কুকুর! মিলার এবার ওঠে দাড়াবারচেষ্টা করে। কুকুরটা তাকে উঠতে দেয়, তারপর আবার তার কাধে পা দিয়ে তার মুখ চাটার চেষ্টা করতে থাকে। অদ্ভুৎ এক খুশিতে নেচে উঠতে চায় মিলারের মন। এই পোড়া শহরে সে বাদে কেউ বেচে আছে! "কোত্থেকে এলে বৎস! কেউ তাহলে তোমার সাথেও কথা বলে নি! নামটা কি, শুনি?" একটু ঝুকে কুকুরটার গলায় থাকা ভারী পেতলের কলারটা দেখলো সে। "হমম.. মেজর! ভাল নাম। অন্তত, আমার একটা সঙ্গী পেলাম, কি বল হে মেজর ?" সাথে সাথে বলে ডেভ। কুকুরটা নিয়ে বেশ কিছু সময় এতটাই ব্যস্ত ছিল ডেভ যে তার কুই কুই কানে আসে নি। এবার খেয়াল হতে কুকুরটাকে একটু সতর্কভাবে দেখতেই সে দেখতে পায় তার কানের গোড়ায় ক্ষত। আস্তে করে জায়গাটা চেক করে। "হমম.. কোথাও আঘাত পেয়েছ দেখছি।” কি করা যায় তা চিন্তা করলো ডেভ। এই ক্ষতের চিকিৎসা তার জানা কোন পদ্ধতিতে করা সম্ভব না। কি দিয়ে চিকিৎসা করবে সে? মাথা নাড়ল আবার । একটা চিন্তা মাথায় আসতে নড়েচড়ে বসল সে। কার কাছে যেন শুনেছিল পাবলিক লাইব্রেরিতে ঔষধপত্র ও ক্ষতের প্রাথমিক চিকিৎসার উপরে একটা প্রদর্শনী হচ্ছিলো কয়েকদিন ধরে। সেখানে গেলে যদি কিছু জানা যায়..
****
খুব তাড়াতাড়িই দুটো নড়েচড়ে বেড়ানো প্রানীকে দেখা গেল লাইব্রেরির লম্বা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে। রিসেপশনে সে একজন লাইব্রেরিয়ানকে দেখতে পেল যে তার দিকে উজ্বল হাসি দিচ্ছে, সে তাকে সম্ভাষন জানিয়ে জানতে চাইল, আমি চিকিৎসা বিষয়ক প্রদর্শনী কোথায় হচ্ছে তা জানতে..!” হঠাৎ করেই তার মনে পড়ল, পৃথিবীটা স্থির। গত কিছুক্ষন মেজর এর সাথে থেকে তার অন্য রকম কিছু মনে হতে শুরু করেছিল। একটা গলার স্বর পেছনের বইয়ের তাক থেকে এসে তাকে স্থির করে করে দিল। “যদি কিছু পাও, তাহলে আমাকে জানাতে ভুলে যেও না যেন।”
*****
ঘরের কোনায় থাকা বইয়ের তাক এর পেছন থেকে একজন বয়স্ক টেকো মানুষ এগিয়ে এল ডেভ এর দিকে। মুখে হাসি, কানের গোড়ায় পেন্সিল আর হাতে একটা নোটবুক। “তুমিও! আমি ভেবেছিলাম আমিই কেবল এই ফাদে আটকা পড়েছি!” লোকটা জানায় তাকে। "আমি এতটা ভালমানুষ হতে পারিনি। গত কয়েক ঘন্টা ধরে আমি মনেপ্রানে আর একজন মানুষ এর সাথে দেখা হবে এই আশায় ছূটে বেরাচ্ছিলাম।” একটু কুন্ঠিত হাসি নিয়ে জানায় ডেভ। "হমম. বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যপারটা একটু ভিন্ন।আসলে এই জঘন্য ব্যপারটার জন্য আমিই দায়ী।” "
আপনি!” থতমত খেয়ে যায় ডেভ, "আমি ভেবেছিলাম..!” লোকটা কোন জবাব না দিয়ে তার অদ্ভুত সব হিজিবিজি কাটা নোটবুকটা মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। এবার তাকে একটু ভালভাবে দেখার সুযোগ হল মিলারের। লম্বা, শক্তপোক্ত গড়নের লোক এই নতুন মানুষটা। চওড়া কাধ বয়সের কারণে কিছুটা ঝুলে গেছে। তবে তার চোখ জোড়া, সরু হলেও এক অদ্ভূত দ্যুতিতে ঝলমল করছে।
"হমম. সমস্যাটা তাহলে এখানে! আমি মাত্র তিন মাত্রায় শক্তি ঘনীভুত করেছি, যেখানে কিনা দরকার ছিল আরেকটি শক্তি ক্ষেত্র। ঘটনা যে প্যাচ খেয়েছে, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।”
"আমি আসলে আপনার কথা বুঝতে পারছি না। আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি কিছু একটা করেছেন তার ফলেই এটা ঘটেছে?”
"আমার তো তাই ধারনা..! আমি জন এনরিকসন। ওয়ানামেকার ইন্সটিটিউট এর লোক।” পেন্সিল দিয়ে টাক মাথায় খোচাতে খোচাতে জানায় লোকটা।
"ওহ!” বুঝদারের ভঙ্গিতে মাথা দোলায় এবার মিলার। এনরিকসন হল ওয়ানামেকার ইন্সটিটিউট এর প্রধান। আনবিক পর্যায়ে কাজ কর্মের জন্য অনেকবারই সে এবং তার ইন্সটিটিউট পত্রিকার প্রথম পাতার খবর হয়েছে। এনরিকসনের চোখ যেন হঠাৎ করেই তার উপরে পড়ে।
"তুমি কি অসুস্থ ছিলে? খুব খারাপ রকম অসুস্থ?”
"এ্যা.. ঠিক অসুস্থ না, একটু মাতাল ছিলাম.. কয়েক ঘন্টা আগেও।"
"মাতাল! কিন্তু তাতে তো এরকম হবার কথা না।” চিন্তিত ভাবে বলে এনরিকসন। “আরও কিছু থাকা উচিৎ। আমার যন্ত্র তো এতটা ক্ষমতাশালী নয়। কুকুরটার ব্যপারে বুঝতে পারছি। কেউ গাড়ি দিয়ে তাকে চাপা দিয়েছিল নিশ্চয়ই। ঠিক মরবার আগ মুহুর্তে আমার যন্ত্র চালু হয়ে তাকে আটকে ফেলেছে। কিন্তু তোমার কি ঘটনা?”
"ওহ! "এবার স্বীকারোক্তি দেবার মত করে বলে ডেভ, "আসলে সত্যি বলতে কি, আমি আত্বহত্যা করতে গিয়েছিলাম। যথেষ্ট পরিমানে মাতাল ছিলাম। কিছু বাজে ঘটনা... সব মিলিয়ে একটা লজ্জাজনক ব্যপার।মিলার পরিবারে গত কয়েক শ বছরে কেউ আত্নহত্যা করেনি!”
"আচ্ছা! তাহলে আমার থিয়োরি ঠিক!” বুঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে এনরিকসন। দ্রুত কথা বলে ওঠা মিলারকে হাত তুলে থামায় সে। "এখন ঘটানা হল গিয়ে, আমরা তিনটা প্রানী এই কঠিন চক্করে পড়েছি। এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হলে আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে। উপরওয়ালাই জানে আরও কতজন এই মুহুর্তে আটকা পড়ে আছে এই ফাদে!”
"আপনি কে একতটু আমাকে বুঝিয়ে বলবেন আসলে পুরো ব্যপারটা কি ছিল, কিভাবে ঘটেছিল?” মিলার এবার জানতে চায়।
"অবশ্যই অবশ্যই.. কি যেন নাম তোমার?“
"মিলার। ডেভ মিলার।”
"আচ্ছা, তাহলে ডেভ বলেই ডাকি। দেখ ডেভ, আমি আসলে একজন সময় নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত ত্বত্ত্বের বিশেষজ্ঞ। সময়কে বিভিন্ন ভাবে সঙ্গায়িত করা হয়েছে এখন পর্যন্ত, বহমান নদী থেকে শুরু করে গোলাপী কেচো, কোনটাই বাদ যায়নি। সবাই ধারনা করে সময় হল এমন একটা জিনিস যেটা প্রতি মুহুর্তে তৈরি হচ্ছে। অদ্ভুত ধারনা। সময় আছে। কিন্তু সবাই যে ধারনা করে, সময় একটি বহমান নদী, তাহলে প্রশ্ন আসবে এর নিশ্চয়ই কোন শেষ আছে। এর যদি একটি সম্মুখ গতি থাকে, তাহলে এর অবশ্যই একটি শুরু আছে, এবং এক পর্যায়ে হয়ত শেষও আছে। তুমি কি চিন্তা করতে পার এমন একটা অবস্তা যেখানে সময় বলে কিছু নেই? না। সময়ের শেষ নেই।তাই আমি মনে করি সময় হল একটি বৃত্তাকার রেলরোডের মত যার কোন শেষ নেই। আমরা যারা এর মধ্যে থাকি তারা কেবল এর মধ্যে ঘুরপাক খাই। ভবিষ্যত নিহিত আছে অতীতের মধ্যেই। একসাথে জড়াজড়ি করে।"
এই সব কথাবার্তা শুনে মিলারের মাথা ভন ভন করে ঘুরছিল। এনরিকসন এমন ভাবে তার দিকে কথাগুলো ছূড়ে দিচ্ছিলো যেন মিলার জন্ম থেকেই এই বিষয়ে পন্ডিত। হাত দিয়ে কপাল ঘষলো সে।
“আমার মাথা ধরিয়ে দিয়েছেন আপনার কথা দিয়ে। সোজা ভাবে বলুন, যেন বুঝতে পারি।”
“খুবই স্বাভাবিক। যে জিনিসগুলো সারাজীবন আমার মাথা ঘোলা করে রেখেছে, সেটা তুমি একদিন বুঝে যাবে, তা কি করে হয় বল! সোজাভাবে বলতে গেলে বলা যায়, আমরা এমন একটি ট্রেনে ভ্রমন করছি যেটা একটি গোল ট্র্যাকের উপরে চক্কর খেয়ে যাচ্ছে সবসময়। ট্রেন যখন তার শুরু অবস্থানে চলে আসছে, সাধারণ ধারনা বলে সেটার উচিত অতীতের সাথে একটা গুতা খাওয়া।কিন্তু অতীত তো সবসময় ট্রেনেরই পেছনে। তাই কখনোও অতীতের সাথে আমাদের দেখা হয়না। এটা অনেকটা যেন কুকুরের লেজ কামড় দেবার চেষ্টার মত। সে যতই ঘূরে, লেজ ততই সরে যায়। ভবিষ্যত সবসময়ই আমাদের সামনে। আমরা সেটার উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছি অনবরত। আমার গবেষনার উদ্দেশ্য ছিল এমন কোন উপায় বার করা যেন কোন মানুষকে তার লাইন থেকে সামান্য হলেও সরিয়ে দেয়া যায়। তাহলে সে এমন একটা অবস্থানে যেতে পারেবে যেখানে সে অতীত ও ভবিষ্যতকে একই সাথে দেখতে পারবে। চাইলে যেতেও পারবে কোন একটাতে। এই জায়গাটা কিছুটা নিরপেক্ষ এলাকার মত। কিন্তু উপরওয়ালাই জানে কি সমস্যা হয়েছে... আমরা না বর্তমান না অতীত না ভবিষ্যত এমন একটা অবস্থার মধ্যে আটকা পড়েছি। মরে যাবার সময়টাই যদি কোনভাবে তোমাকে আমাকে এখানে এনে থাকে, তাহলে না জানে আরও কত মানুষ সারা দুনিয়াতে এভাবে ঘুরে বেরাচ্ছে! সবাই অনন্তকালের জন্য আটকা পরে গেছে এই ফাদে।”
একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছিল মিলারের। “ তাহলে আমার বউ এর কি হল? বাকি সবাই কোথায়?”
"সবাই এখানেই আছে। "ব্যাখ্য করার চেষ্টা করে এনরিকসন। 'তোমার বউকে খুজে পেলে তুমি তাকে দেখতে পাবে এটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু সে হবে এইরকমই স্থির। মুর্তির মত। কারণ আমরা এমন একটা অবস্থায় আছি, যেখানে সময় বলে কিছু নেই। স্থির সময় বলা যেতে পারে অনেকটা। যে জিনিসটা আমি কখনো চিন্তা করি নি সেটা হল এভাবে স্থির সময়ে বেচে থাকা সম্ভব কিনা। এখন দেখা যাচ্ছে সম্ভব। এটাও জানা ছিল না যারা জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থান করছে কেবলমাত্র তারাই এ সময়ে প্রবেশ করতে পারে। অবশ্য আমার ইমপালসার যন্ত্রটারও কিছু অবদান আছে।” ভাবুক একটা কৃতিত্বের সাথে বলার চেষ্টা করে এনরিকসন।
"আমরা কি তাহলে মরা মানুষ? "ভীত তিক্ততার সাথে প্রশ্ন করে মিলার।
"অবশ্যই না। আমরা কথা বলছি, হেটে চলে বেরাচ্ছি। কিন্তু আমরা একটা আবদ্ধ অবস্থার মধ্যে আছি। যখন আমি আমার টাইম ইমপালসারটাতে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুত দিয়েছিলাম, তখন কোন একটা সমস্যা হয়। সম্ভবত আমি মারা যাবার মত অবস্থা হয়। ঠিক সেইসময়ে তুমি নিজের মাথায় পিস্তল ফোটাও।"
এবার ডেভের কাধে হাত রাখে সে, "সম্ভবত তুমি মারা যাচ্ছ। এ অবস্থা থেকে বাচার একটাই উপায় হল মেশিনটাকে আবার কাজ করাবার চেষ্টা করানো।আমরা যদি একটু আগের অতীতে ফিরে যেতে পারি, তাহলে এ অবস্থা হবে না। অতীতে যেতে না পারলে, আমরা যদি বর্তমানে ফিরে যাই, যে ঘটনায় আমরা মারা যেতে বসেছি সেটা ঠিকই ঘটবে। আমরা মারা যাব।"
"যেটাই হোক, সেটা এই অবস্থা থেকে ভাল।" বলে ডেভ।
"আমি লাইব্রেরিতে এসেছিলাম আমার বইগুলোর খোজে। ল্যাবে থাকা বইগুলো তালা মারা। আর এখানকারগুলো দেখে মনে হচ্ছে ওগুলো সিমেন্ট দিয়ে শেলফের সাথে আটকে রাখা হয়েছে। কোনটাই কাজের না। এখন চিন্তা করছি আবার ল্যাবে ফিরে যাবো। কিছু যদি করা যায়।"
মাথা নাড়ে মিলারা, আশা করতে ভয় পাচ্ছে। “হয়ত মেশিনটা দেখে আপনার মনে কোন আইডিয়া চলে আসবে..”
"তাই যেন হয়.. খোদাই জানে আমি এর আগে কতবার ব্যর্থ হয়েছি! এবার যেন অন্যরকম হয় ঘটনা।" মাথা নাড়ে এনরিকসন।
অধ্যায় তিন
এনরিকসনের ল্যাবে যেত তাদের প্রায় এক ঘন্টা লাগল। ল্যাবের প্রধান দরোজা বন্ধ। এনরিকসন ডেভকে অন্যদিকে নিয়ে গেল।
“পেছনের দরোজা খোলা আছে। সেটা দিয়ে ঢুকে আমরা ভেন্টিলেটর দিয়ে ল্যাবে ঢুকবো। বাইরে বের হয়েছিলাম সেদিক দিয়েই।” জানায় সে।
মেজর তাদের সাথে নাচতে নাচতে হেটে যাচ্ছিল। তার কাছে পুরো ব্যপারটাই মজা। কিন্তু মিলারের কাছে কোন কিছুই ভাল লাগছিল না। এনরিকসন ব্যর্থ হলে এখানেই আটকে থাকতে হবে সারা জীবন। সফল হলে মরবে না বাচবে তারও কোন ঠিক নেই।
এখানে সেখানে আটকে থাকা মানুষদের পার করে তারা উঠতে থাকে সিড়ি বেয়ে। পনের তালা, উঠতে উঠতে চিন্তা করে ডেভ, কপাল খারাপ হলে এরকমই হয়। তার আছে উচ্চতা ভয়, সারা জীবন উচু দালান এড়িয়ে চলেছে সে। এখন তাকে সেখানেই উঠতে হচ্ছে।
অনেকখানি উঠার পরে এনরিকসনের ল্যাবের দেখা পাওয়া গেল। এটা তের, চোদ্দ এবং পনের তালা মিলে একটি বিশাল ল্যাব। অতি অবশ্যই এর দরোজা খুলবে না। তাই তারা ল্যাবে ঢোকার জন্য ব্যবহার করলো মাথার উপরে থাকা অনেকগুলো বাতাস চলাচলের ভেন্টিলেটর এর একটা। ভেতরে ঢোকার আগে অবশ্য একটা কাজ করে কষ্টের মধ্যেও অনেক শান্তি পেয়েছে। রিসেপশনে বসে ছিল এক সুন্দর কিন্তু নাক উচু চেহারার মহিলা। তার সামনে একটি বোর্ড যাতে লেখা, আপনার কি এপয়েন্টমেন্ট আছে? একজন ভুতপুর্ব ঔষধ কোম্পানী প্রতিনিধি হিসেবে এদের নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে মিলারের। ঠিক মত কথা বলবে না, সবসময় অতি ব্যস্ত একটা ভাব নেবে। নিজেকে মহা গুরুত্বপুর্ন প্রমান করার চেষ্টা করবে। এইবার একটা সুযোগ পেয়েছে মিলার। পকেট থেকে একটা সিগারেট বার কেও, তাতে আগুন দিয়ে সুন্দর করে মহিলার নাকের উপরে একটা ধোয়া ছাড়ল সে। তারপর তার দিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রফেসরের পিছে গিয়ে হাজির হল ল্যাবে।
বাতাস চলাচলের ভেন্ট এর মধ্য দিয়ে চলার সময় মেজরকে নিয়ে সমস্যা হল। কিন্তু তাকে বাইরে ফেলে আসতে মন চায়নি তার অথবা প্রফেসরের কারওই।
প্রফেসরের ল্যাব আলোকিত। বাইরের দেয়ালগুলো কাচের ইট দিযে তৈরি। মাথার উপরেও একটি বড় কাচের ছাদ। ল্যাবের ঠিক মাঝখানে প্রফেসর এনরিকসনের সেই মেশিন। বেশ লম্বা সময় নিয়ে এনরিকসন বিভিন্ন অংশ দেখিয়ে আবার পুরো ব্যপারটা বোঝালেন। সব শেষে, মিলার আগে যা জানত, তাও গুলিয়ে ফেলল। সাদা চোখে সে যা দেথতে পাচ্ছে তা হল, তিনটি লম্বা থাম থেকে মোটা মোটা তিনটি তার গিয়ে লেগেছে তাদের ঠিক মাঝখানে ছাদ থেকে ঝুলতে থাকা বড় আকৃতির গোলকে। তারগুলো আবার তিনটি দানবাকার ট্রান্সফরমার থেকে গিয়ে থামে লেগেছে।
“এই হল আমার টাইম ইমপালসার। সমস্ত ঘটনার মুল। আর একটু যদি শক্তিশালী হত, তাহলে আমাদের এভাবে আটকা পরে থাকতে হত না। সামান্য সময় পরিমানে হলেও অতীতে যেতে পারতাম। যেতে পারলে তারপর চলে আসাটা সমস্যা হত না।” দুঃখ দুঃখ ভাব করে মাথা নাড়ে এনরিকসন।
********
পকেটে হাত ঢুকিয়ে মিলার ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখতে থাকে। ঘরেরএক কোনায় তার পড়ে চোখে পর আর একটি দানবাকার ট্রান্সফরমার। ঠিক অন্য তিনটার মত।তাড়াতাড়ি এসে এনরিকসনকে ধরে সে।
"কি এটা? তোমার আর একটা ট্রান্সফরমার না? যেগুলো এখানে ব্যবহার করেছো?"
“একদম ঠিক” এক কথায় উত্তর প্রফেসরের।
“আপনি তো বলেছিলেন অবস্থা ঠিক করার জন্য আপনার দরকার আর একটা পাওয়ার সোর্স। এটা ব্যবহার করা সম্ভব। নাকি?”
“এটাও ঠিক।”
“তাহলে এটা ব্যবহার করে আমাদের বাচাবার ব্যবস্থা করছেন না কেন?” উন্মাদের মত হেসে ওঠে মিলার।
“পাওয়ার কানেকশন হিসেবে কি ব্যবহার করবো?”
“কেন, এখানে সেখানে কতই তো তার পরে আছে... আচ্ছা...”
“হ্যা। এগুলো এখানে সেখানে পড়ে আছে এবং তাদের সেখান থেকে নড়ানো যাবে না।”
হতাশ হয়ে তার জায়গায় বসে পরে মিলার। হঠাৎ করে মনে আশা জেগে উঠেছিল তার।
"আমাদের অবশ্যই আশা হারালে চলবে না ডেভ। কিন্তু একই সাথে বাস্তববাদীও হতে হবে। বাস্তব বলে আমাদের এখান থেকে বার হবার কোন আশা নেই। তবে মেশিনটা এখনও কাজ করছে ঠিক ভাবে। আমাদের এই অবস্থার অবসান ঘটাবার জন্য দরকার একটা বাড়তি পাওয়ার এর ধাক্কা। কিন্তু এই হতচ্ছাড়া স্থির পৃথিবীতে আমি বিশ বাইশ ফুট লম্বা তার কোথায় পাবো যেটা ব্যবহার করে আমি এই বাড়তি পাওয়ারটুকু মেশিনে দেব?"তার পাশে বসে মাথা নাড়ে প্রফেসর এনরিকসন।
হাটুতে মাথা গুজে বসে আছে মিলার, এমন সময়ে সে তার হাতে নরম ও গরম কিছু অনুভব করে সামনে তাকায় সে। মেজর তার হাত চাটছে। অন্য হাত বাড়িয়ে সে মেজরের কানের গোড়া চুলকে দিল। আরামে কুকুরটার
চোখ বন্ধ হয়ে আসে। দেখে হিংসা হয় মিলারের। কেউ যদি তার মাথায় এভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করতো! হেলেন এর কথা মনে পরে তার। ঠিক এই কাজটিই সে করত তার জন্য। কত শত বিপদের সময়ে সে হেলেনের কাছে আশ্বাস পেয়েছে, শান্তি পেয়েছে, নির্ভার হয়েছে। ঠিক এই মুহুর্তে তার হেলেন এর কথা খুব বেশি করে মনে পড়তে থাকে। একটা যদি সুযোগ পেত সে, জীবনটা নতুন করে শুরু করতো আবার। তার স্ত্রীকে সুখে রাখত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে মাথা তোলে আবার।
“আমরা যদি এখান থেকে বের হতে না পারি, বোধহয় না খেতে পেয়েই মারা যাব, তাই না?”
“এখনও ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে সম্ভাবনা আছে।”
“যেভাবেই হোক, এভাবে বেশি দিন থাকা সম্ভব না। যদি পাগল হয়ে মরতে চাই, তাহলে একটা ভাল উপায় হবে বোধহয কোন উচু ব্রীজ অথবা দালান থেকে লাফ দেয়া। এই পনের তলা থেকেও করা যেতে পারে।”
“এরকম কথা বলো না হে মিলার। আমি কোথায় চেষ্টা করছি বাচার উপায় বার করতে, আর এদিকে তুমি মরার বুদ্ধি খুজে বার করছো। আমি এখনও আশা ছাড়িনি। কোন ভাবে কোন বুদ্ধি বের হয়ে যাবে।”
“এসো, তাহলে একটা চুক্তি করা যাক। যদি তুমি কোন উপায় খুজে বার করতে না পার, তাহলে আমি তোমার গলা চেপে ধরবো, আর তুমি আমার। আমি চিন্তা করবো দোষটা তোমার, সুতরাং কাজটা করতে খারাপ লাগবে না। আর তুমি দোষ দেবে আমাকে। বেশ হবে, তাই না?”
তার হাত চেপে ধরে এনরিকসন। “এত দ্রুত ভেঙ্গে পড়ো না হে মিলার। যদি বেচে ফিরতে পার, তাহলে কড়া পানীয় থেকে দুরে থেক। আইরিশ আর মদ জিনিসটার মিশ্রন কোনদিনই ভাল ফল দেয়নি। মদ থেকে দূরে থাকলে তুমি তোমার দোকান অল্প সময়ের মাঝেই দাড়া করিয়ে ফেলতে পারবে।”
“ধন্যবাদ।” অস্ফুটে জানায় মিলার। “একমাত্র জান বাচাবার জন্য ডাক্তার এর কথা ছাড়া ও জিনিস হাত দিয়ে ছুয়ে দেখবো না। কথা দিলাম।”
***
এর পরের কয়েক ঘন্টা উদ্দেশ্যহীন ভাবে তারা ল্যাবের এদিক সেদিক ঘুরে বেরাল। কোন পথ নেই। শেষ পর্যন্ত, বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ প্রফেসরের আগে ব্যপারটা মিলারের চোখেই ধরা পড়ল। পকেটে হাত দিয়ে আনমনে চাবি নাড়াচাড়া করতে করতে সে হঠাৎ করেই ব্যপারটা খেয়াল করলো। এক ছুটে এনরিকসনের কাছে এসে তাকে দুহাতে ঝাকাতে থাকে। এই ব্যপারটা এতক্ষন খেয়াল করলে না কেন?
প্রফেসর নিজের চিন্তায় ডুবে ছিল। প্রথমে থতমত খেয়ে গেল। তারপর সামলে উঠল “ কি ব্যাপার, কিছু পেলে নাকি?”
হাতের চাবির রিংটা দেখালো মিলার। তাতে কিছু চাবি ঝুলছে।
“কি? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।” প্রফেসরকে এখনও আকাশ থেকে পড়া মানুষ এর মত দেখায়।
অধৈর্য ভাবে মাথা নাড়ে। “তোমার কাছে চাবি আছে। আমার কাছে চাবি আছে, চাবির রিং আছে, অনেকগুলো পয়সা আছে, চাকু আছে, হাতের ঘড়ি আছে। সব ধাতু। এগুলো যদি এক এক করে মেঝেতে ঠিক মত লাইন দিয়ে বসানো যায়, তাহলে একটা লম্বা তার বানানো অসম্ভব কিছু না।”
প্রফেসরকে দেখায় বৈদ্যুতিক শক খাওয়া মানুষের মত। "ইউরেকা....পাওয়া গেছে.." চিৎকার করে ওঠে সে। "এবার সমস্যা হবে এগুলো যথেষ্ট পরিমানে আছে কিনা।"
এক মুহুর্ত পরে তাদের দেখা যায় উন্মাদের মত নিজেদের পকেট খালি করে চলেছে। একটু পরে তাদের সামনে একটা ছোটখাট স্তুপ দাড়িয়ে যায়। এনরিকসন হাত বাতাসে নাড়াতে থাকে অস্থির ভাবে। "হে ঈশ্বর.. যেন যথেষ্ট
পরিমানে সব থাকে।" প্রার্থনা করে এনরিকসন।
“ট্রান্সফরমার পুরো চালু অবস্থায় আছে। এখন সেখান থেকে পাওয়ারটা নিয়ে এই গোলক পর্যন্ত পৌছাতে পারলেই এসপার কি ওসপার।”
দুজনে মিলে ট্রান্সফরমার এর দিকে এগিয়ে যায়। মিলার হাতের ছুড়ি দিয়ে ঘড়িটিকে ছোট ছোট টুকরোয় আলাদা করতে থাকে। যেন সেগুলো পাশাপাশি বসিয়ে একটা লাইন তৈরি করা যায়। সব করার পরে দেখা গেল সেটা দেড় ফুটের একটা লম্বা লাইন হয়ে দাড়িয়েছে। প্রফেসরের ঘড়ি, তাদের পয়সা, সব মিলে লাইনের দৈর্ঘ্য দাড়ালো দশ ফুট। এখনও অর্ধেক জিনিস বাকিই আছে। আশা জাগতে শুরু করেছে তাদের মনে। পেন্সিলগুলোর গায়ের ধাতব পাত তৈরি করল আরও দু ফুট। চাবির রিংগুলো আর তাদের সাথে থাকা চেইন বিশাল সাহায্য করলো। আঠারো ফুটের মাথায় গিয়ে তাদের অগ্রগতি ধীর হয়ে গেল।
একবিন্দু চিন্তা না করে মিলার তার হাতের বিয়ের আঙটি খুলে সেটাকে কেটে ভাগ করলো। টেনে, পিটিয়ে সেটাকে কয়েক ইঞ্চি লম্বা করেও সাইজ বেশি হল না।
চুপ করে বসে রইল দুজন। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আর মাত্র কয়েক ফুট যেতে পারলেই তারা মুক্তি পেয়ে যেত। হাতের ছুড়িটাকে নাড়ায় মিলার।
“এইটাকে ভেঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে আরও এক ফুট মত পাওয়া যাবে। কিন্তু তাও তো যথেষ্ট নয়!”
হঠাৎ করে সোজা হয়ে ওঠে প্রফেসর এনরিকসনের মাথা। “জুতা! আমাদের জুতার ভেতরে অনেক কাটা আছে। এই ছুড়ি দিয়ে সেগুলো কেটে বার করে নেয়া যাবে!”
দশ মিনিটের মধ্যেই তাদের জুতাগুলোর চেহারা হয় ছিদ্র যুক্ত চামড়ার চালুনির মত। এনরিকসন কাপা হাতে ধীরে ধীরে একটার পর একটা কাটা পাশাপাশি বসাতে থাকে। আর বাকি মাত্র ছয় ইঞ্চি!
শেষ কাটাটা বসাবার পরে আবার হতাশায় বসে পরে দুজনে। কয়েক ইঞ্চি বাকি মাত্র। আর কয়েক ইঞ্চি যেতে পারলেই তারা বেচে যেত!
“ধরা খেয়ে গেছি!” হতাশায় গুঙ্গিয়ে ওঠে এনরিকসন। “মাত্র তিন ইঞ্চির জন্য ধরা খেয়ে গেছি। বাস্তবতা থেকে মাত্র তিন ইঞ্চি দূরে। লক্ষ মাইলের থেকে কোন অংশে কম?”
মিলারের শরীর এলিয়ে পড়তে চায়। তার হতাশা আর মানসিক চাপ এমন একটা পর্যায়ে পৌছে গেছে যে সে আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না। মেজর তার গালে নাক ঘষলে সে আনমনে তার গলায় হাত বাড়িয়ে আদর করতে থাকে।"তাহলে আমরা হেরে গেলাম" মিলার বিড়বিড় করে। "পৃথিবীতে আর একটাও সরানো যাবে এমন ধাতু নেই।" মেজর তার শরীর মিলারের সাথে ঘষতে থাকে আর মৃদু ধাক্কাতে থাকে। রেগে থাকা ডাক্তার তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
"ভাগ এখান থেকে" সে চিৎকার করে ওঠে।" আমার ভাল লাগছে না..."
হঠাৎ তার চোখ বড় বড় হয়ে যায় যখন সে তার হাতে একটি উষ্ণ ধাতুর স্পর্শ পায়। সে চিৎকার করে ওঠে "পেয়ে গেছি। তারের শেষ অংশ- মেজরের কলারের নামফলক!"
মুহূর্তেই সে কুকুরটার গলার কলার থেকে ধাতু খন্ডটা খুলে আনলো। এরিকসন তার হাত থেকে সেটি নিল। তার কপালে ঘাম চিকচিক করছে। এরপর সে ধাতু খন্ডটি দিয়ে তারাটির সম্পুর্ণ করলো।
"হয়ে গেছে" এরিকসন চেঁচিয়ে উঠে। " আমাদের যাত্রা শুরু ডেভ। আমি জানি না কোথায়। হয় মৃত্যু না হয় জীবন। কিন্তু আমরা যাচ্ছি! "
ধাতুটি জায়গায় আটকে গেল। তার দিয়ে শক্তি বয়ে চলল। ট্রান্সফরমারগুলোর শুরু হলো। সেই গুঞ্জন বাড়তে
থাকে। তাদের মাথার উপরের তামার গ্লোবটা মৃদু সুর তুলে সবুজ আলোয় জ্বলে উঠে। ডেভ মিলারের নিজেকে খুব হালকা মনে হয়। ঘুম জড়িয়ে আসে আর তার চেতনা থেকে এরিকসন, মেজর, আর ল্যাব মুছে যেতে থাকে।
তারপর একটা বিরতি যখন তার কাছে মনে হয় সে স্বপ্নের মাঝে কান্নার আওয়াজ শুনছে। সেই আওয়াজ এবং আধার তাকে নরম ভেলভেটের মত জড়িয়ে রাখলো। তখন মিলার চোখ খুলে তার পরিচিত রান্নাঘরের দেয়াল দেখতে পেল।
কেউ একজন কেদে উঠলো।" ডেভ! ডেভ!"
এটা ছিলো হেলেনের গলা এবং এটা ছিল হেলেন যে মিলারের মাথা কোলে তুলে নিয়েছিল এবং তার মুখ মিলারের মুখের কাছে নিয়ে এসেছিল।
" ও খোদা, তুমি বেচেঁ আছো....!"
"হেলেন" মিলার গুঙিয়ে উঠলো। "তুমি... এখানে.. কি..করছো?"
"আমি এটা করতে পারি নি। আমি...আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি নি। আমি ফিরে আসি এবং .... আর গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে দৌড়ে ভিতরে আসি। ডাক্তার এখনি চলে আসবে। আমি পাঁচ মিনিট আগে তাকে ফোন দিয়েছি।
"পাঁচ মিনিট... আমি নিজেকে গুলি করেছি কতক্ষণ হলো?"
"ওহ্, ছয়-সাত মিনিট। আমি সাথে সাথে ডাক্তারকে ফোন দিয়েছি।"
মিলার জোরে শ্বাস নিল। তাহলে এটা স্বপ্ন ছিল। পাঁচ মিনিটে এত কিছু হয়ে গেছে!..... এটা অসম্ভব?" "কিভাবে... কিভাবে আমি এই সহজ কাজটা করতে পারলাম না? মিলার আপন মনে বলে। " আমি এতটা মাতাল ছিলাম না যে গুলিটা পুরোপুরি মিস করবো।"
হেলেন বড় রিভলবারটার দিকে তাকালো যেটা পাশেই পড়ে ছিল।
"আচ্ছা, দাদার ওই পুরানো ফার্টিলাইজার ফাইভের কথা বলছো! গৃহযুদ্ধের পর ওটা আর ব্যবহৃত হয়নি। মনে হয় পাউডারটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বা অন্যকিছু। বিস্ফোরিত হওয়ার বদলে ওটা শুধু শব্দই করে। ডেভ, কথা দাও তুমি আর কখনোই এমন করবে না আর আমিও কখনো তোমাকে বকবো না, ঠিক আছে?"
ডেভ মিলার তার চোখ বন্ধ করল। "আর বকা লাগবে না,হেলেন। কিছু মানুষ অনেক শিক্ষা গ্রহণ করে কিন্তু আমি আমার শিক্ষা পেয়েছি। যে দোকানটিকে এতদিন অবহেলা করেছি সেটা নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। তুমি জান আমি এখন বেচেঁ থাকার প্রেরণা পাচ্ছি যা আগে পাই নি। আমরা সফল হব, তাই না?'
হেলেন তার বুকে মুখ লুকালো আর কেঁদে উঠল। তার কথা শোনার মত ছিল না কিন্তু ডেভ মিলার তা বুঝে নিল।
* * * * *
সে পুরো ঘটনাটি স্বপ্ন ভেবেছিল--জন এরিকসন, টাইম ইম্পালসার, এবং মেজর। কিন্তু সেদিনের সন্ধ্যার কাগজে সে এমন কিছু পড়ল যা তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল এবং তা বহুদিনের জন্য।
গবেষণাগারে বিজ্ঞানীর রহস্যজনক মৃত্যু: তদন্তে পুলিশ
ওয়ানামেকার ইন্সটিটিউটের পরিচালক মি. জন এরিকসন আজ সকালে তার কর্মস্থলে মারা গিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এরিকসন তার "time lapse" তত্ত্বের জন্য আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মহলে সমাদৃত ও প্রশংসিত হন।
দুটি রহস্য তার মৃত্যুকে ঘিরে আছে। যার মধ্যে একটি হল ল্যাবে পাওয়া একটি জার্মান শেফার্ড যেটির মাথা ভারী কোনকিছু দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অপরটি হল একটি লম্বা ছোট ছোট ধাতব বস্তুর শিকল যা ঘরের এক কোণা থেকে অন্য কোণায় গিয়ে থেমেছে। দেখে মনে হবে এটা একটা সার্কিটের তার। কিন্তু পুলিশ এই ধারণা বাদ দিয়েছে কারণ তার শরীরের পাশেই একগাদা তার পড়ে ছিল।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন