|
তাহসিনুল ইসলাম
|
|
টিউটর (গল্প)
25 February 2015, Wednesday
সামির হাঁটছে তো হাঁটছেই কিন্তু লাকি হোটেল কোথাও চোখে পড়ছে না। রাহাত বলেছিলো কাঁঠালবাগান বাজার মসজিদ থেকে একটু এগোলেই ছোট ছিমছাম একটা হোটেল। কিন্তু কই সে তো অনেক দূর হেটে এলো? এদিকে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে টুপটাপ। সামির কোথাও দাঁড়ায় না আড়ালে। বৃষ্টির পরশ শরীরে মেখেই সে হাঁটতে থাকে একমনে। বৃষ্টির একটা আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। বৃষ্টির ফোঁটা শরীর ভেদ করে প্রাণপাত্রে গিয়ে পৌছতে পারে। এজন্যই বৃষ্টিতে ভিজলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু সামির এখন প্রাণ জুড়ানোর জন্য বৃষ্টিতে ভিজছে না। লাকি হোটেলের সামনে এক ভদ্রলোকের দাঁড়িয়ে থাকার কথা। এই মুহূর্তে লাকি হোটেল খুঁজে পাওয়াটা অত্যাবশ্যক। মানুষটি নিজেই ফোন দিয়েছিলো কয়েকবার। এবার মনে হয় টিউশনিটা হবে ওর।
ঢাকা শহরের টিউশনি হীরার হরিণের মতো। গত কয়েক মাস থেকে সামির বেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোথাও মিলছে না। বন্ধুদের প্রায় সবাইকে বলে রেখেছে। সে নিজেও ‘পড়াতে চাই’ বিজ্ঞাপন লিখে বেশ কয়েকটা ব্যস্ত দেয়ালে লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। সাড়া যে একদম মেলেনি এমন কিন্তু না। এক বিকেলে রবীন্দ্র সরোবরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো সে। এমন সময় একটা ফোন এলো। ভারী বয়স্ক কণ্ঠ, হ্যালো, আপনি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন?
সামির বেশ ভদ্র নরম কণ্ঠে বলে, জী হ্যাঁ।
মানুষটির কণ্ঠ গম্ভীর, আপনি এর আগে কাউকে পড়িয়েছিলেন?
সামির দৃঢ়ভাবে উত্তর দেয়, জী হ্যাঁ। ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক মেয়েকে পড়িয়েছিলাম। সামির নিজের উত্তরে নিজেই যেনো বেশ অবাক হয়ে যায়। এতো বলিষ্ঠ মিথ্যা কি স্বাভাবিকভাবেই না সে বলে ফেললো। জী হ্যাঁ পর্যন্ত বললেই তো চুকিয়ে যেতো, ভিকারুন্নিসা বলার কি দরকার ছিলো। পরক্ষনেই ভাবে না ভিকারুন্নিসা বলাতে উত্তরটা শক্তিশালী হয়েছে। শুধু জী হ্যাঁ বললে মানুষটির মনে একটু সন্দেহ থেকেই যেতো হয়তো। নির্দিষ্ট করে বলায় মানুষটি এখন সন্দেহ করতে একটু সংকোচ বোধ করবে। মিথ্যা তো মিথ্যাই। মিথ্যা যদি বলতেই হয় তাহলে নড়বড়ে না হয়ে একটু টগবগে হওয়াটাই তো শ্রেয়।
মানুষটি সামিরের কাছে আর বিশেষ কিছু জানতে চায় না। সরাসরি দেখা করতে বলে ওকে। সামির বন্ধুদের কাছে বিদায় নিয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে হরিণ ধরতে। ওর সারা শরীরের শিরায় শিরায় একটা অন্যরকম শিহরণ খেলে যায়। একটা টিউশনি খুব দরকার ওর। সত্যি কি টিউশনিটা আজকে হবে? সে ভাবতে থাকে মনে মনে। কি ঠিকানা বলেছিলো মানুষটি? ও হ্যাঁ, ভূতের গলি। আল হেরা মসজিদের সামনে। আল হেরা মসজিদটা কোথায়? সামির ঘোরের মধ্যে হাঁটতে থাকে। জিঞ্জিয়ান রেস্তোরার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সেই রাস্তা নিঃশেষ করে গ্রিন হাসপাতালের পেছনের ভূতের গলিতে ঢোকে সে। দুই একজন দোকান মালিকের কাছে বেশ বিনয়ের ভঙ্গিতে আল হেরা মসজিদের অবস্থানটা জানতে চায়। মসজিদটা খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হয় না ওর। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন দেয় কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে। এক বার, দুই বার, তিন বার কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন সাড়া মেলে না। কিছু সময় পর একজন শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত মানুষ ওর কাছে এসে দাঁড়ায় সহাস্যে। দু’জন পরিচয় দেয় পরস্পরের। সামির খুব সহজেই একটা বিনয়ের বেশ নিয়ে নেয়। কিন্তু মানুষটির কণ্ঠে অপরাধীর সুর, আপনি চলে এসেছেন। আমি এইমাত্র আপনাকে ফোন দিতাম। আপনার ফোন দেখে ভাবলাম আপনি হয়তো এসে পড়েছেন। তাইতো ফোন না দিয়ে নেমে এলাম। আমার মেয়েতো স্কুলে ছিলো। এইমাত্র স্কুল থেকে এসেছে সে। আপনার কথা জানালাম। কিন্তু সে বললো তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে না-কি তাদের স্কুলের এক শিক্ষকের সাথে ইতোমধ্যে কথা বলে ফেলেছে। আগামীকাল থেকে তারা সেই শিক্ষকের কাছেই পড়বে। ইয়াং ম্যান আমি খুব দুঃখিত। আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম। কিছু মনে করবেন না।
তপ্ত মরুভূমিতে মরীচিকার পেছনে ছুটতে থাকা ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত মুসাফিরের কাছে যদি কেউ জল এনে সেটা তাকে না দিয়ে বালুকারাশিতে ফেলে দেয়, তাহলে সেই মুসাফিরের যেমন কষ্ট হবে ঠিক তেমন একটা কষ্ট সেদিন সামির অনুভব করেছিলো। হাতের কাছে এসে কিভাবে ফসকে গেলো। সারাটা পথ সেদিন আফসোস করতে করতে ফিরেছে সে। ধূর্ত শিয়াল তো আঙ্গুর ফলের একটা দোষ বের করেছিলো। আঙ্গুর ফল টক। কিন্তু সামির মনকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোন অজুহাত সেদিন খুঁজে পায়নি।
এরপর বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। সামির টিউশনি খোঁজার চেষ্টা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে একপ্রকার। বিজ্ঞাপনগুলো দুই তিন দিনের বেশি দেয়ালের গায়ে থাকে না। কেউ ছিঁড়ে ফেলে অথবা অন্য বিজ্ঞাপনের চাপে হারিয়ে যায়। সামির কয়েক সপ্তাহ বেশ লাগিয়েছে নিয়মিত কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় শেষমেশ বিজ্ঞাপন প্রলেপন থেকে অব্যাহতি নিয়েছে।
টিউশনি-ভাবনা-ভারটা সামিরের মস্তিষ্কে গড়াগড়ি করার পর এভাবেই পরাবাস্তবতার চাপে একদিন চুপসে যায়। টিউশনি যে তার হবে না সেটা সে বুঝেছে নিশ্চিত। এমন আশাহীন দিনে ক্লাসের ফাঁকে আজ সকাল বেলা রাহাত তাকে এই কাঁঠালবাগান টিউশনিটার কথা জানায়। রাহাত তখনি ফোনে মানুষটির সাথে সামিরকে আলাপ করিয়ে দেয়। মানুষটি রাহাতের বেশ পরিচিত। কাঁঠালবাগান বাজারে মানুষটির একটা বড়সড় মুদির দোকান আছে। রাহাত নিজেও কাঁঠালবাগানে থাকে। কেনাকাটার সুবাদে মানুষটির সাথে তার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে গেছে। রাহাতকে তিনি নিজেই একজন টিউটরের খোঁজ দিতে বলেছেন। ক্লাস শেষে সামিরকে সাথে নিয়ে রাহাত নিজেই আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর বড় বোন থাকে মিরপুরে। কয়েক দিন থেকেই বেশ অসুস্থ। হঠাৎ বোনের ফোন আসায় ক্লাস শেষে সে বোনের বাড়িতে যায় মিরপুরে।
আপনি যে জিনিসটা খুঁজবেন সেই জিনিসটা সহজে পাওয়া যাবে না। এটা চিরন্তন সত্য। যেমন ধরুন আপনি সদ্য বিবাহ করেছেন। মাসের শেষে যে বেতন পান তাতে পকেট ফুলে ওঠে না। একটা সাবলেটে থাকবেন এমন বাড়ি খুঁজছেন। আপনার বন্ধু আপনাকে একটা বাড়ির ঠিকানা দিলো। রোড নং-২; বাড়ি নং-১৯, স্ত্রীবাগ। আপনি স্ত্রীবাগে গিয়ে দেখবেন ১৯ নাম্বার বাড়ি আপনাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাচ্ছে। স্ত্রীবাগে ২৩, ২৪, ১৫, ১৬ সব নাম্বারের বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ওই ১৯ নাম্বার বাড়িটা মিলছে না সহজে। সামিরের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক এমন। লাকি হোটেল ওর চোখে ধরা দেয় না। সে অস্থির ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকায়। বৃষ্টিতে চোখের পাতা ভিজে দৃষ্টিও কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে। সামিরের তাড়া থাকলেও বৃষ্টির কিন্তু খুব একটা তাড়া নেই। সে হেলেদুলে নামতে থাকে রিমঝিমা ঝিম নৃত্য তুলে। অস্থিরতার ভাবটা কেটে ওঠার জন্য সামির বৃষ্টির ছন্দে তাল মিলিয়ে গান গেয়ে ওঠে গুনগুনিয়ে-
‘এমন দিনে তারে বলা যায়।
এমন ঘনঘোর বরিষায়...’
আচ্ছা রবী ঠাকুর নিভৃত নির্জনে বসে কার কাছে কী বলতে চেয়েছেন? তিনি কি তাঁর প্রিয়ার কাছে মনের কথা খুলে বলতে চেয়েছেন? ‘সখী বিশ্বাস করো, এই ঝরঝর বৃষ্টিধারার নির্মলতা যেমন সত্য তেমনি আমার ভালোবাসা সত্য। একবার হৃদয়ে হৃদয় রেখে দেখো। তোমার হৃদয়কে আমার হৃদয়ের হৃদয় বানিয়ে নেবো। একবার মন ছুঁয়ে দেখো মনে। ভালোবাসার মোড়ক সাজিয়ে সেখানে তোমার মনটা রেখে দেবো সযত্নে। কষ্টের অণুরা পর্যন্ত সাহস পাবে না তোমার মনকে স্পর্শ করতে।’ না, গুরুজী এভাবে বলেন নি নিশ্চয়। তিনি যাই বলুন এই মুহূর্তে গানটা গাওয়া মোটেও ঠিক হচ্ছে না। এখন তো দিন না। দিনের শেষ রক্তিম আবির রেখা আসন্ন সন্ধ্যার শরীরে বিজড়িত হয়ে গোধূলির রূপ নিয়েছে। তাছাড়া এখন বৃষ্টিও নামছে না শ্রাবণ-ধারায়। বৃষ্টি বড়ই অলস।
এমন বৃষ্টি সহজে থামতে চায় না। সামির প্রায় অর্ধকাকভেজা। এভাবে দেখা করলে মানুষটি কি ভাববে? যাই ভাবুক রাহাত যেহেতু বলে দিয়েছে কাজেই এই টিউশনিটা হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কিন্তু মানুষটি কি এই বৃষ্টিতে লাকি হোটেলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে? সমস্যা নেই বাড়ির ঠিকানা সে জেনে নিয়েছে। লাকি হোটেলের সামনে দিয়ে যে গলিটা চলে গেছে সেই গলিটা দিয়ে একটু এগোলেই হাতের ডান দিকের যে বাড়িটা সেটাই। ১৫০/১।
সামিরের মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে হঠাৎ। রিংটোনে নচিকেতার গান-
ভিড় করে ইমারত আকাশটা ঢেকে দিয়ে
চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনারোদ
ছোট ছোট শিশুদের শৈশব চুরি করে
গ্রন্থকীটের দল বানায় নির্বোধ
এরপর চুরি গেলে বাবুদের ব্রিফকেস
অথবা গৃহিণীদের সোনার নেকলেস
সকলে সমস্বরে একরাশ ঘৃণা ভরে
চিৎকার করে বলে, চোর চোর চোর...
সামির ফোন রিসিভ করে না। লাকি হোটেল খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত ফোন রিসিভ করা ঠিক হবে না। নচিকেতার কণ্ঠ থেমে যায়।
ভবনের আড়াল থেকে, রিক্সার ফোঁকর থেকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু উৎসুক নারীদৃষ্টি ওর ভেজা শরীর বেঁয়ে চলে যেতে থাকে চকিতে। ওকে বৃষ্টিতে বীরদর্পে হাঁটতে দেখে দুটি ছেলে আড়াল ভেঙ্গে বৃষ্টিতে নেমে পড়ে রাস্তায়। বৃষ্টিতে নেমেই পেছন ফিরে তাকায় দুজনে এক ঝলক। ছেলে দুটি যে সামিরকে অনুসরণ করেই বৃষ্টিকে বরণ করে নিয়েছে এই কথাটি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ওদের পাশে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো সুদর্শনা। এভাবে একটি ছেলে নাকের ডগা দিয়ে বৃষ্টির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে হেটে গেলে সুন্দরী মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ লজ্জাজনক। সামিরকে দেখে মেয়েটির অধরে কি অদ্ভুত এক চিলতে হাসিই না খেলে গেলো। সে হাসিতে একইসাথে মুগ্ধতা আর কটাক্ষের সংমিশ্রণ। সামির না, সেই হাসিই ওদের বৃষ্টিতে নামিয়েছে নিশ্চিত। বৃষ্টির বাণ যে সেই হাসির শেলের চেয়ে খুব একটা ধারালো হবে না সেটা ছেলে দুটি বুঝেছিলো। তবে ছেলে দুটি মেয়েটির কটাক্ষের শোধ নেয়ার জন্য বৃষ্টিতে যে নামে নি একথা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যায়। ওরা শুধু মেয়েটির হাসির সেই মুগ্ধ অংশটুকুর উপলক্ষ হতে চেয়েছিলো মাত্র। এজন্যই বৃষ্টিতে নেমে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছিলো মেয়েটির অধর পল্লবে। শুধু কটাক্ষের বিপরীতেই যদি নামতো তাহলে পেছন ফিরে না তাকিয়ে দম্ভভরে চলে যেতো অগ্রে। মেয়েটিও তাই হেসেছিলো আবার। সে হাসি ছিলো পূর্বের চেয়েও মুগ্ধকর ও প্রশস্ত।
নচিকেতা আবার গেয়ে ওঠে সামিরের পকেটে। সামির এবার নচিকেতার কণ্ঠ রুদ্ধ করে কৃত্রিম স্বরে হ্যালো বলে সালাম দেয়। ওদিক থেকে মানুষটি সালামের উত্তর না দিয়ে সরাসরি বলে, আপনি কি আসছেন আজকে? সামির বেশ উদগ্রীব কণ্ঠে বলে, জী আমি ইতোমধ্যে লাকি হোটেলের সামনে চলে এসেছি। মানুষটির কণ্ঠে অনুনয়ের সুর, একটু কষ্ট করে চলে আসেন না বাড়িতে?
না এবার সামির মিথ্যা বলেনি। সত্যি লাকি হোটেল শেষমেশ পেয়ে গেছে সে। মানুষটির ফোন আসায় সে দাঁড়িয়ে যায় স্থির। ঠিক তখনি লাকি হোটেল ওর চোখে ধরা দেয়। দুই কদম দূরে ডানে। সে লাকি হোটেলে মনোযোগ না দিয়ে বামদিকের গলিতে ঢুকে পড়ে দ্রুত। বেশি দূর হাঁটতে হয় না ওকে। লাল রঙের বিল্ডিঙটা কাছে চলে আসে। পকেট থেকে রুমাল বের করে মাথা মুছে নেয় সে তড়িঘড়ি। এরপর সিঁড়ি বেয়ে ওঠে তৃতীয় তলায়। কলিং বেলে চাপ দিতেই দরজা খুলে যায় দ্রুত। যেনো কেউ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো কান পেতে ওর অপেক্ষায়। টুপটাপ বৃষ্টিতে ভিজতেছিলো সামির এতোক্ষণ। এবার ঝম-ঝমা-ঝম বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায় ওকে মুহূর্তেই। কি অপরূপ রূপ প্রতিমা। যেন রবি ঠাকুরের কোন কবিতা মানুষী মূর্তি নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সামির এমনটা আশা করেনি। সে ভেবেছিলো দরজা খুললেই হয়তো সেই মানুষটির মুখোমুখি হবে। তাই মনে মনে মানুষটিকে সালাম প্রদানের একটা অমায়িক ভঙ্গিও সে ঠিক করে রেখেছে। যাতে প্রথম দর্শনেই মানুষটির ভাবনায় ওর একটা ভদ্রভাবমূর্তি রেখাপাত করে। কিন্তু একি? এতো স্বয়ং সুন্দর এসে দ্বারে দাঁড়িয়েছে। সামিরের বৃষ্টিমাখা শরীর দেখে মেয়েটির অধরে মৃদু হাসির একটা বিদ্যুৎরেখা খেলে যায় চকিতে। সামির দরজা ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিলো। কাজেই সেই ভুবনভোলান হাসির তড়িৎ বিতাড়িত হওয়ার কোন জায়গা না পেয়ে সরাসরি সামিরের বুকের ভেতর গিয়ে আঘাত হানে সজোরে। সামির শিহরিত হয়ে উঠে। অদ্ভুত এক শিহরন। সে শিহরন শরীরে না কম্পন লাগায় ওর হৃদয়ে।
মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে গেছে তৎক্ষণাৎ। সামির ড্রয়িং রুমে বসে আছে একা। মেয়েটি দরজা খুলে ক্ষীণ মাথা দুলিয়ে শুধু বলেছে, আসুন। এরপর ও যখন ভেতরে এসেছে তখন হাতের ইশারায় সোফা দেখিয়ে বলেছে, বসুন। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর এই ‘আসুন’ এবং ‘বসুন’ শব্দ দুটি সামিরের একলা পিরামিড মনের পঞ্চদেয়ালে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। মনে মনে ভাবে, মেয়েটি বড়ই বাক্য কৃপণা। সেতো ‘আসুন’ ‘বসুন’ এর আগে পিছে আরো কিছু লেজ লাগাতে পারতো। এভাবে বলতে পারতো, আপনি এসে পড়েছেন? ভেতরে আসুন। বৃষ্টিতে ভিজে তো একাকার হয়ে গেছেন। বসুন, আমি আপনার জন্য তোয়ালে নিয়ে আসছি।
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে বেশ কিছু সময় মুছে দিয়ে যায়। সামির জড়সড় হয়ে বসে আছে কেমন অসহায়। আচ্ছা মেয়েটি কি এখন আড়াল থেকে দেখছে ওকে লুকিয়ে? কি জানি দেখতে পারে? মানুষটি এখনও আসছে না কেনো? হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠে। মেয়েটি আবার আসে ছুটে। দরজা খুলে দিয়েই আবার ছুটে পালায়। মধ্যবয়সী মোটা একজন মানুষ তড়িঘড়ি ভেতরে ঢুকে ওকে দেখে মৃদু হাসে একটু। এতোক্ষণ তাহলে বাড়িতে ছিলো না মানুষটি। মানুষটি যে দোকানে থাকতে পারে সেকথা সামিরের ভাবনাতেই আসেনি।
শেষমেশ সামিরের টিউশনিটা হয়ে যায়। মানুষটি ওকে তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। ঠিক হয় সপ্তাহে তিনদিন করে পড়াবে সে। শনি-সোম-বুধ। সামির রাহাতকে মনে মনে ধন্যবাদ জানায়। রাহাত বেশ শক্তিশালী মাধ্যম। খুব সহজেই হয়ে গেলো টিউশনিটা। কথা শেষে স্যারের সাথে ছাত্রীর পরিচয় সাধনের জন্য মানুষটি উচ্চস্বরে মেয়েটিকে ডাকতে থাকে, অর্পিতা! অর্পিতা এদিকে এসো। মেয়েটির নাম তাহলে অর্পিতা। মানুষটির মুখ থেকে অর্পিতা নামটা বের হওয়া মাত্র সামির নামটা লুফে নিয়ে হৃদয় বক্ষে অর্পণ করে রাখে সযত্নে। কিন্তু সামিরের এই ভালোলাগার সুখ সুখ অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। কারণ, ওর সামনে যে মেয়েটি এসে দাঁড়ায় এ সেই আগের মেয়েটি নয়।
বৃষ্টির ক্লান্তিতে বর্ষণ থেমে গেছে। রাত্রির গায়ে লেগেছে একটা শান্ত থমথমে আঁধার প্রলেপ। সামির ভাঙ্গা মন নিয়ে ফেরার পথ ধরে। টিউশনিটা এবার হারায় নি। তাই ফেরার পথটা হওয়ার কথা ছিলো আনন্দ-ভাবনা-পূর্ণ। কিন্তু এমনটা হয় না। আবার সেই আফসোস এসে খোঁচা দিতে থাকে সামিরের মনে, সংগোপনে। তবে এবারের আফসোসটা অপ্রাপ্তির না, অতৃপ্তির। মন যেন কিছুতেই তৃপ্ত হয় না। ইস, অর্পিতা যদি সেই মিতভাষিণী মেয়েটি হতো? মানুষটি বলেছে তাঁর দুই মেয়ে এক ছেলে। অর্পিতা সবার ছোট। মিতভাষিণী নিশ্চয় বড় হবে তাহলে। মানুষটি ছেলে মেয়েদের প্রসঙ্গ তুললো অথচ নাম বললো না? অদ্ভুত! কি নাম হতে পারে মেয়েটির?
বোনের নাম অর্পিতা। সেক্ষেত্রে মেয়েটির নাম হতে পারে অদিতি কিংবা অনন্যা নতুবা নন্দিতা। কিন্তু এতোগুলো নামতো আর একসাথে হৃদয়ে রাখা যায় না। তাহলে কি নামে ডাকবে সে মেয়েটিকে মনে মনে? অনন্যা? হ্যাঁ, অনন্যা অনুপযুক্ত না। মেয়েটির নাম যদি এটা নাও হয় তবুও এই অনন্যা নাম বিশেষণ মালা ওর গলায় পড়িয়ে দেয়া যায় নির্ভাবনায়।
সামিরের ছাত্রী অর্পিতাকেও অবহেলা করা যায় না। অর্পিতা অসুন্দর নয়। বেশ চটপটে আর বুদ্ধিমতী। তবে অঙ্কে বেশ কাঁচা। দশম শ্রেণিতে উঠেছে সবেমাত্র। কালোর ওপর অজস্র ক্ষুদ্র সাদা টিপ বসানো একটা টব পড়ে এসেছিলো সে। এসে বসেছিলো সামিরের মুখোমুখি। চুল ভেজা। সম্ভবত বৃষ্টিতে ভিজেছিলো ছাদে। হাত পায়ের আঙ্গুল মেহেদি রঙে নিমজ্জিত। খোলা পায়ের পীঠে সুন্দর মেহেদি রাঙ্গা চাঁদ আঁকা। হাতের তালুতেও ঠিক একই রকমের গোল মেহেদি চাঁদ। কথা বলার সময় যথাসম্ভব সে হাত উল্টিয়ে পাল্টিয়ে এবং পায়ের মেহেদি রাঙ্গা আঙ্গুল বাঁকিয়ে অকারণে মেঝের বুকে আলতো আঘাত করছিলো আনমনে। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট। তার সেই প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি। সামিরের দৃষ্টিতে সেই মেহেদি শোভার আভা গিয়ে লেগেছিলো ঠিকই। কিন্তু সেই আভায় সামিরের হৃদয় আলোড়িত হয়ে উঠার কোন সুযোগ পায়নি। কারণ, ওর হৃদয় শোভিতই ছিলো ক্ষণিক পূর্বে দরজায় দাঁড়ানো সেই মিতভাষিণী মেয়েটির মূর্তিতে। হৃদয়ে সেই বিমুগ্ধ মূর্তির স্পন্দন প্রাবল্যের আধিক্যে অর্পিতার মেহেদি মূর্তি কোন নতুন স্পন্দন জাগাতে পারেনি। যদি সেই মূর্তি দরজায় এসে না দাঁড়াতো তাহলে ব্যাপারটা হয়তো অন্যরকম হতো। অর্পিতা অপরূপ মূর্তি নিয়ে সামিরের দৃষ্টিতে প্রকাশিত হতো।
বেশ চলতে থাকে সামিরের টিউশনি। অর্পিতা সামিরে সন্তুষ্ট খুব। মানুষটি সামিরকে পথে একলা পেয়ে দাঁড় করায় একদিন। কথা বলে দীর্ঘ সময়। কথায় তাঁর কৃতজ্ঞতার সুর। অর্পিতার নাকি অংকভীতি কাটতে শুরু করেছে। সামিরের প্রশংসাও করে বেশ। এর আগেও দুই একজন টিউটর ছিলো কিন্তু সামিরের মতো এতো সুন্দর করে বুঝাতে পারতো না কেউ। অর্পিতা একদিন বলে, ইস স্যার আপনাকে যদি আমি আরও আগে পেতাম। ক্লাস নাইন থেকে যদি পেতাম, তাহলে এতোদিন অঙ্কের সাম্পান হয়ে যেতাম নিশ্চিত। সামির উত্তরে বলে, সময় আছে এখনও অনেক। এখন থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়ো সাম্পান না অঙ্কের স্পীডবোট হয়ে যেতে পারবে।
মিতভাষিণী মেয়েটির দর্শন এখন প্রায় মেলে সামিরের। সামিরের পড়ানোর সময় সন্ধ্যা ৭-৩০ মিনিট। অর্পিতা ক্লাস শেষে কোচিং করতে যায়। কোচিং থেকে ফিরে সামিরের কাছে বসে। সামির ইচ্ছে করেই অর্পিতা বাড়িতে ফেরার বেশ কিছু সময় আগেই চলে আসে। কলিং বেলে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করে অধীর আঁখিতে মিতভাষিণীকে দেখার আশে। অর্পিতা কোনদিন হঠাৎ কোচিং থেকে দ্রুত ফিরলে সামিরকে অবশ্য বেশ হতাশ হতে হয়। মিতভাষিণীর সম্ভাব্য নাম হিসেবে যে কয়েকটি নাম, অদিতি- অনন্যা-নন্দিতা সামির ভেবেছিলো এর কোনটাই কাজ দেয়নি। মিতভাষিণীর নাম, অতসী। সিটি কলেজে পড়ে। ইন্টারমিডিয়েট। দ্বিতীয় বর্ষ।
অধিকাংশ টিউটর যেমন ছাত্রীর সাথে প্রেম করাটাকে দায়িত্বপূর্ণ কাজ মনে করে তেমনি ছাত্রীরাও মনে করে টিউটরটি একান্তই তার সম্পত্তি। অর্পিতাও মনে মনে সেই দিনটার অপেক্ষায় আছে যেদিন সামির সেই কাঙ্ক্ষিত কথাটি বলবে। কিন্তু সামিরের আচরণে সেই ধরনের কোন উপসর্গ খুঁজে পায় না অর্পিতা। সামিরের চোখ আয়াতাকার টেবিলের চারিদিকেই আবদ্ধ থাকে সবসময়। অপ্রাসঙ্গিক কথার স্রোতে ভাসতে চায় না সে একদমেই। অকারণে কারণ বের করে সামিরকে কখনো ফোন দিলে কথা দীর্ঘায়িত করতে চায় না মোটেই। সামিরের এই উদাসীন দিকটাই অর্পিতাকে আরো বেশি মুগ্ধ করে।
সামির অর্পিতা দুজনের হৃদয়ই বইতে থাকে বিমুগ্ধতার বিপুল স্রোত। তবে এই স্রোত তাদের পরস্পরের দিকমুখী না বরং বিপরীতমুখী। অর্পিতা মুগ্ধ সামিরে। সামির মুগ্ধ অতসীতে। এই মুগ্ধতা ভালোলাগার। ভালোলাগার এই বিমুগ্ধকর জ্বরে হৃদয় যখন জর্জরিত হয় তখন একে যতোই প্রচ্ছন্ন রাখার প্রচেষ্টা করা হোক না কেনো তা নানা উপসর্গ অনুসর্গে প্রকট হয়ে উঠে স্বেচ্ছায়। সামির এবং অর্পিতার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই ঘটে।
সামিরের মোবাইলে অর্পিতার ফোন আসতে থাকে ঘন ঘন। পড়ার টেবিলে অর্পিতার অকারণ হাসির ব্যাপ্তি বেড়ে যায়। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের পরিমাণও বাড়তে থাকে লাগামহীনভাবে। কিন্তু সামিরের দিক থেকে তেমন কোন সাড়া পায় না সে। অর্পিতা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে। সামির বুঝেও না বুঝার ভান করছে কেনো? তাহলে কি সামির তাকে পছন্দ করে না? সেকি অন্য কাউকে ভালোবাসে? এদিকে সামিরের দৃষ্টিও টেবিল ছেড়ে দিন দিন অন্দরমহলের দিকে বেশি করে ধাবিত হতে থাকে। মৃদু হাসির শব্দে। পায়ের ক্ষীণ আওয়াজে সামিরের কর্ণ সচকিত হয়ে উঠতে থাকে। সামিরের এই অতসী দুর্বলতা অর্পিতার চোখে ধরা পড়ে ধীরে ধীরে। অন্তরজ্বালা অর্পিতাকে পোড়াতে থাকে বেশি যখন সে নিশ্চিত বুঝে সামির আর কেউ নয় তার বোনকেই পছন্দ করে।
অর্পিতার পড়ার টেবিলটা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্পিতা আগের মতো আর কথা বলে না অনর্গল। সামির ওর মুখোমুখি বসে থাকে। অথচ সেই দৃষ্টিতে সে নেই। সেই দৃষ্টি খোঁজে শুধু অতসীকে। সামিরের এই অতসী অধীরতা অর্পিতার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠে। সামির নিজেও বুঝতে পারে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। কিন্তু যে মানুষটির জন্য এই দুই প্রাণীর ভেতর একটা ঝড় বইতে থাকে ভেতরে ভেতরে সেই অতসীর কাছে ব্যাপারটা অজানাই রয়ে যায়।
সামিরের অনুমান ভুল হয়নি। সেদিন রাতেই ফোন আসে অর্পিতার বাবার। মানুষটির কণ্ঠে বিস্ময়, বাবা অর্পিতা বলছে তুমি না-কি আর পড়াতে পারবে না? সামির প্রথমে বেশ অবাক হয়। তারপর ছোট করে উত্তর দেয়, জী। মানুষটি উদগ্রীব কণ্ঠে বলে, কেনো পড়াবে না বাবা? তুমি পড়াতে ওর মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস এসেছে। তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকে খুলে বলো। তুমি যদি বলো তাহলে সামনের মাস থেকে তোমার স্যালারি আরও বাড়িয়ে দেই কিছু? সামির বলে, জী না আঙ্কেল আমি আসলে পড়াতে পারবো না।
মানুষটি আর কিছু বলেনি শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রেখে দিয়েছিলো। সামির ঠিক করে অতসীকে মনের কথা খুলে বলবে পরের দিনই। কিন্তু অতসীকে একলা পাবে কোথায়? মনে মনে ভাবে, সিটি কলেজে যাবে সে। কোথাও দাঁড়িয়ে থাকবে সেখানে আড়ালে। কলেজ শেষে অতসী যখন বাড়ির পথ ধরবে তখন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।
পরের দিন কলেজ ছুটির অনেক আগেই কলেজের কাছে পৌঁছে সে। অতসীর অপেক্ষায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে কলেজ গেটে। অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত কাটতে থাকে অসহ্য অস্থিরতায়। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হয় কলেজের ছুটিতে। কিন্তু অসংখ্য সফেদ পরিচ্ছদ পরিহিতার ভীরে অতসীকে খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর মনে হয়। সামিরের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় শেষমেশ। অতসীর পরিচিত মুখ ভেসে আসে দৃষ্টিতে। কিন্তু একি? অতসী উল্টো পথ ধরে কেনো? সামির ওকে অনুসরণ করে পিছু পিছু হাঁটতে থাকে দূরত্বে। অতসী একটা রিক্সা নেয়। সামিরও দ্রুত রিক্সা নিয়ে নেয়। রিক্সাওয়ালাকে বলে অতসীর রিক্সার পিছু নিতে। অতসীর রিক্সা গিয়ে দাঁড়ায় রাইফেল স্কয়ার মার্কেটের পাশে। রিক্সা বিদায় দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে অতসী। ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সাদা মোবাইল ফোন বের করে কানে ধরে। সামির দূর থেকে লক্ষ্য করে। অতসী লেকের ধারে ফুচকার দোকানগুলোতে যায়। সবুজ চেয়ার টেনে বসে পরিচিত হাতে। সামির ওর বেশ কাছে গিয়ে দাঁড়ায় পেছনে। অতসীর সাদা মোবাইল ফোন বেজে ওঠে যন্ত্রণায়। ফোন রিসিভ করে সে দ্রুত। বলে, আমি চলে এসেছি। তুমি কোথায়? সামিরের বুঝতে অসুবিধা হয় না। ওর ধমনীতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তৎক্ষণাৎ। কষ্টের কর্কশ ঝড় এসে শেকড় উপড়ে ফেলে হৃদয়ের। উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটতে থাকে সে ফেরার পথে।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন