|
মোঃ জুনায়েদ খান
|
|
ছোটগল্প: 'মেয়েটা' - ১
17 February 2015, Tuesday
(এক)
আচমকাই দেখা হয়েছিলো মেয়েটার সাথে। ডিম বিক্রেতার মতন দিবা স্বপ্নে বিভোর হয়ে হাঁটছিলাম। আর ক’দিন পর পড়াশুনা শেষ হবে। তারপর শুরু হবে চাকুরীর জন্য দৌড়ঝাঁপ! লটারীর টিকেটের মত আবেদন পত্র কিনেই যাব প্রতিদিন। “যদি লাইগা যায়!” এর আশায় শুরু হবে দিনগোণা। হুট করে হয়তো একদিন লেগেও যাবে। কাগজ ভর্তি মানি ব্যাগে টাকা ঢুকবে, বাড়ি হবে, গাড়ি হবে, তারপর সুন্দর একটা বউ... ...! না, বউ পর্যন্ত বোধহয় যাওয়া হয়নি। তার আগেই বাগড়া বাঁধায় মেয়েটা। বাঁশ ফাটা গলায় চিৎকার করে ওঠে! পেছন ফিরে তাকানোর আগেই দেখি ভার্সিটির নীল রঙয়ের বাসটা আমার ডান কাঁধের ইঞ্চি দুয়েক দূর দিয়ে সাঁই করে চলে গেল। কলিজাটা লাফ দিয়ে উঠে বুকের পাঁজরে ধাক্কা দিল কয়েকবার! ডানে বায়ে বারকয়েক তাকানোর পর নিজেকে যখন মাঝ রাস্তায় আবিষ্কার করলাম মেয়েটা ততক্ষণে আমার কাছাকাছি চলে এসেছে।
“সুইসাইড করার খুব সখ হইছে না?”
কলিজার কাঁপন তখনো থামেনি। জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। মুখ যেন আমার সুপার গ্লুতে আটকানো। কথা বেরুলো না।
“এই যে জনাব! কান দিয়ে কিছু ঢুকেছে?”
আমি এবার সরাসরি মেয়েটার দিকে তাকালাম। কিছুক্ষণ আগে সমূহ দূর্ঘটনার ভয় এখনো সে কাঁটিয়ে উঠতে পারেনি। এক জোড়া ভয়ার্ত চোখে কৌতূহলী প্রশ্ন। আমি ওর ডাগর কালো চোখ জোড়ার ভিতরে ঢুকে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেতে লাগলাম। “আমার কি সত্যিই সুইসাইড করার সখ হয়েছে?”
ছোট বেলায় অনেক কিছুরই সখ ছিলো। একবার দুই টাকার পয়সার ভূত মাথায় চেপেছিলো। যেখানেই দুইটাকা পয়সা পেতাম যেকোন মূল্যে হস্তগত করতাম। মাঝে মধ্যে দ্বিগুণ মূল্য দিয়েও কিনতাম সে পয়সা! বয়স বাড়ার সাথে সাথে সখগুলো লেজ গুটিয়ে নেড়ি কুত্তার মত পালিয়ে গেছে। বহুকাল পরে সেই পালিয়ে যাওয়া সখ আবার হুট করে উদয় হলো কোত্থেকে? তাও আবার যেন তেন সখ না, সুইসাইড করার সখ!
অবাকমাখা কন্ঠে একটু জোরেই বলে ফেললাম, - “নাতো!”
“কি নাতো? শুনতে পাননি? স্বাভাবিক! বাসের হর্ন যার কানে ঢোকে না তার থেকে এর চেয়ে বেশী আশা করা যায় না” মেয়ের কন্ঠে তাচ্ছিল্যের আভাস।
অপরিচিত রমণীর উদ্বেগমাখা কণ্ঠে আলাপচারিতায় খারাপ লাগছিলো না। কথা চালিয়ে গেলাম...
- স্বার্থপর এ পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কি লাভ বলুন?
- লাভ নেই। যান এক্ষুণি বাসের নিচে চাপা পরে মরেন গিয়ে!
- যেতেই তো চেয়েছিলাম। থামালেন কেন?
- আপনার মত স্বার্থপরদের জন্যই পৃথিবী স্বার্থপর। যারা বেঁচে থাকতেও লাভ খোঁজে, মরার মাঝেও লাভ খোঁজে।
- কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে...
- ও... আপনাকে বুঝি সাপে কেটেছে? কই দেখি দেখি...
- আমি ফাইজলামি করছি না। সবাই যদি সবার ইমোশন বুঝতো তবে তো হতই...
- সরি। আপনাকে হার্ট করার আমার কোন ইনটেনশন নেই।
- তবুও তো করছেন! পৃথিবীটা সবার জন্য সুখস্বর্গ নয়...
- তাই বলে সুইসাইড করবেন? কত লোক না খেয়ে রাস্তার পাশে পরে আছে, কত ছোট ছোট বাচ্চা পেটের দায়ে রিক্সার প্যাডেলে পা দিচ্ছে সে খবর আপনি রাখেন? কই তারা তো কষ্টের দোহাই দিয়ে সুইসাইড করছে না! আরে সুইসাইড তো কাপুরুষরা করে!...
- গ্রেট স্পিস! অনেকগুলো হাততালি আপনার জন্য! আচ্ছা আপনাকে কে বলল আমি সুইসাইড করবো?
- মানে??
- কিছু না। তুমি মেয়েটা অনেক কেয়ারিং। সংসার জীবনে শাইন করবে! আর বাঁশ ফাটা কণ্ঠে সুমিষ্ট চিৎকারের জন্য ধন্যবাদ!
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। কটমট দৃষ্টিতে আমার দিকে একবার তাকিয়ে হনহন করে চলে গিয়েছিল। একবারের জন্যও ফিরে তাকায়নি।
(চলবে)
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন