|
হাতপা
|
|
ছোটগল্পঃ চোখেররোগ
14 February 2015, Saturday
নোমানের একটি সমস্যা আছে,কথা বলবার সময় সে কারো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না।এমনি তো হয়ত পারে,কিন্তু যখন কথা বলবে তখন সরাসরি সে চোখের দিকে তাকায় না,তার ধারণা সরাসরি চোখের দিকে তাকালে কেউ তার মনের ভাব বুঝে ফেলবে।এমন না যে,তার মনে খারাপ বা নেগেটিভ কিছু রয়েছে।
এই দোষটা সরাসরি ধরে ফেলল তন্বী।
সরাসরি নোমান কে বলল- ‘কি ব্যাপার নোমান?তুমি কথা বলার সময় এদিক সেদিক তাকাও কেন?’
নোমান কিছুটা থতমত খেয়ে আবার হেসে ফেলল-‘কি জানি!এটা আমার আগের অভ্যাস’
‘না না,এটা একটা রোগ।খারাপ রোগ।তোমার কি ভয় লাগে?’
নোমান হেসে উড়িয়ে দেয়- ‘আরে না।কিসের ভয় ,ভয় লাগবে কেন আবার?আছে না,সবাই তো একরকম না,কেউ কেউ তো আলাদা হয়’-কথাগুলি বলবার সময় নোমান খেয়াল করল সে তন্বীর দিকে না তাকিয়ে ডানের দেয়ালে তাকিয়ে আছে।তৎক্ষনাৎ সে তার চোখের দৃষ্টি তন্বীর উপর ফিরিয়ে আনল,কিন্তু সে ধরা পড়ে গেছে।
‘দেখেছ?এটার ব্যাপারে খোঁজ লাগাচ্হি আমি দাঁড়াও।ট্রিটমেন্ট চাই।আচ্ছা থাকো।ফোনে কন্টাক্ট করব এসাইনমেন্টের ব্যাপারে।আমি যাচ্ছি’-বলে তন্বী একটা কৃত্রিম হাসি হেসে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে।
নোমান দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গাটাতেই।নাক দিয়ে গন্ধ নিচ্ছে,তন্বী দাঁড়িয়েছিল একটু আগে,ঐ জায়গার গন্ধটি এখনো বাতাসে ভেসে ভেসে আসছে।কি মাখে মেয়েটি?
তন্বীর চোখের দিকে না তাকানোর যুক্তি আছে নোমানের,মেয়েটি যদি টের পেয়ে যায় নোমানের মনের কথা।নোমান যে প্রায়ই ওর কথা ভাবে,এটা না জানি টের পেয়ে মেয়েটা হইচই শুরু করে দেয়,একে ক্লাসমেট,তায় মেয়েটা মুখরা। ইজ্জত নিয়ে টানাটানি হয়ে যাবে,ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে কাজ নেই।গন্ধটা নাকে আসছে সেই পর্যন্ত ই ভালো।
#####
‘আমি সত্যি বলছি ঐ মেয়েটির সাথে আর কোনদিন ফোনে কথা হয়নি,ঐ একবারই’-বলে তন্বী কী বলে তার অপেক্ষায় রইল নোমান।
‘আচ্ছা,আমি বিশ্বাস করলাম।কিন্তু,তোমার এই দোষ এখনো গেল না।কথাগুলো আমার দিকে তাকিয়ে বলতে অসুবিধা আছে?যারা চোখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলে,তাদের মনে কোন সমস্যা আছে’
তন্বীর কথাগুলো শুনে মনে মনে চিন্তিত হয়ে পড়ল নোমান।ছয় মাস হল ওদের সম্পর্ক।এর মাঝে তন্বীর সাথে শুধু গা ঘেঁষে বসাই হয়েছে।তন্বী সাফ সাফ বলে দিয়েছে বিয়ের আগে কোনকিছু নয়।এমনকি হাত টাও সহজে ধরতে দেয় না।বলেছে- ঐরকম কোন চিন্তা যদি মাথায় আসে,সরাসরি ব্রেকআপ। তন্বী স্ট্রেইটকাট মেয়ে।ওর কথার নড়চড় হয় না।
সেদিন কায়সার বলেছিল-‘জানিস,চুমু খেতে কি দারুণ।ও তুই তো জানবি,অনেকদিন ধরেই প্রেম করছিস’।কায়সারের প্রেম দুইমাসের।নোমান কিছু বলেনি,চুপ করে হেসেছিল।যার হ্যাঁ না কোন অর্থই হয়না।
তন্বীকে কত কি যে করতে ইচ্ছে হয় নোমানের।ওর সামনে এলে এখন সেই ভয়েই থাকে,তন্বী এই বুঝি টের পেয়ে যাবে ওর মনের ভাবনা।
####
‘কী ছাদে কবরী বাঁধি লব আজ ‘- বলতে বলতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল খোঁপা করছিল তন্বী।
বিছানায় ইতিমধ্যে রেডি হয়ে বসে আছে নোমান।
তন্বীর রেডি হওয়া দেখে মনে মনে বিরক্ত হল খুব।অফিস শেষ করে এসেছে।কালকে ছুটির দিন,তাও অফিস করতে হবে।মেজাজ একদম ভালো নেই,সেই মেজাজ ঘরে দেখানো যাবে না।তন্বীর কড়া নিষেধ।অফিসের মেজাজ অফিসে।কিন্তু,ঘরেও মেজাজ খারাপের যথেষ্ট কারণ আছে।তন্বীর লতায়পাতায় এক আত্নীয়ের মেয়ের বিয়ে।উপহার কিনতে যাওয়া চাই।
‘আচ্ছা,আমরা মনে হয় সস্তা কিছু না দিয়ে ডিনার সেটটাই কিনলে ভাল হবে।কী বল?’-গাড়ি করে যেতে যেতে তন্বী নোমানকে বলল।
‘তোমার যেটা ভাল লাগে’-তন্বীর চোখের দিকে না তাকিয়েই বলল নোমান।মনে মনে বিয়ের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছে ।
(সমাপ্ত)
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন