|
চিরতার রস
|
|
ঈশপের গল্পঃ আধুনিক ভার্সন- পর্ব ৩
28 January 2015, Wednesday
কাকের পানি পান
এক চৈত্রের দুপুরে একটি কাকের প্রচন্ড পানি পিপাসা পেল। কিন্তু এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজি করেও কোন জলাশয়ের সন্ধান পাওয়া গেলনা। তৃষ্ঞায় যেন বুকটা ফেটে যেতে চাইছে। হঠ্যাৎ করে একটা পানির কলস চোখে পড়লো কাকের। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা গেল কলসের তলানীতে কিছু পানি অবশিষ্ট আছে। অনেক ভেবে কি করবে বুঝতে না পেরে কাক তার স্মার্টফোনটি বের করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দাখিল করলো।
"কলসির তলায় একটু পানি রাখা আছে। পিপাসায় দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি। পানিটুকু খাওয়ার ভাল একটা উপায় কেউ জানাবেন কি?"
বুদ্ধিমতী ইন্দুর কমেন্ট করলো- "কলসিটা ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেই তো পানিটা বের হয়ে আসবে। তারপর খেয়ে নাও"
বুদ্ধিমতী ইন্দুরকে ট্যাগ করে মুখপোড়া হনুমান লিখলো- "তোর নাম বুদ্ধিমতী কে রাখছে রে ?! তোর নাম হওয়া উচিত ছিল মাথামোটা ইন্দুর। ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে তো সব পানি খাওয়ার আগেই মাটিতে শুকিয়ে যাবে। কাকতো বললো অল্প একটু পানি অবশিষ্ট আছে। ওর তো পুরোটা পানিই দরকার।"
বুদ্ধিমতি ইন্দুর রেগে গিয়ে রিপ্লাই করলো- "তুই তো মহা বুদ্ধিমান। তুই একটা ভাল বুদ্ধি দে তো দেখি।"
বুদ্ধিমতি ইন্দুর আর মুখপোড়া হনুমানের ক্যাচালে আরো অনেকে যোগ দিলো। কমেন্টটের সংখ্যা দু'শ ছাড়িয়ে গেল কিন্তু কেউ ভাল কোন উপায় বলতে পারলো না। বরং এটা নিয়ে মশকরা করা শুরু করতে লাগলো।
ঘরপোড়া গরু লিখলো- "এড মি। আয়াম বলক।"
স্টাইলিস খরগোস লিখলো- "মান্দাত্তা আমলের মতো একটা একটা কইরা পাথ্থর কলসিতে ফেল। ঘন্টা দুই পরে কলসি পাথ্থরে ভইরা যাইবো। আর তুই আরামে পানি খাইতে পারবি। তয় সন্দ লাগে, ঘন্টা দুই পরে তুই বাঁইচা থাকলেই হয় :পি "
সবার কমেন্ট পড়ার পরে কাক মন খারাপ করে এক বাক্যে একটা রিপ্লাই লিখলো- "তোরা আমার বন্ধু না, শত্রু।"
অবশেষে কাকের স্ট্যাটাসে পরিবেশ বন্ধু কমেন্ট করলো -
"কাক বন্ধু শুনো,
ভেবেনাকো যেন,
খুঁজে দেখ স্ট্র পাও কিনা পাশে।
লাগিয়ে তাতে ঠোঁট, টেনে নাও পানি শ্বাসে শ্বাসে।"
পরিবেশ বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাক একটি স্ট্র খুঁজে আনলো। স্ট্রটি কলসিতে ঢুকিয়ে আরাম করে পানিটুকু খেয়ে নিয়ে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলো।
পরিবেশ বন্ধুকে কাক রিপ্লাই করলো- "কুল আইডিয়া ম্যান।"
আধুনিক মোরালঃ বাঁচতে হলে ফেসবুক চালানো জানতে হবে।
কচ্ছপ ও খরগোস
একদা এক বনে এক খরগোস আর এক কচ্ছপ বাস করতো। যদিও তারা ভাল বন্ধু ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল ব্যাপক অমিল। কচ্ছপ ছিল খুব কর্মঠ এবং সময়নিষ্ঠ। কিন্তু খরগোস ছিল খুব আলসে এবং আরামপ্রিয়। দিনরাত বসে বসে শুধু ফেসবুকিং করতো। তার ফ্রেন্ডলিস্টে হাজার হাজার ফেন্ড/ফলোয়ার ছিল এবং সে নিজে কিছু জনপ্রিয় পেজের এডমিন ছিল। তাই ফেসবুক নিয়ে তার ব্যস্ততার অন্ত ছিলনা। তার এই অতিমাত্রার ফেসবুক আসক্তির কারণে কচ্ছপ তাকে সারা দিন বকাবকি করতো। আলসে আর অকর্ম বলে গাল দিত। কিন্তু এতে খরগোস কিছু মনে করতো না। কচ্ছপের কথা এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিত।
কিন্তু সেদিন কচ্ছপের উপর খরগোস ক্ষেপে না গিয়ে পারল না। মাত্র নায়লা নামে এক সুন্দরী খরগোসের সাথে চ্যাটে আলাপ জমে উঠেছিল। নায়লাও তার মত বড় মাপের একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি। হাজার হাজার খরগোস তার জন্য ফিদা। কিন্তু ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার পরেও তাকে আগে কোন দিন চ্যাটে নক করা হয়নি। শুধু তার স্ট্যাটাস আর ফটোতে রেগুলার লাইক কমেন্ট করা হতো। আজ খোদ নায়লাই তাকে নক করেছে। এটা কি যেনতেন ব্যাপার! কিন্তু বদমাইস কচ্ছপের কারণে খরগোসের মোডটাই গেল নষ্ট হয়ে।
কচ্ছপকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো-"তুমি তো নিজেকে খুব পরিশ্রমী আর চালাক মনে কর। কিন্তু তুমি একটা মূর্খ মাত্র। এক কিলোমিটার যেতে তোমার সারা দিন কাভার হয়ে যায়। হাহাহা। তারপরেও নিজেকে খুব বড় মনে করছো। আর আমার মত যদি গতিশীল আর দেখতে সুন্দর হতে তাহলে তো তোমার ধারের কাছেই যাওয়া যেত না।"
কচ্ছপ খরগোসকে বললো-"শুধু গতিশীল হলেই জয়ী হওয়া যায়না। সাথে একাগ্রতা আর কর্মদক্ষতাও প্রয়োজন।"
খরগোস ক্ষেপে গিয়ে বললো-"এসব কিতাবী ভাষা শুধু পাঠ্য বইয়েই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা হচ্ছে আমি গতিশীল আর তুমি স্লো ইডিয়ট। আমার সাথে রেস করলে তুমি প্রতিবারই হেরে যাবে। তোমার কিতাবী বিদ্যা তোমাকে জয়ী করতে পারবে না।"
কচ্ছপ বললো-"তাহলে একটা রেস হয়েই যাক না? দেখি কে জিতে কে হারে?"
খরগোজ বললো-"ঠিক আছে। শুধুমাত্র তোমার ধারণা ভুল প্রমাণ করার জন্যই আমি রেস করবো। আমি জয়ী হলে আর কোন দিন আমার ফেসবুকিং নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।"
কচ্ছপ বললো-"ঠিক আছে।"
শিয়াল পন্ডিতের তত্ত্বাবধানে লম্বা একটা রেসের আয়োজন করা হলো। বনের গণমান্য পশুদের আমন্ত্রণ জানানো হলো। খরগোস রেস নিয়ে ফেসবুকে একটা ইভেন্টও খুলে ফেললো। তাতে হাজার হাজার গোয়িং পড়লো। কচ্ছপের কান্ডজ্ঞান দেখে সবাই ফেসবুকে ব্যাপক মজা করলো। শত শত পোস্ট আসতে লাগলো রেসকে কেন্দ্র করে।
নির্ধারিত সময়ে রেস শুরু হলো। খরগোস আর কচ্ছপ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য দৌড় শুরু করলো। চোখের পলকেই খরগোস অনেক দূর পাড়ি দিয়ে ফেললেও কচ্ছপ হাটিহাটি পা পা করে বিরতিহীন ভাবে এগুতে লাগলো। রেস দেখতে আসা বানরগুলি কচ্ছপকে নানা ভাবে টিটকুনি কাটতে লাগলো। কচ্ছপকে কেউ কেউ উসাইন বোল্টোর সাথেও তুলনা করতে লাগলো। কিন্তু কচ্ছপ এসব সমালোচনায় কান না দিয়ে তার কাজ ঠিক মতো করে যেতে লাগলো।
ঐ দিকে খরগোস প্রায় অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়ে একটি গাছের নিচে গিয়ে আয়েস করে বসলো। চিন্তা করলো ফেসবুকে রেস সম্পর্কে কিছু লাইভ স্ট্যাটাস না দিলেই নয়। তার ভক্তরা নিশ্চয় তার স্ট্যাটাস আর ফটো দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। পকেট থেকে তার স্মার্টফোটটি বের করেই তার হাসিখুশি চেহারা নিয়ে একটা সেলফি তুলে ফেললো। এরপর সেটা ফেসবুকে আপলোড দিয়ে দিল। মুহুর্তেই হাজারো লাইক আর কমেন্ট আসতে লাগলো। কমেন্ট রিপ্লাই করতে করতে খরগোস এক রকম হিমশিম খেতে লাগলো। আর সুন্দরী খরগোসদের কমেন্টে রিপ্লাই না করলে তো ব্যাপারটা অসৌজন্যমূলক দেখায়। অনেকে খরগোসের জয়ী হওয়া উপলক্ষ্যে অগ্রিম পার্টি চেয়ে বসলো। খরগোসও সবাইকে খাওয়াবে বলে প্রমিস করলো। এভাবে বেশ কিছু সময় কেটে গেল ফেসবুকিং করতে করতে। যখন
খরগোসের ঘোর ভাঙলো ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। নিজের ভূল বুঝতে পেরে খরগোস দিল ভৌ দৌড়। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হলোনা। ততক্ষণে কচ্ছপ পৌচ্ছে গেছে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আর সময়ের কাজ সময়ে না করে ফেসবুকিং করার কারণে খরগোসকে ব্যাপক মূল্য দিতে হলো।
আধুনিক মোরালঃ অধিক পরিমানে ফেসবুক আসক্তি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন