|
আমি তুমি আমরা
|
|
অনুবাদ গল্পঃ♣♣কাহলিল জিবরানের চারটি গল্প♣♣
25 January 2015, Sunday
♣♣♣♣The Three Gifts♣♣♣♣
এক শহরে এক দয়ালু রাজকুমার ছিলেন।প্রজারা সবাই তাকে অত্যন্ত ভালবাসত আর শ্রদ্ধা করত।কিন্তু সেই শহরে এক দরিদ্র লোক বাস করত যে রাজকুমারকে অত্যন্ত অপছন্দ করত। রাজকুমার সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলে সে তাকে অপমান করার চেষ্টা করত।
রাজকুমার এই লোকটির কথা জানতেন, তবুও তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
রাজকুমার অনেকদিন ধরে লোকটির কথা ভাবলেন।অবশেষে এক শীতের রাতে লোকটির ঘরের দরজায় রাজকুমারের এক চাকর উপস্থিত হল। চাকরের সাথে ছিল এক বস্তা আটা, এক বস্তা চিনি আর এক ব্যাগ সাবান।
চাকর তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলল, অভিবাদন, আমাদের রাজকুমার এই উপহারগুলো আপনার জন্য পাঠিয়েছেন।এগুলো আপনি গ্রহন করুন।
চাকরের কথা শুনে লোকটা অত্যন্ত গর্বিত হয়ে উঠল। তার কাছে মনে হল রাজকুমার শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিয়েছে, তাই এই উপহার পাঠিয়ে তার সাথে সন্ধি করতে চাইছে।এই আনন্দে শেষ পর্যন্ত লোকটা গির্জার বিশপের কাছে সব জানিয়ে দম্ভসহকারে বলল, দেখেছ, তোমাদের রাজকুমার আমার প্রশংসা পাওয়ার জন্য কত উন্মুখ?
কিন্তু বিশপ খুশি মনে জবাব দিল, ওহ, কত জ্ঞানী আর মহান আমাদের রাজকুমার আর কি অল্প তোমার জ্ঞান! রাজকুমার মুখে নয়, বরং ইশারায় কথা বলেন। এই আটা তোমার খালি পেট ভরানোর জন্য, এই সাবান তোমার নোংরা মন পরিস্কার করবে আর এই চিনি তোমার মুখের মিষ্টতা ফিরিয়ে আনবে।
সেদিন থেকে লোকটা নিজের ক্ষুদ্রতা নিয়ে লজ্জিত থাকত। রাজকুমারের জন্য তার মনে ঘৃনা বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সে আরো বেশি ঘৃনা করত বিশপকে- যে তাকে তার ক্ষুদ্রতার কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু তার মুখ ছিল একদম বন্ধ।
♣♣♣♣Peace and War♣♣♣♣
তিনটি কুকুর সূর্যের দিকে তাকিয়ে চিতকার করছিল।প্রথম কুকুর স্বপ্নালু চোখে বলল, কুকুরের রাজত্বে বসবাস করাটা সত্যিই এক বিস্ময়।চিন্তা করে দেখ, কত সহজে আমরা সমুদ্রের মধ্য দিয়ে, মাটির ওপর দিয়ে, এমনকি আকাশের বুক চিড়ে ঘুরে বেড়াই। ভেবে দেখ, আমাদের বিনোদনের জন্য নিত্যনতুন কত আবিষ্কার হচ্ছে।
দ্বিতীয় কুকুর বলে উঠল, শিল্পকলায় আমাদের কতটা ঝোঁক দেখ। পূর্বপুরুষদের চেয়ে কত চমতকার ছন্দে আমরা চাঁদের দিকে চেয়ে ডেকে উঠি।পানিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, দিনকে দিন আমরা কত সুন্দর হয়ে উঠছি।
তৃতীয় কুকুর বলল, কিন্তু যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক আর একই সাথে অনন্দিত সেটা হল আমাদের কুকুরদের মাঝে চমতকার বোঝাপড়া আর আমাদের শান্তিপ্রিয়তা।
এমন সময় তারা দেখল বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের একটা গাড়ি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।তিন কুকুর লাফিয়ে রাস্তায় নেমে দৌড়াতে শুরু করল। তৃতীয় কুকুরটা বলল, জীবন বাঁচাতে হলে দৌড়াও। সভ্যতা আমাদের পিছু নিয়েছে।
♣♣♣♣The Dancer♣♣♣♣
একদিন বিরাকশা রাজ্যের রাজদরবারে এক নর্তকী উপস্থিত হল তার গানের দল সাথে নিয়ে।বাশি আর সুরের তালে সে নাচ পরিবেশন করল রাজকুমারের সামনে।
আগুনের স্ফুলিংগের সাথে সে নাচল,আর নাচল ঢাল-তলোয়ারের সাথে। এরপর সে নেচে উঠল তারা আর সমগ্র মহাকাশকে সাথে নিয়ে। সবশেষে সে নেচে উঠল হাওয়ার তালে তালে, ফুলগুলোকে সাথে নিয়ে।
নাচ শেষে সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে সে অভিবাদন জানাল রাজকুমারকে।রাজকুমার বললেন, এই সুন্দরী নারী, ভালবাসা আর আনন্দের প্রতীক, কোথা থেকে আসে তোমার এই শিল্প? কিভাবে প্রকৃতির সব উপাদানকে তোমার ছন্দে নাচতে শেখাও?
নর্তকী আবার অভিবাদন জানিয়ে জবাব দিল, হে শক্তিশালী রাজা, আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।তবে আমি এটা জানি, একজন দার্শনিকের আত্মা থাকে তার মস্তিষ্কে, একজন কবির আত্মা থাকে তার বুকের মাঝে, একজন গায়কের আত্মা থাকে তার গলায় আর একজন নাচিয়ের আত্মা থাকে তার সারা দেহে।
♣♣♣♣The Statue♣♣♣♣
অনেককাল আগে পাহাড়ে এক লোক বাস করত।তার কাছে একটা প্রাচীন মূর্তি ছিল।মূর্তিটা তার ঘরের দরজার সামনে পরে থাকত।লোকটা কোনদিন মূর্তির দিকে ফিরেও তাকাত না।
একদিন তার ঘরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল এক শহুরে লোক।লোকটা ছিল জ্ঞানী।মূর্তিটা দেখে সে জানতে চাইল মূর্তিটা বিক্রি হবে কিনা।
পাহাড়ী লোকটা হেসে জানতে চাইল, এই পুরনো নোংরা পাথরখন্ড কে কিনবে?
শহুরে লোকটা বলল, এই মুর্তির জন্য আমি তোমাকে একটা রূপার মুদ্রা দেব।
শুনে পাহাড়ী লোকটা অবাক হয়ে গেল আর মূর্তিটা শহরে নিয়ে যাওয়া হল একটা হাতির পিঠে করে।
অনেক বছর পর পাহাড়ী লোকটা শহরে ঘুরতে গেল।রাস্তায় হাটতে গিয়ে একটা দোকানের সামনে প্রচন্ড ভীড় দেখে সে থমকে দাঁড়াল। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একটা লোক চিতকার করছে, আসুন, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর আশ্চর্য মূর্তিটা দেখে যান।পৃথিবীর সেরা কারিগরের কাজ দেখতে আপনার খরচ হবে মাত্র দুইটি রূপার মুদ্রা।
পাহাড়ী লোকটা তখন দুটি রূপার মুদ্রা খরচ করে দোকানে প্রবেশ করল আর দেখতে পেল সেই পুরনো মূর্তিটা যেটা সে একদিন এক রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করেছিল।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন