খুব শীত লাগতেছে হাতে, তাই হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। আজকে আমাদের প্লান ছিলো নতুনবাজারে দুপুরের দিকে একটা ধাক্কা দেয়ার কিন্তু টিম লিডার হিসেবে বরাবরের মতো অযোগ্য হিসেবে ঘুম থেকে উঠেছি ঠিক ৩.২৫ মিনিটে। ঘড়ি ধরে চলার অভ্যাস ছিলো একসময় কিন্তু এখন ঘড়ি ধরে চলি না তবে দেখি কখন কি করছি। পকেটে দুটো সেলফোন এক সাথে রিং হচ্ছে, একটাও ধরতে ইচ্ছে করছে না, প্যান্টের পিছনে গুজে রাখা ঘোড়াটা দিয়ে ইচ্ছে করছে সামনের ঐ চারটা পুলিশকে শেষ করে দেই।
এইতো মাত্র দুইদিন আগেই আমার টিমের দুইটা ছোটভাইকে গুম করে ফেলেছে ওরা, রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেছে ভীষণ। কিন্তু পকেটে থাকা দুটো হাতে বানানো গ্রেনেড দিয়েই আমাকে এই কাজটা করতে হবে, রাস্তার অন্যান্য জায়গায় আরো ২৫টা পুলিশ আছে এই মুহুর্তে, আর আমার টিমে এই মুহুর্তে মাত্র ৬ জন। ছয়ভাগে তাই ভাগ করে দিয়েছি সব কিছু, কিন্তু তারপরেও এটা খুব টাফ হয়ে যাবে, বদমাশ গুলো সব মাথায় হেলমেট, বুকের বুলেটপ্রুফ ভেস্ট আর পায়ে প্যাড লাগিয়ে রেখেছে।
বেশ বুঝতে পারছি সব কজন ধরা পড়ে যাবো যদি চার্জ করতে যাই এখন। সবাইকে মানা করে দিতে হবে, আমাদের আজকের অপারেশন ক্যান্সেল। আজ এরা অতিরিক্ত সচেতন হয়ে আছে, আশেপাশে সাদা পোষাকে আরো কিছু ডিবিও থাকতে পারে। ফোন বের করে পকেট দ্রুত হাতে এসএমএস লিখে পাঠিয়ে দিলাম বাকি পাচ জনকে।
আমার টিমের মেম্বারগুলো সব চকলেট বয়, ওরা প্রত্যেকেই বুদ্ধিমান, টেলেন্টেড এবং সাহসী। উপস্থিত বুদ্ধি প্রচন্ড, এবং সবথেকে বড় কথা ওদের আমি নিজের হাতে শিখিয়েছি কিভাবে নিজেকে হাইড করতে হয় এমনকি যখন আশেপাশে কেউ থাকে না তখনো। এমনকি পিছনে দুটো ঘোড়া সমেত সামনে ওয়েল ট্রেইন্ড পুলিশ সামনে পড়ে গেলেও এরা এখন নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে। বর্ন চোরা। ওদের আমি নিজের হাতে রিক্রুট করেছিলাম।
আমার টিমের মেম্বারদের কোনো নাম নেই, নাম্বার আছে শুধু, নিরাপত্তার খাতিরেই এই নাম্বারিং করেছি ওদের, MF1 থেকে শুরু করে MF8। এতো সতর্কতার পরেও অবশ্য MF3 এবং MF7 ধরা পড়ে গিয়েছে। কিভাবে ওদের খুজে পেয়েছে কে জানে এখনো ফাইন্ড আউট করতে পারি নাই। কিন্তু আমাদের বসে থাকলে চলবে না, দেশটা বাচাতে হবে, আমাদের আগেও নকশালীরা একবার চেস্টা করেছিলো কিন্তু কাজ হয় নাই। ওদের মেরে ফেলা হয়েছে, অরাও শেষে বিপথে চলে গিয়েছিলো। কিন্তু ওদের মতো আমরাও জানি কিছু কিছু জিনিস ফোর্স শাট ডাউন করতে হয়। নিজেদের বিসর্জন দিতে হয়। তবে নকশালীরা যে চেষ্টা করেছিলো কলকাতা পশ্চিম বঙ্গে আমরা সেটা এই স্বাধীন বাংলাদেশে।
এই যে আমিও তো দিয়েছি, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে আমি, গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি, ভালো জব, সুন্দরি প্রেমিকা, অবশ্য প্রেমিকা এখনো আছে, ও জানে না, আর আমিও বলার সাহস পাই নাই কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যেতে। কিভাবে যে বলবো জানিনা তবে আজ না হোক কাল তো বলতেই হবে, এভাবে সুতোর উপরে যে জীবন, সে জীবনের সাথে জড়িয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকা একটা মেয়েকে শুধু শুধু শেষ করে দিয়ে লাভ নেই।
শিট ওরা আগেই জেনে গিয়েছে এখানে আমরা আসবো, MF5 মেসেজ দিয়েছে, ওকে তাড়া করছে চার জন, দেয়াল টপকে পালাচ্ছে ও। বাকিদের মধ্যে MF4 মেসেজ দিয়েছে ও একটা বাসার ছাদে উঠে বসে আছে, কিন্তু দূর থেকে এয়ার পেট্রোলের সাইরেন শুনতে পাচ্ছি। বাকিরাও এক এক করে মেসেজ দিচ্ছে, সবাই নিজেকে হাইড করতে পেরেছে, কিন্তু MF5 ওকে এখনো ধাওয়া করতেছে, আমি আরেকজন মেম্বারের জীবন এভাবে বৃথা যেতে দিবো না ও জানে, তাই বারবার আমাকে মেসেজ দিচ্ছে পালিয়ে যেতে। বোকা ছেলে, তুই কি জানিস? তোরাই আমার সবকিছু দরকারে আজ সবগুলো একসাথে মরবো তাও তোকে রেখে পালাবো না।
দ্রুতই সবাইকে মেসেজ দিলাম মেশিন এবং গ্রেনেড সহ পর্যাপ্ত এমুনিশন রেডি করতে, ওহ হ্যা ইয়েস আসার সময় আমাদের নিজেদের হাতে বানানো দুই মাইল রেঞ্জের একটা রকেট লঞ্চার নিয়ে এসেছি। MF4 কে নির্দেশ দিলাম। MF5 কে ঘুরে ব্যাক করতে বললাম। ছেলেটা শুধু একটা কান্নার ইমু দিলো মেসেজে।
আর আমিও প্রস্তুতি নিলাম, দুই নাম্বার ফোনের সিম দ্রুত চেঞ্জ করে একই মেসেজ রিপিট করে পাঠালাম চারজন কে। একটা বাবা, একটা মা, একটা প্রিয় মুখ এবং আমার সব থেকে কাছের জোনে থাকা আমারি মতো আরেকজন টিম লিডারকে। ওহ হ্যা, ও আর আমি বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম সেই জন্মেরো হয়তো আগে থেকে। I AM SORRY।
আজ আমরা এটাকে যাবো, আহত করার জন্যে নয়, নিজেদের সারভাইভ করার জন্যে। খুন করার জন্যে। আমরা তো আজ খুনিই সবার চোখে।
বিঃদ্রঃ সামুর পুরোনো ভার্সনটাই ভাল্লাগে আমার, কি নতুন নতুন আমদানী কর্ছে বিরক্ত লাগছে একবার গিয়েই।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন