|
আনু মোল্লাহ
|
|
ছোটগল্পঃ অমরাবতী
09 January 2015, Friday
এদের কাণ্ডকারখানা কিছুই বুঝতে পারছি না। রাত একটা বেজে গেছে। এক ঘন্টা হয়ে গেল আমাকে এনে এই বাংলোঘরে বন্দী করে রেখেছে! সবাই কই গেছে কোন হদিস নাই। আজকের দিনটাই শুরু হয়েছে ঝামেলা দিয়ে। ঝামেলা দিয়ে শুরু হলে ঝামেলা শুধু বাড়তেই থাকে। বাসা থেকে বের হয়ে রিকসার জন্য দাঁড়াতেই একটা কাক এসে কাঁধ বরাবর এসে আলপনা করে গেছে। স্যুটেড বুটেড মানুষদের কমোড হিসেবে কাক সমাজ কেন জানি খুব বেশি পছন্দ করে। যতদিনই বিশেষ কোন সাজগোজ করে বের হয়েছি তার বেশির ভাগ দিনই কাক এই কাজটা করেছে। আজও মনে হয়েছে এই ঘটনা ঘটতে পারে। হলও তাই। আমার এক বন্ধু প্রায়ই বলে, ‘কাকদের জন্য কোন একটা মেজবান টেজবান দিয়ে দে, তাহলে যদি তোর এই শনির দশা কাটে!’ বাসায় গিয়ে আবার চেঞ্জটেঞ্জ করে অফিসে এসে নাকে মুখে কাজ করে পাঁচটার দিকে গুছিয়ে এনেছি, বের হব। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়া দরকার হলে বেছে বেছে সেদিনই দেরী হওয়ার সব আয়োজন দেখা দিবে। ঠিক বের হওয়ার সময়েই এম ডি স্যারের অফিস থেকে একটা ফাইল এল, এক্ষুণি শেষ করতে হবে। এম ডি, চেয়ারম্যানের সব কাজই এক্ষুণি শেষ করতে হয়। পরক্ষণ তাঁদের সহ্য হয় না। শেষ করতে করতে সাতটা বেজে গেল। গুলিস্তানে এসে দেখি কোন ডাইরেক্ট গাড়ি নাই। শেষ গাড়িটা সাতটায় ছেড়ে গেছে। লোকাল বাসে যেতে হবে। যাব কি যাব না করে করে শেষটায় একটা লোকাল বাসে চেপে বসেছি। চৌরাস্তা এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এগারটা। একটা রিকসা নিয়ে নিসিন্দা বাজার। নিসিন্দা বাজার থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে দুই মাইল ভেতরে কেঞ্জাতলী গেলে সালাউদ্দিনদের বাড়ি। কেঞ্জাতলী গিয়ে রাস্তার মাথা পার হয়ে একটা বটগাছ আছে। সেই বটগাছঅলা বাড়ির দরজাটাই ওদের বাড়ি। আর ওদের বাড়ী নাকি সবাই চিনে। নজু খাঁর বাড়ি বললে আন্ধার ভাই কানাও চিনিয়ে দিবে। নিসিন্দা বাজারে এসে রিকসা থেকে নেমে আন্ধার ভাই কানা তো দূরে থাকুক একটা কুকুরও নাই (কুকুর না থেকে অবশ্য ভাল হয়েছে, আমার আবার কুকুর ভীতি প্রবল)। এই রাতের বেলা অচেনা গ্রামে দুই মাইল পথ হেঁটে যেতে হবে চিন্তা করতেই আমার শরীর অবশ হয়ে আসে। রিকসাঅলা কে অনেক বলে কয়েও রাজি করানো গেল না। কেঞ্জাতলী খাঁ বাড়ি যাইতে দশ মিনিট লাগব, হাঁইটা চইলা যান – বলে রিকসা নিয়ে উলটো দিকে ছুট দিল। জনমানবহীন একটা গ্রাম্য বাজারে একা একা একটু ভয় লাগতে শুরু করল। উপায় না দেখে ভয়ে ভয়ে হাঁটা দিলাম। বাজারের শেষ মাথায় এসে বাজারের চৌকিদারে দেখা পেয়ে কিছুটা সাহস পেলাম। চৌকিদারের সাথে কথা বলে বুঝলাম কেঞ্জাতলী নজু খাঁর বাড়ি এই দিকেই।
বাজার থেকে নেমেই কাঁচা রাস্তা। বর্ষার দিন। কাঁচা রাস্তা। হাঁটু কাদা। এই দিকে মনে হয় কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। রাস্তায় কাদা পানি। এই ধরনের গ্রামীণ রাস্তায় হাঁটার অভ্যাস ছিলনা কোনদিন। পা পিছলে আছাড় খেতে খেতে বেঁচে গেলাম কয়েকবার। অন্ধকারে কাদার মধ্যে পা দিলে পিচ করে ছিটকা দিয়ে পানি বের হচ্ছে। শার্ট-প্যান্ট কাদায় মাখামাখি। সালা উদ্দীনের সাথে আমার যে বন্ধুত্ব তার জন্য এই এডভেঞ্চার কবুল করার কোন দরকার ছিল না। নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য নিজেকে অজস্র গালি দিতে দিতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জংলা রাস্তায় এসে পড়লাম। এই জংলার কথা সালাউদ্দীন বলে নাই। তাহলে কি রাস্তা ভুল করলাম কি না কে জানে। রাস্তার দুইপাশে ঘন জঙ্গল। গাছের পাতা থেকে পানির ফোঁটা এসে গায়ে পড়ছে আর গা কাঁটা দিয়ে উঠছে। ছোট বেলা থেকেই ভূত-প্রেতের ভয়-ডর আমার কম। নইলে এই জঙ্গলেই আমার হার্ট এটাক হয়ে যেত। ভয় এখন কম পাচ্ছি এটা বলছি না। অন্ধকারে একা একা ঐ জঙ্গল কি পার হয়েছি ভাবলে এখনো শিউরে উঠি। মাঝে মাঝে কি একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে, আর গাছ ঝাড়া দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটার মত পানি পড়ছে। ঘামে আমার সারা শরীর ভিজে গেল। দু’কান দিয়ে আগুন বের হয়ে বুকে ধুক ধুক করতে করতে আল্লাহ আল্লাহ করে করে জঙ্গল শেষ হল। কিছুদূর হাঁটতেই ঝিকিমিকি আলোক সজ্জা, বিয়ের গেট দেখে মনে হল এটাই সালাউদ্দীন দের বাড়ী। কাছাকাছি যেতে দুজন লোক সিগারেট টানছে আর ফিসফিস করে কথা বলছে। এতক্ষণ পরে মানুষ পেয়ে জানে পানি এল। স্বাভাবিক নিয়মেই তারা আমাকে দেখে, ‘কে, কে-’ জিজ্ঞেস করল। আমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে তাদের দিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা সালাউদ্দীনদের বাড়ি কিনা। সালাউদ্দীন, নজু খাঁর বাড়ি এসব শুনে তারা দেখি আমাকে রীতিমত জেরা করা শুরু করল। গ্রামের লোকের অদ্ভূত কাণ্ডজ্ঞান। শেষে মরিয়া হয়ে বললাম, ‘ভাই আমি বেশ দূর থেকে এসেছি। অনেক কষ্ট করে প্যাঁক কাদা ভেঙে হেঁটে হেঁটে এসেছি। এদিকে কখনো আসি নাই। পথ ঘাট চিনি না। সালাউদ্দীন আমার ইউনিভার্সিটির বন্ধু। তার বিয়েতেই এসেছি।’ আসেন – বলে আমাকে নিয়ে চুপচাপ বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। বাড়িতে জেনারেটর চলছে। আলোকসজ্জা আছে। কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন মরা বাড়ি মরা বাড়ি মনে হল। হইচই নাই, গান বাজনা নাই। লোকজনের আনাগোনাও দেখছি না। সব কেমন যেন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে। একটা গেইট সাজানো হয়েছিল সেটার এক অংশ বৃষ্টি কিংবা বাতাসে খুলে গেছে। সেটা কেউ আর ঠিক করার প্রয়োজন বোধ করেনি। অথবা আদতে সেটা লাগানোই হয়নি। সব কিছু কেমন জানি প্রহসন প্রহসন মনে হচ্ছে। আমার অবশ্য এসব চিন্তা করার টাইম নাই। কোনমতে একটু বসতে পারলেই হয়। আমাকে নিয়ে তারা বাড়ির বাংলো ঘরে বসাল। সালাউদ্দীন কই জিজ্ঞেস করতে বলল খবর দিচ্ছি। আপনি বসেন। বসেন বলে চলে গেল আর কোন খবর নাই। কোন দূর থেকে এসেছি কোথায় হাত মুখ ধুইতে দেবে, জামা কাপড় চেঞ্জ করতে বলবে খানাপানি দিবে তা না, কারো পাত্তা নাই। গ্রামের বাড়ি নিশ্চয়ই পুকুর বা কল আছে নিজেই খুঁজে পেতে হাত মুখ ধুয়ে নেব ভেবে দরজা খুলতে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে আটকানো। মাথা খারাপের ঝোগাড়। ভেবেছিলাম আমাকে নিয়ে নিশ্চয়ই বেশ একটা হইচই পড়ে যাবে। উলটো বন্দী করে রেখেছে! এ কাদের পাল্লায় পড়োলাম। সালাউদ্দিনটা কি একটা গাধা নাকি! নাকি আগেকার রূপকথার মত ডাকাতদের হাতে পড়লাম! আমার কাছে থেকে কি এমন ডাকাতি করবে! ব্যাগে কিছু জামা কাপড় আছে। হাতে একটা ক্যাসিও ঘড়ি, পকেটে অল্প কিছু টাকা। আর একটা ইয়াসিকা ক্যামেরা আছে। আজকাল চিঁচড়ে চোরও এর চেয়ে বেশি রোজগার করে। এসবের জন্য কাউকে ধরে এনে বেঁধে রাখতে হয় না। বিষয়টা কি? রাগে দুঃখে সালাউদ্দীনকে আমার চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। আমার সন্দেহ জোরালো হতে শুরু করেছে এটা সালাউদ্দীনদের বাড়ী না। আর সত্যি যদি এটা সালাউদ্দীনদের বাড়ি না হয় তবে আমার জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু ঠিক কি করতে হবে কিংবা কিভাবে তা বুঝতে পারছিলাম না। সুতরাং অপেক্ষা করা ছাড়া কোন গতি নেই। এরা কি ভোর করে ফেলবে কিনা কে জানে। সে একদিক দিয়ে ভাল। ভোরের আলোয় অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে। ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে মনে মনে ভোরের কামনায় আমি ভাঙা চেয়ারে গা এলিয়ে সিগারেট ধরালাম।
খট্ করে দরজা খুলে গেল। তিনজন লোক একসাথে ঢুকল। আগের দুজনের সাথে বিকট সাইজের ও দর্শনের একজন। তার কপালে আবার একটা ব্যান্ডেজ লাগানো। তারাও বেশ চিন্তিত বোঝা যাচ্ছে একজন ঢোকার সময় চৌকাঠের সাথে বেশ শক্ত একটা ধাক্কা খেল। সিগারেট ফেলব ভেবেও আবার ফেললাম না। নির্বিকার ভঙ্গিতে টানতে থাকলাম। এদের সাথে ভদ্রতা করতে ঘৃণা হল। মাস্তানমত লোকটি বলল সিগারেট ফেল। আমি কিছু বলার আগেই বিকট লোকটি বলল ‘তুমিই সালাউদ্দীনের বন্ধু?’ আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। লোকটি আগের মতই আমাকে জেরা করতে শুরু করল। বিরক্তি ও রাগের সীমা রইল না। বললাম, ‘আপনাদের ব্যাপারটা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। সালাউদ্দীনের বাড়ি বলে আমাকে ধরে এনে বন্দী করে রেখেছেন। সালাউদ্দিন থাকলে তাকে আসতে বলেন নইলে আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে যেতে দিন। আমি আপনাদের কি করেছি?’
‘তুমি কিছু কর নাই। করেছে তোমার পিয়ারের সালাউদ্দীন। বিয়ের কথা বলে আমাদের কে ধোঁকা দিয়েছে। আমাদের লোকজন কে মারধর করেছে। আমরা তাদের কিছুই করতে পারি নাই। তুমি তাদের লোক। আমরা তোমারে ছাড়ব কেন?’
‘এইটা কি সালাউদ্দীনের শ্বশুরবাড়ী?’
‘হতে পারত হয় নি। যাই হোক তোমার সাথে বেশি কথা বলতে চাই না। আমার নাম গালকাটা নেয়ামত। এলাকার সবাই আমাকে জানে। আমি কয়জন কে ফেলে দিয়েছি বিশ্বাস না হলে তুমি গিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে পার। তোমার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। তোমার পা কোনটা ভাঙব?’
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে একটা ক্রুর হাসি দিলেন। আমিও দেখলাম গালকাটা নেয়ামতের গালে বেশকটা কাটা দাগ আগে। বিকট চেহারা।
‘আচ্ছা তুমিই বলে দাও কোনটা ভাঙব? নাকি হাতও একটা ছেঁচে দিব।’
‘এসব কি বলছেন? আমি আপনাদের মেহমান। আসতে কত দূর্ভোগ হয়েছে। সেই কখন থেকে না খেয়ে আছি। হাত মুখ ধুইনি। সারা গায়ে কাদা লেগে আছে। খানা খাদ্য কি আছে তার ব্যবস্থা করেন।’
বিষয়টা হালকা করার চেষ্টা করলাম। লোকটি সেসবের ধারে কাছেও গেল না।
‘তুমি সালাউদ্দীনের লোক। তোমার ঠ্যাং ভাঙাই একমাত্র বিধান। তবে তোমাকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। তাই একটা অপশন দিচ্ছি। ঠ্যাং বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল আমার ভাগ্নিকে বিয়ে করা।’
আমি আকাশ থেকে পড়ে ফেটে গেলাম। বলে কি এই লোক।
‘ঠ্যাং ভাঙলে আমি আপনাদের ছেড়ে দেব এত সহজ না। ডিএমপি’র কমিশনার আমার বড় ভাই। খুব সোজা মনে করলে ভুল করবেন।’
আমিও ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম।
‘তোমার ভাই পুলিশ না হয়ে ডাক্তার হলে ভাল হত। ভাঙা পায়ের কাজে লাগত। এখন তো মনে হয় পায়ের সাথে হাতও যাবে। তোমার ভাইয়ের জন্য দুঃখ, তোমার জন্য কিছুই করতে পারবে না।’
আমি কিছু বলতে চাইলে বাধা দিয়ে বলল, ‘তোমাকে কিছুক্ষণ সময় দিচ্ছি। তুমি ভাব। কিছুক্ষণ পরে আমার দুলাভাইকে পাঠাচ্ছি। তাঁকে যদি উলটা পালটা কিছু বল আর বিয়েতে রাজি না হও হাত পা তো ভাঙবই সাথে মুখও ভেঙে দিব।’ তার কথা শুনে মনে হল না থ্রেট দিচ্ছে। হাত পা ভাঙা তার কাছে যেন কোন ব্যাপার না। দরজা ভিজিয়ে আবার চলে গেল।
এ কোন মগের মুল্লুকে এসে পড়লাম। ক্ষুধা-তৃষ্ণা-রাগে-দুঃখে-কষ্টে-বিরক্তিতে আমার বুক ফেটে যেতে চাইল। সালাউদ্দিনকে জবাই করতে পারাই হল আমার শান্তির ন্যূনতম উপায়! চিন্তা করলাম রাজি হয়ে যাই। পরে তারা একটু রিলাক্স হলেই পালাতে হবে। আর নিতান্ত কবুল যদি বলতেই হয় তবে নাম ধাম ঠিকানা সব উলট পালট দিব। অল্পক্ষণের মধ্যে চুল দাড়ি পাকা এক ভদ্র লোক এলেন। সাথে সেই গালকাটা মাস্তান। লোকটি আমার কাছে বেশ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তার এবং তার মেয়ের জীবন মান সম্মান বাঁচিয়েছি তাই। মুখ দেখানোর উপায় ছিল না। বেশ আশীর্বাদ টাশীর্বাদ করল। আমার মাথায় কিছু ঢুকল না। তবে মনে হল লোকটি কিছুই জানেনা। কথা বলার সময় নেয়ামত আমার কাঁধে হাত দিয়ে রাখল। যেন আমাকে আদর করছে। কিন্তু এমন একটা চাপ দিল যেন হাঁড় পাউডার হয়ে গেল। আমি বয়স্ক লোকটির দিকে কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করতে পারি নি।
আমি গালকাটাটাকে বললাম, ‘চলুন। কাজীর ব্যাবস্থা করুন।’ ভেবেছি এত রাতে কাজী পাবে কোথায়। সকাল পর্যন্ত অনেক সময় পাব ,সাথে সুযোগও। আমি সিগারেট ধরালাম। নেয়ামত মাস্তান বলল সিগারেট ফেল। ‘আমি তোমার মুরুব্বী। আদব লেহাজ জানা নেই তোমার?’
আদব লেহাজের নিকুচি করি সাথে মুরুব্বীরও। ‘আপনার ভাগ্নি কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। এর বেশি কিছু দরকার আছে?’ ঘৃণায় বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে এল আমার।
সেই রাতেই বিয়ে হল। জামা কাপড় চেঞ্জ করিনি। তারা চেঞ্জ করার জন্য বেশ জোরাজুরি করেছিল। এই পোশাকে বিয়ে করা যায় না। আমি বলেছি, রাস্তা থেকে ধরে এনে যদি বিয়ে দেয়া যায় তবে এই পোশাকে বিয়ে করাও যায়। লোকটি আমার সাথে জোঁকের মত লেগে রইল। বাথরুমে গেলে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। আপদ বিপদ সব এক সাথে। মনে তীব্র আশা ছিল সবই বুঝি দুঃস্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই দেখব সব আগের মত। বিবাহ শেষে আমাকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিল। কোন কথাবার্তা ছাড়া বসে বসে একটার পর একটা সিগারেট টানছিলাম। আহা! মনে কত স্বপ্ন ছিল। বাসর ঘর আমার জন্য আজ মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন। তিন নম্বর সিগারেটটা যখন মাঝ পথে তখন মেয়েটি আন্তরিক স্বরে বলল, ‘আপনার উপর দিয়ে অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে। আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছেন। দেখুন, আমার এতে কোন দোষ নাই। দোষ যদি কিছু থাকে সে আমার মামার আর আমার কপালের। যাই হোক আপনার মনের বিরুদ্ধে আমি কোনমতেই আপনাকে জড়াতে চাই না। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আপনি চাইলে আমি বাড়ির পিছন দিয়ে পার করে দিতে পারি। আপনি চলে যান। কেউ টেরও পাবে না। আমার মামা সহ অন্যান্য সকলের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই।’ বলেই মেয়েটি আমার দিকে হাত জোড় করল। তার স্বরে ভঙ্গিতে নির্জলা আন্তরিক মমতা। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে গেল।
এতক্ষণ খেয়াল করি নি। কি মিষ্টি মেয়ে। রজনীগন্ধা বসিয়ে রেখে গেছে কে যেন। স্নিগ্ধ কান্তি। সে স্নিগ্ধতা আমাকে যেন স্পর্শ করল। দীর্ঘ ছায়াময় চোখ। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি যেন সমুদ্রের অতলে হারিয়ে গেলাম। আমার মুখে কোন কথা যোগাল না। সালাউদ্দীনকে ক্ষমা করে দিলাম অনায়াসে। কোন দুঃখে এই রত্ন হেলা করল তা নিয়ে ভাবার সময় আমার নাই। ভুলে গেলাম দীর্ঘ রাতের দুঃস্বপ্ন, দুস্কৃতি। মনে ভাবলাম কোন এক দুঃস্বপ্নের মাঝে আমি তোমাকে আবিষ্কার করলাম। তোমাকে নিয়ে সাজাব আমার অমরাবতী। কিন্তু এইখানে থাকলে আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাব।
এখনি পালাব আমি। কিন্তু তোমাকে নিয়ে — যদি তোমার আপত্তি না থাকে ’ বলে হাত বাড়ালাম। মিষ্টি হেসে আমার হাত ধরল সে। আহ! কি সুন্দর হাসি।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন