|
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই
|
|
দূরভাষিণী
09 January 2015, Friday
[কলেজে পড়ার সময় কোনো এক সাপ্তাহিক পত্রিকায়, খুব সম্ভবত ‘বিচিত্রা’য় একটা চমৎকার গল্প পড়েছিলাম- ‘দূরভাষিণী’। একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের কীভাবে যেন টেলিফোনে যোগাযোগ হয়। তাদের মধ্যে নিরন্তর ফোনালাপ চলে। এক সময়ে তারা হৃদয়গতভাবে পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে। ছেলেটা একদিন মেয়েটার সাথে শহরের কোনো এক জায়গায় গিয়ে দেখা করতে চায়। মেয়েটা রাজি হয় না। শেষমেষ একদিন মেয়েটি জানায় তার পক্ষে কোনোদিন ছেলেটির সাথে দেখা করা সম্ভব হবে না। সে অন্ধ।
গল্পটি হয় রাবেয়া খাতুন, অথবা সেলিনা খাতুনের লেখা। আমার মনে নেই।
চমৎকার গল্পটার ভাষা ও ভাব আমার মনে গেঁথে আছে আজও। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, আমার জীবনেও একটা মেয়ের সাথে প্রায় অনুরূপ একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিল।]
দূরভাষিণী, আপনি বলেছিলেন অন্য সবার চেয়ে আমি নাকি ‘অন্যরকম’।
আমি বহুবার আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম সেই ‘অন্যরকম’ বৈশিষ্ট্যের কথা।
আপনি টেলিফোনের প্রান্তে হাসিতে গলে পড়ে
বারংবার একই কথার ফুলঝুরি ছড়ালেন - ‘আপনি বড্ড অন্যরকম’।
আমি জানি না দূরভাষিণী, কী আপনার সত্যিকারের নাম, যে-নামে
আপনাকে ডেকে ডেকে প্রাণান্ত হতে কেবলই সাধ হয়। যে মেয়ে তার নাম বলে না
অথবা গোপন করে তাকে সবাই ‘অনামিকা’ ডাকে,
আমি ডাকি ‘দূরভাষিণী’।
আমি বলেছিলাম, অনামিকা, আপনি কি রাবেয়া খাতুনের ‘দূরভাষিণী’ পড়েছেন,
সেই অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠস্বরের করুণ মেয়েটির বেদনার কাহিনি কি আপনার জানা আছে?
অবশ্য রাবেয়া খাতুন না হয়ে সেলিনা হোসেন বা অন্য যে কেউ-ই হতে পারেন
সেই কাহিনির জননী।
সেলিনা হোসেন কিংবা রাবেয়া খাতুন কিংবা অন্য কেউ - ‘দূরভাষিণী’
আপনি পড়েন নি - নরম করে জানিয়েছিলেন।
আমি বলেছিলাম, ‘অনামিকা’ বড্ড সাধারণ মেয়েদের নাম,
আপনার নামটি বরং ‘দূরভাষিণী‘ই থাক।
দূরভাষিণী, আমি জানি না কিংবা হয়তো সুনিশ্চিত জানি, আপনিই সেই দূরভাষিণী
সারাটা ক্ষণ আপনার প্রতীক্ষায় কান পেতে থাকি,
প্রতিদিন টেলিফোনে কত কথা হয়-
টিএসসি কিংবা পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় যাদুঘরে কবিতাসন্ধ্যা, বাংলা একাডেমিতে বইমেলায় যাবার কথা বললেই আলসেমিতে আপনার অবশ কণ্ঠস্বর -
আপনি কি সেই দূরভাষিণী, করুণ সুমিষ্টকণ্ঠী দুঃখিনী বালিকাটি নন?
দূরভাষিণী, আপনি জানেন না আপনার কণ্ঠস্বরে কী অপূর্ব মাদকতা আছে, যা অবিরাম
আমার কানে বাজে
প্রতিধ্বনির মতো সেই কণ্ঠস্বর অবিরাম কানে বাজে,
হাঁটতে চলতে কানে বাজে;
খেতে বসি, তখনো কানে বাজে;
বেসিনের সামনে যাই, দাঁত ব্রাশ করি, আয়নায় চেহারা দেখি,
সেই কণ্ঠস্বর কানে বাজে; যখন গোসল করি, তখনো কানে বাজে,
শুতে যাই, ঘুমের ঘোরে আপনার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে জেগে উঠি,
কানের কাছে সেই কণ্ঠস্বর - অবিরাম বেজে চলে।
দূরভাষিণী, আমি জানি, আপনার দেখা কোনোদিনই পাবার নয়, আপনিই
রাবেয়া খাতুনের ‘দূরভাষিণী।’
একদিন হঠাৎ ফোন করে দেখবো ও-প্রান্তে আপনি নেই, অন্য কণ্ঠস্বর,
আমি তৎক্ষণাৎ ক্র্যাডল চেপে লাইন কেটে দেবো,
তার পরদিন আবার ফোন করবো, সেদিনও আপনি নেই,
এরপর প্রতিদিন - প্রতিদিন অস্থির ফোন করা হবে, আপনি নেই;
ক্লান্ত একদিন থেমে যাবো হয়তোবা, দিনের পর দিন এভাবেই ব্যর্থ বিষণ্ণ সময় চলে যাবে,
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর,
যুগ পেরিয়ে যাবে- একদিন আপনার ফোন নম্বরটিও কীভাবে ভুল হয়ে যাবে, কিংবা বদলে যাবে, কিংবা বদলে যাবেন আপনি নিজেই।
সেই বুকফাটা সময়ের বেদনায় কেবলই আমার অন্তর বিদীর্ণ হয়।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন