|
খেয়া ঘাট
|
|
‘এই অশ্রুতে কোনো গ্লানি নেই’
20 December 2014, Saturday
গত ১৪ ডিসেম্বর আটলান্টায় সেবা বাংলা লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধের বীর নেতা তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদের বক্তৃতা শুনে অভিভূত হলাম। তাজঊদ্দীন যে আমাদের নমস্য নেতা, সেকথা নতুন নয়। এমন বিদগ্ধ, সৎ ও ত্যাগী নেতা পেয়ে বাংলাদেশ ধন্য, কিন্তু ধিক আমাদের, তাঁর যোগ্য মর্যাদা আমরা দিতে পারিনি।
তাহলে শারমিনের বক্তৃতায় কী নতুন কথা ছিল? শারমিন উচ্চশিক্ষিতা ও অত্যন্ত মিতবাক, সুবক্তাও বটে—কিন্তু তাঁর আবেগপ্রবণ পাঠ ও কথার আলাদা জাদু ছিল। ছোট ছোট অদ্ভুত দ্যোতনাময় ঘটনা আমাদের নতুন করে এই মহাপ্রাণ ব্যক্তিকে, মুক্তিযুদ্ধকে জীবন্ত করে তুলেছিল।
আমরা কজনে জানি মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন তাজউদ্দীন পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, আর পরিবার যখন নিরাপদে কলকাতা পৌঁছে, তখন তাজউদ্দীন কয়েক মিনিটের জন্য মাত্র স্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন? প্রবাসী মন্ত্রীসভা শপথ নিয়েছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত করার আগে তাঁরা কেউ পরিবারের সাথে থাকবেন না। আমরা কজন জানি তাজউদ্দীন একা এই শপথ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন?
কিংবা বিনাদোষে কারাবাসে মৃত্যুর আগে তিনি যখন জানেন তিনি আর বাচঁবেন না, তিনি যে ধীর মস্তিষ্কে কারাগারের এক স্থানে এক শ বৃক্ষ রোপণ করেন, সেকথা কজন জানেন?
এসব কথা শুনে আমি অশ্রু স্মরণ করতে পারি নাই। সেজন্য আমার বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। লজ্জা শুধু এই ভেবে যে ব্যক্তি হিসেবে, দেশের অংশ হয়ে কী বিবেকবর্জিত নির্লিপ্ততায় আমরা এই মহাপ্রাণ ব্যক্তির ক্ষমতাচ্যুতি ও নির্মম বর্বর হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করলাম! সেই লজ্জা কিছুতেই ঢাকা সম্ভব নয়।
সেবা লাইব্রেরীর পরিচালক শ্রদ্ধেয় বড়ভাই হারুন ভাইয়ের প্রতি বিশেষ কৃতগ্গতা এ রকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য।
প্রায় আড়াইঘন্টা সময় শারমিন আহমদ হলভর্তি দর্শক শ্রোতাদের তন্ময় করে রেখেছিলেন। পুরো ৭১ সালের নয়টি মাস যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠেছিল। তার কথায় কখনো শিহরিত হচ্ছিলাম, কখনো চোখের কোণে জমেছিলো অশ্রু। এরকম একজন মহান মানুষের সুযোগ্যা কন্যাকে একটি বিশেষ দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে এতো কাছ থেকে জানতে পারার স্মৃতি জীবনে অনন্য হয়ে রইল।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন