|
বোকা মানুষ বলতে চায়
|
|
ভূত ভূতং ভূতৌ (নিজ অভিজ্ঞতায় ভৌতিকতা এবং লৌকিকতা)
14 December 2014, Sunday
শৈশবে আমি “ভয়” নিয়ে অনেক ভুগেছি, আর এই ভোগান্তি কলেজে ওঠার আগ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। হঠাৎ একদিন আবিস্কার করলাম আমি আর আগের মত ভয় পাচ্ছি না। কবে, কখন, কীভাবে আমার “ভয়”সব হারালো জানি না। কিন্তু তার আগের সময়গুলো আমি একা কোন ঘরে ঘুমাতে পারতাম না। অন্ধকারে তো না...ই... আলো জ্বেলেও না। বাসায় লোকে লোকারণ্য থাকলেও না। খুব ছোট বেলায় দেখতাম একটা বেড়াল (কখনো কালো, কখনো সাদা) যার চোখ জ্বলজ্বল করতো। শ্যাওলা ধরা পলেস্তারহীন একটা প্রাচীন দেয়ালের উপর দিয়ে বিড়ালটা হেঁটে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে আমায় দেখত। আমি চিৎকার করে বিড়াল... বিড়াল... বলে ঘর কাঁপিয়ে আওয়াজ করতাম... কিন্তু আমি ছাড়া কেউ ঐ বিড়াল বা দেয়াল, কোনটাই দেখতে পেত না। একসময় এই বিড়াল থেকে আরও নানাবিধ ভয় সংক্রমিত হয় মনে আর মস্তিষ্কে। মজার ব্যাপার এই আমি এখন ফাঁকা বাসায় একা সারারাত নির্ভয়ে নির্ঘুম কাটিয়ে দিতে পারি। কি অবাক ব্যাপার তাই না? “ভৌতিক” কোন বিষয়, তা অলীক না বাস্তব, নির্বিচারে মানব মন ভয় পেতে পক্ষপাতিত্ব করে এসেছে যুগে যুগে। আজ আমি আমার চারটি ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবো যার প্রথম দুটি আজও রহস্য হয়ে রয়ে গেছে যা ভৌতিকতা’কে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়; আর শেষের দুটি বলে... ভূত বলে কিছু নেই।
১) তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি, কোন এক ছুটির দিনে এলাকার ডানপিটে ছেলের দল ফুটবল খেলছিলাম। মাঠের পাশেই এক পরিত্যাক্ত বাগান ছিল, যেখানে যাওয়ার একটা মাত্র পথ ছিল। সেদিন বলটা সেই বাগানে চলে গেলে আমি গেলাম আনতে। গিয়ে দেখি সেখানে আমার এক বন্ধু আমার আগে পৌঁছে গেছে যে আমার সাথে খেলছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি যখন মাঠ হতে বাগানের দিকে যাচ্ছিলাম, সে মাঠে বসে আছে। কোনমতেই আমার আগে তার সেখানে পৌঁছানোর কথা না; আর পৌঁছলেও আমি দেখতে পেতাম। কিন্তু সেই বয়সে এই যুক্তিগুলো আমার মাথায় আসে নাই, তাই ও আমায় বল ছুঁড়ে দিলে আমি বল নিয়ে মাঠের দিকে দৌড় দেই। কিন্তু মাঠে পৌঁছে দেখি সে মাঠেই বসে আছে, আমি ভয়ে জমে যাই। খেলা ফেলে বাসায় চলে আসি, এই ঘটনা কাউকে কখনো বলা হয় নাই।
২) তখন অনার্সে পড়ি, এলাকার এক বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে প্রায় প্রতি মাসে দল বেধে এক-দুই দিনের জন্য বেড়াতে যাই। সারাদিন খেলা, আড্ডা আর খুনসুটি; আর রাতের বেলা তাস পেটানো। সেদিন ছিল শীতের রাত, আকাশে জোছনা। রাত দুটো’র দিকে দুইদলে ভাগ হয়ে ষোল জনের দল ঘুমুতে গেলাম। আমি যে ঘরে ছিলাম সেই ঘরে সাতজন আর অন্য ঘরে নয়জন। রাত তিনটার দিকে টিনের চালে একটা ঢিল পড়ার শব্দ হল, এরপর অনবরত শব্দ হতে লাগল। সবাই টের পাচ্ছিলাম, কিন্তু ভাবছিলাম অন্যঘরের ওরা ফাজলামো করছে। একসময় যে বন্ধুর বাড়ি, সে সহ তিনজন দরজা খুলে বের হয়ে ঐ ঘরে গেলাম ওদের এমন ফাজলামো’র জন্য শাসাতে। কিছুক্ষণ বাদানুবাদের পর বুঝতে পারলাম আমাদের কেউ এই ঘটনার জন্য দায়ী নয়; কেননা তখনো ঢিলের শব্দ শুনেছিলাম। এরপর ভাবলাম ঐ এলাকার কোন দুষ্টছেলের দলের কাণ্ড। সবাই মিলে টর্চ নিয়ে খুঁজেও কারো টিকিটির দেখা পেলাম না। সারারাত শব্দ পেলাম, সবাই নির্ঘুম কাটালাম। অনেকে বলল কুয়াশা পড়ার শব্দ, কিন্তু সেই শব্দ এতো জোরালো হয় না যে ঢিলের মত শোনাবে। আর ভোরবেলায়ও শিশির পরে। কিন্তু ভোর হতেই শব্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
৩) খুব ছোটবেলায় শোনা একটি লোমহর্ষক ভৌতিক ঘটনা যা পরবর্তী’তে আমি বহুবার বহুজনকে বলেছি। আমি বলে নিজেই ভয়ে জমে গেছি। ঘটনা এরকম, একটি শতবর্ষী পুরানো মসজিদ, যে সময়ের ঘটনা বলা হচ্ছে তখন মসজিদ এখনকার মত বেশীরভাগ সময় তালাবদ্ধ থাকতো না। ২৪/৭ মসজিদ খোলা থাকতো সেই সময়ের কথা। মধ্যরাত্রিতে নামাজ পড়তে এক লোক মসজিদে গেল, চার রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফেরানোর পর দেখতে পেল তার পাশে আরেকজন নামাজ পড়ছে। পরবর্তী নামাজের জন্য উঠে দাঁড়ানোর সময় সে দেখতে পেল লোকটির পায়ের পাতা উল্টোদিকে ঘুরানো। এই দৃশ্য দেখে লোকটি ভয়ে তৎক্ষণাৎ মসজিদ হতে বের হয়ে হাঁটা দিল। মসজিদের কম্পাউন্ড ত্যাগ করার আগেই আরেকজন মুসল্লির দেখা পেয়ে লোকটি একটু স্বাভাবিক হল এবং তার কাছে গিয়ে ঘটনাটি বলল। তখন আগন্তুক মুসল্লি সেই লোকটাকে তার পায়ের দিকে ইশারা করে বলল, “তার পা কি এমন উল্টো দিকে ঘুরানো?” এই লোকের পা’ও উল্টোদিকে ঘুরানো দেখে লোকটি ভয়ে হার্ট-এটাক করে মারা যায়। আমি বহুবার এই গল্প বহু জায়গায় করেছি, কিন্তু বেশ কয়েকবছর আগে হঠাৎ একদিন এই গল্প বলে শেষ করা মাত্র আমি একটি মহা ফাঁকিবাজি খুঁজে পেলাম এই গল্পে। লোকটি যদি মারা গিয়েই থাকে, তাহলে এই গল্প আমাদের জানালো কে? ঐ পা উল্টো লোক দুটো!!!
৪) তখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকুরী’র সন্ধানে আছি। আমি আর আমার ছোট ভাই একসাথে ঘুমাই। সেদিনও ঘুমাচ্ছিলাম, মাঝ রাতে হঠাৎ মনে হল আমাদের ঘরের দরজা কেউ একজন ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে কড়া নাড়ার শব্দ আর করাত দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ; আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। বারান্দায় লাইট জ্বলছিল বলে দরজার নীচ দিয়ে বাইরের আলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। ফলে অন্ধকার ঘর হতে আমি বুঝতে পারছিলাম যে বাইরে শরীরী কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু কাঠ কাটার শব্দ বন্ধ হচ্ছে না, থেমে থেমে লাগাতার শব্দ হয়েই যাচ্ছে। আমি ভয়ে ঘেমে গেলাম। ছোট ভাইকে (আমার বছর দুয়েকের ছোট) গভীর ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। ওকে শব্দের কথা বলতে ও ঘুমের ঘোরেই উত্তর দিল, “ক্যালেন্ডারের শব্দ!!!”। লাইট জ্বেলে দেখি ক্যালেন্ডারের নীচে থাকা টিনের চিকন পাত বাতাসে ক্যালেন্ডারের সাথে দুলে দুলে দেয়ালে ঘষা খাচ্ছে আর হুবুহু করাত দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ হচ্ছে। কিন্তু কড়া নাড়ার শব্দ? সেটাও পরের দিন আবিস্কার হল, তখন ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছিল। তেনারা দরজা বন্ধ পেয়ে ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খোলার চেষ্টা করে যেত।
সবশেষে একটাই কথা বলতে চাই, “ভয় পাবার আগে ভাবুন, আপনি প্রথম দুই গল্পে আগ্রহী? নাকি পরের দুই গল্পে”। ভৌতিকতা নাকি লৌকিকতা?
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
You can always tell an expert! Thanks for conrtibuting.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন