|
আমি তুমি আমরা
|
|
অনুবাদ গল্পঃ ♠♠The King♠♠-কাহলিল জিবরান
29 November 2014, Saturday
একদিন সাদিক রাজ্যের লোকজন রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করল।রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করে তারা রাজার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে লাগল।রাজা এক হাতে মুকুট আর অন্য হাতে রাজদন্ড নিয়ে প্রাসাদের সিড়ি বেয়ে নেমে এলেন।রাজাকে আসতে দেখে উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল।রাজা সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ভাইয়েরা আমার, আজ থেকে তোমরা আর আমার প্রজা নও। আমি এই মুকুটা আর রাজদন্ড তোমাদের হাতে তুলে দিচ্ছি।আজ থেকে আমিও একজন সাধারন মানুষ। আমি এবং আমরা সবাই মিলে কঠিন পরিশ্রম করে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করব। আমাদের আর রাজার প্রয়োজন নেই।আমরা সবাই হাতে হাত রেখে মাঠে আর আংগুর ক্ষের কাজ করব। তোমরাই বলে দেবে কোন মাঠে কিংবা আংগুর ক্ষেতে আমি কাজ করব।আজ থেকে তোমরা সবাই রাজা।
রাজার কথা শুনে উপস্থিত সবাই বিস্ময়ে অভভূত হয়ে স্থির হয়ে দাড়িয়ে রইল।যে রাজাকে তারা তাদের সকল দুঃখ কষ্টের কারন বলে মনে করত তিনি আজ নিজেই তার মুকুট আর রাজদন্ড সমর্পন করে জনতার কাতারে শামিল হতে চাইছেন!
এরপর উপস্থিত সবাই নিজ নিজ কাজে চলে গেল আর রাজা একজনের সাথে মাঠের দিকে রওয়ানা হলেন।
কিন্তু রাজার অভাবে সাদিক রাজ্যের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হতে শুরু করল, জনতার দুঃখ দূর্দশা কমার পরিবর্তে আরো বেড়ে গেল।লোকজন বাজারে কাদতে লাগল, ইশ, যদি আমাদের একটা রাজা থাকত। ছেলেবুড়ো একত্রিত হয়ে বলল, আমরা আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনব।
এই বলে সবাই রাজার খোজে বেরিয়ে পড়ল। অবশেষে তাকে পাওয়া একটা মাঠে-একমনে কাজ করছেন।জনগন তাকে আবার রাজসিংহাসনে বসিয়ে দিল, ফিরিয়ে দিল তার মুকুট আর রাজদন্ড। এরপর তারা অনুরোধ করল, এবার আমাদের প্রতাপ আর ন্যায়ের সাথে শাসন করুন।
রাজা জবাব দিলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের প্রবল প্রতাপের সাথে শাসন করব। আর যদি স্রষ্টা আমার সহায় হন তবে আমি ন্যায়ের সাথে আপনাদের শাসন করব।
একটু পর কয়েকজন নারীপুরুষ রাজার দরবারে উপস্থিত হয়ে একজন অভিজাত ব্যক্তি সম্পর্কে অভিযোগ করলেন যে তাদের সাথে ক্রীতদাসের মত ব্যবহার করে।
রাজা সাথে সাথে সেই অভিজাত ব্যক্তিকে ডেকে বললেন, স্রষ্টার কাছে সব মানুষের জীবনের মূল্য সমান।যারা তোমার মাঠে আর আংগুর ক্ষেতে কাজ করে যেহেতু তাদের জীবনের মূল্য তুমি জাননা, তাই তোমাকে এই রাজ্য থেকে বহিস্কার করা হল।কোনদিন তুমি আর এই রাজ্যে ফিরতে পারবে না।
পরদিন রাজার কাছে আর একদল লোক এল পাহাড়ের ওপারে বাস করা এক অভিজাত মহিলার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে।সাথেসাথে তাকে দরবারে ডেকে রাজা নির্বাসনের শাস্তি শোনালেন।রাজা বললেন, যারা আমাদের মাঠে আর আংগুর ক্ষেতে কাজ করে, যাদের বানানো রুটি আর ওয়াইন আমরা খাই, তারা আমাদের চেয়ে অনেক মহত। যেহেতু তুমি সেটা জান না, তাই তোমার এই রাজ্যে বসবাসের কোন অধিকার নেই।
এরপর একদল নারী-পুরুষ এল বিশপের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। বিশপ তাদের পাথর বহন করতে আর সেই পাথর বসিয়ে ক্যাথিড্রাল বানাতে বাধ্য করেছে, অথচ তারা যখন না খেয়ে থেকেছে তখন বিশপ ক্যাথিড্রালে সঞ্চিত সোনা আর রূপা থেকে তাদের সামান্য ভাগও দেয়নি।
রাজা সাথে সাথে বিশপকে ডেকে বললেন, তোমার বুকের মাঝে থাকা ওই ক্রসের মানে হল অন্যকে জীবন দেয়া। তুমিতো কাউকে জীবন দাওনি, উল্টো অন্যের জীবন ছিনিয়ে নিয়েছ।তাই তোমাকেও এই রাজ্য থেকে বহিস্কার করা হল।
এভাবে এক পূর্নচন্দ্র পর্যন্ত নারীপুরুষের দল রাজার কাছে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল আর রাজা তাদের সবাইকে রাজ্য থেকে বহিস্কার করলেন।
সাদিক রাজ্যের লোকজন রাজার কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে গেল।
অবশেষে একদিন রাজ্যের ছেলেবুড়ো সবাই রাজপ্রাসাদ ঘেরাও করে রাজার নাম ধরে ডাকতে লাগল।রাজা আবার এক হাতে মুকুট আর এক হাতে রাজদন্ত নিয়ে নেমে এলেন।
রাজা তাদের বললেন, বল তোমরা আমার কাছে এবার কি চাও? একদিন তোমরা আমায় যা দিয়েছিলে তা-ই কি ফেরত চাও?
শুনে তারা কেদে উঠল, না না, আপনিই আমাদের রাজা।আপনি এই রাজ্য থেকে সব অত্যাচারী আর শয়তানদের তাড়িয়েছেন, আমরা আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই।এই মুকুট আপনার আর এই রাজদন্ড আপনার গৌরব।
রাজা জবাব দিলেন, আমি না, তোমরাই তোমাদের প্রকৃত রাজা। যখন তোমরা আমাকে দূর্বল আর অত্যাচারী ভেবেছিলে, তখন আসলে তোমরাই দূর্বল আর অত্যচারী ছিলে। আজ আমাদের রাজ্য দুষ্টলোক মুক্ত হয়েছে তোমরা চেয়েছ বলেই। প্রকৃতপক্ষে আমি তোমাদের মনের মাঝে থাকা একটা চেতনা, এই চেতনাই তোমাদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রন করে।রাজা বলে আসলে কেউ নেই। তোমাদের কেবল তোমরাই নিয়ন্ত্রন করতে পার।
এই বলে মুকুট আর রাজদন্ড নিয়ে রাজা রাজপ্রাসাদে ফিরে গেলেন। আর উপস্থিত সবাই নিজ নিজ কাজে রওয়ানা হল।
আর ফেরার পথে সবার নিজেকে রাজা মনে হল যার এক হাতে মুকুট আর অন্য হাতে রাজদন্ড।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন