|
হঠাৎ ধুমকেতু
|
|
বুয়েটের প্রথম সেশনাল ক্লাস।
19 October 2014, Sunday
বুয়েটের প্রথম সেশনাল ক্লাস। এক ভদ্রলোক দেখি ক্লাস নিতে এসেছেন। ভদ্রলোক কে আমি চিনি। হুমায়ুন আহমেদের অসম্ভব জনপ্রিয় নাটক অয়োময়ে তিনি অভিনয় করেছেন। আগের দিনের জমিদার রা স্ত্রী, রক্ষিতা, বারবণিতা ছাড়াও প্রাসাদের বাঁদি দের সাথেও মিলিত হতেন। সেই মিলনের ফলে বাঁদি’র ঘরে যে সন্তান আসত তার পরিচয় হত বাঁদি’র ছেলে। জমিদারের ছেলে নয়! সেই বাঁদি’র ছেলেও জমিদার বাড়িতেই থেকে যেত।তবে জমিদার তনয় হিসেবে নয়। দাস হিসেবে! সেরকম ই এক বাঁদি’র ছেলে মতি। জমিদার ছোট মীর্জা যখন তার পত্নী’র সাথে পালঙ্কে ঘুমায় দাস মতি তখন পাঙ্খা টানে। সারারাত পাঙ্খা টেনে জমিদার এবং জমিদার পত্নীর সুখনিদ্রা এবং সুখপ্রণয় নিশ্চিত করে।
অয়োময় নাটকের ‘পাঙ্খা টানক’ মতি চরিত্র অসাধারণ ভাবে রুপায়ন করা ডক্টর ইনামুল হক আমাদের ক্লাস নিতে এসেছেন! অসম্ভব শ্রদ্ধায় আমার মাথা নুয়ে এল। দেখলাম মানুষ টা একেবারেই শিশুর মত সরল সোজা। হাসিতে একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব! পরিচিতিমূলক প্রথম ক্লাসের শেষে আমাদের বললেন- আজকের ক্লাসের অভিজ্ঞতা আগামী ক্লাসে সবাই কাগজে লিখে আনবে।
পরে স্যার আমাদের থিওরি ক্লাস নিয়েছেন। সিরামিক্স পড়িয়েছেন। এখনো চোখে ভাসে- ওএবি বিল্ডিং এর ক্লাস রুমে স্যার হাসি মুখে চেয়ারে বসে আছেন। স্যারের সামনে টেবিলের উপর বিশাল আকারের একটা বই।মলাটের লাল রঙ জ্বলে যাবার কারনে বই টাকে মনে হচ্ছে থান ইটের মত! স্যার আমাদের পড়াচ্ছেন। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে গল্প ও করছেন একটু আধটু!
আমাদের ক্লাসের নোমান(রোল নম্বর ৫৭) একদিন পনের মিনিট লেট করে কাঁপতে কাঁপতে ক্লাসের দরজায় এসে দাঁড়াল- ‘স্যার! রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম স্যার! আমি মীরপুর থেকে আসি!’ নোমানের চেহারায় স্পষ্ট সে কোন মিথ্যে অজুহাত দিচ্ছে না।
স্যার হেসে নোমান কে ক্লাসে ঢুকতে বললেন। বললেন- যানজট হলে তুমি ত আর উড়ে আসতে পারবে না!
পাশ করার অনেকদিন পরে বেইলি রোডে স্যার দের গ্রুপের নাটক ‘প্রাগৈতিহাসিক’ দেখতে গেছি। স্যার দেখি হলের বাইরে বসে টিকেট বিক্রি করছেন। আমি গর্বে বুক এক হাত ফুলিয়ে স্যার কে সালাম দিয়ে বললাম- স্যার আমি আপনার ছাত্র। বুয়েটের!
স্যার হাসলেন। শিশুর মত সরল হাসি। আমার হাতে টিকেট দিতে দিতে বললেন- যাও। নাটক দেখ!
এই নাটকে স্যারের মেয়ে হৃদি হক পাঁচি চরিত্রে অভিনয় করে। নাটক দেখে পাঁচি কে পাঁচি ই মনে হয়! মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পেরেছেন পাঁচী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কতটা কল্পনা শক্তি দরকার। কতটা অনুভব শক্তি দরকার!
স্যারের কথা মাঝে মাঝেই খুব মনে হয়। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝতে পারি বাংলাদেশের এবং বাংলা ভাষার শুদ্ধতম চরিত্রাভিনেতা’র একজন আমাদের প্রিয় ইনামুল হক স্যার।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন