|
হঠাৎ ধুমকেতু
|
|
করিম ভাই এর দোকানদারি (রম্য রচনা)
24 September 2014, Wednesday
অফিসে আমার সামনের চেয়ারে মুখ গোমড়া করে বসে আছেন করিম ভাই। আমার একটার পর একটা ফোন আসছে। করিম ভাই কে সময় দিতে পারতেছি না। করিম ভাই এক পর্যায়ে চরম বিরক্ত হয়ে গাল ফুলিয়ে বললেন- খালেদ আমি আজকে উঠি। তুমি ব্যস্ত মানুষ। তোমাকে অনেক বিরক্ত করলাম!
আমি হাতের ইশারায় করিম ভাইকে বসতে বললাম। আমি করিম ভাইয়ের ভক্ত। ‘এই রাগ এই পানি’ টাইপ সহজ সরল ভালমানুষ আমার করিম্বাই!
করিম ভাই ‘উঠা এবং বসার মাঝামাঝি’ ভঙ্গি করতে করতে অভিমানী গলায় বললেন- কাল্কেই সবগুলো দোকান বন্ধ করে দিব শালার!
আমি বললাম- শালার দোকান মানে? আপ্নে ত বিয়াই করেন নাই করিম্বাই!
করিম ভাই ঝামটা দিয়ে বললেন- ধুর মিয়া তুমি ত কথাই বোঝ না। শালার দোকান মানে ‘আমার দুলাভাইয়ের শালা’র দোকান! মানে আমার দোকান!! দোকানে প্রতিদিন মাল উঠাই। কিন্তু মাল বিক্রি হয় না।
আমি এবার সত্যি সত্যি বিভ্রান্ত হলাম। মোবাইলে আরেকটা কল আসছিল। মোবাইল সাইলেন্ট করে দিলাম। করিম ভাইয়ের চোখে চোখে তাকিয়ে বললাম- বিখ্যাত মুবাইল কোম্পানির টেকনিকেল ডিরেক্টরি বাদ দিয়ে আপনি আবার মালের দোকান কবে দিলেন?
করিম ভাই নিজেই আমার পিয়ন কে ডেকে আমাকে সহ চা দিতে বলে হাসি হাসি মুখে বললেন-আমার তিনটা দোকান। তিনটা দোকানেই রেগুলার মাল উঠাই। কিন্তু মাল চলে না!
চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমি এবার চেয়ারে সোজা হয়ে বসলাম।করিম ভাইয়ের চোখে চোখে তাকালাম। ভাইয়ের চেহারায় একই সাথে হতাশা, একই সাথে কৌতুক খেলা করছে! আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কোন একটা বিষয় মানুষ টাকে গভীর ভাবে আহত করেছে। সেই আঘাত কাটিয়ে উঠার জন্য সহজ সরল মানুষ টা হতাশ হবার ঘটনা টা কে এক ধরনের কৌতুকে রূপ দিতে চাচ্ছেন । আমার করিম ভাইয়ের জন্য মায়া হল। আমি করিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দয়ার্দ্র গলায় বললাম- করিম্বাই!বলেন আপনার দোকান কোথায়, দোকানে কি মাল বেচেন তাও বলেন! দেখি আপনার জন্য কিছু করতে পারি কিনা।
এবার যেন রাগে ফুঁসে উঠলেন করিম ভাই! বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললেন- শালা তুমি ও ত আমার দোকানের মাল কিন না! দোকানের সামনে দিয়া খালি ঘুর। মাল দেখে চোখ টিপে হাস!! তারপর অন্য দোকানে চলে যাও।
আমি বললাম- করিম্বাই, আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতেছি না। অফিস সামলাইতে আমার জান বাইর হইয়া যায়। কিনাকাটা যা করার আমার বৌ করে। আপ্নার দোকানের সামনে ঘুর ঘুর করার টাইম কই আমার?
করিম ভাই টেবিলে চাপড় মেরে তোতলাতে তোতলাতে বললেন- তু তুমি না আমার ফে ফেস বুক ফেফ... ফ্রেন্ড! আজ পর্যন্ত আমার কোন লেখায় লাইক দিছ? কমেন্ট দিছ?? ইমো দিছ???
এবার আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। ফেসবুক কে দোকান বলছেন করিম ভাই! আর ফেসবুকে আপলোড করা তাঁর ছবি গুলো, স্ট্যাটাস গুলো হচ্ছে দোকানের মাল!!
আমি চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করলাম- তা করিম ভাই, ফেসবুক না হয় একটা দোকান। বাকী দুইটা দোকান কোথায়?
করিম ভাই চাপা অভিমানী গলায় বললেন- নিজের টাইম লাইন ছাড়াও ফেসবুকের একটা সাহিত্য গ্রুপে লিখি। একটা ব্লগে লিখি! মিয়া, তুমি সবখানেই ঘুরাফিরা কর!!
আমি মুখে কপট গাম্ভীর্য এনে বললাম- মাল কোথাও চলেনা করিম ভাই?
করিম ভাই আবার খেপে গেলেন! বললেন- তোমার মত কুলাঙ্গার রা যার বন্ধু তার মাল চলে কেম্নে? তার দোকান বন্ধ করে দেয়াই ত উচিত!
সত্যি বলতে কি, মানুষ ‘করিম্বাই’ কে মেলা পছন্দ করলেও উনার লেখাগুলো আমার কেমন যেন একটু ইয়ে ই লাগে! কিন্তু তাই বলে উনি অভিমান করে লেখা বন্ধ করে দেবেন সেটাই বা কেমনে মেনে নেই। দেশের প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ‘সাহিত্য বুক’ যে করিম ভাই কেই খুঁজছে না তাই বা কে হলপ করে বলতে পারে!
কাজেই আমি করিম ভাইয়ের পিঠে হাত রাখলাম। স্নেহের স্বরে বললাম- করিম্বাই! বাই!! সাহিত্য দু দিনের জিনিষ না। আপনি কি জানেন রবিনশন ক্রোশোর মত অসাধারন উপন্যাস প্রকাশক প্রথমে ছাপাইছিল না? এদেশে নতুন প্রজন্মের কয়জন ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ উপন্যাসের নাম শুনেছে?
করিম ভাই তোতলাতে তোতলাতে বললেন- তু তুমি যেগুলা ব ব বললা সেগুলার নাম ত আ আমিও শুনি নাই!
আমি এবার করিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললাম- সাহিত্য লিখার আগে ভাল ভাল সাহিত্য কিছু পড়েন করিম ভাই। আপনার লিখার হাত আছে। কিন্তু ভাল সাহিত্য পড়া না থাকার কারনে আপনার লিখা গুলো ফুল হয়ে ফুটতেছে না। দোকান ও চলতেছে না!
করিম ভাই অনেক্ষন শুন্য চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর চোখের পাতা দু’বার পিট পিট করলেন। তারপর বললেন- মিয়া, যেই কথাগুলো মুখে বললা সেই কথাগুলো ত আমার লেখার নিচে কমেন্ট আকারে দিতে পারতা। তাইলেও ত আমার মনে একটা শান্তি থাকত, তোমার মত বিশিষ্ট সাহিত্য পন্ডিত(!) আমার লেখায় কমেন্ট দিছে!!
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন