|
অপু তানভীর
|
|
গল্পঃ আমার বেকুব-ই বেলা
02 September 2014, Tuesday
ফেসবুকে লগিন করতে গিয়ে আরেকবার ভাবলাম ! শয়তানি টা করবো কি না বুঝতে পারছি না । একবার মনে হল নাহ, এমন টা করা ঠিক হবে না । কাউকে না বলে তার ঘরে ঢোকা যেমন অন্যায়, তেমনি কাউকে না জানিয়ে তার প্রোফাইলে ঢোকাও অন্যায় !
ঠিক তখনই আবার মনে হল, কিন্তু যদি সেই মানুষ নিজের ঘরের চাবি অন্যের হাতে তুলে দেয় তাহলে কি ঘরে ঢোকা যাবে না ? আমি কিছু হাত না দিলেই হল !
আর কোন কিছু চিন্তা করলাম না !
ইমেল এর জায়গায় লিখলাম নাওরিন নাহিন এট ইয়াহু ডট কম ! এবার পাসওয়ার্স !
মনে আছে তো ?
সহজ কয়েকটা নাম্বার ! লিখে দিলাম ! লগিন বাটনে চাপ দিতেই কাজ হয়ে গেল !
নাওরিন নাহিনের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে পড়লাম !
আহা ! দেখতে তো চমৎকারই মেয়েটা ! অবশ্য সরাসরি দেখতেও বেশ সুন্দরই । তবে আমি পেছন দিকে বসে ছিলাম বিধায় ভাল করে দেখতে পারি নি ! এখন বেশ ভাল করেই দেখা যাচ্ছে ।
স্ক্রল করে বেশ কিছু স্টাটাস পড়লাম ! কিছু সবি দেখলাম ! প্রোফাইলের ইন্টারেস্ট, লাইকস সবই দেখতে লাগলাম আস্তে আস্তে করে !
এবার মেসেজ !
না ! মোটেই না ! কারো ব্যক্তিগত মেসেজ পড়া ঠিক না ! মোটেই ঠিক না !
তানভীর ভাল হয়ে যাও ! বলছি ভালো হয়ে যা !
কয়েকবার নিজেকে ধমক দিলাম কিন্তু বদ তানভীর কিছুতেই শুনলো না ! মেসেজ বক্সে ঢুকেই পরলো !
হুম দেখা যাক ! কোথায় আছে ?
বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবীর সাথে ক্যাজুয়াল কথা বার্তা ! আর কিছু না ! একটু পড়াশুনা করলাম ! ক্লাসের বই পড়তে ভাল না লাগলেও অন্যের মেসেজ পড়তে ভালই লাগে !
এই তো পেয়ে গেছি । নাওরিন নাহিন তার এক বান্ধবীকে তার মোবাইল নাম্বার দিয়েছে । এই তো কিছুক্ষন আগেই ! যাক ভাল ! আমি দেরি না করে নাম্বার টা টুকে নিলাম ! তারপর নিজের আইডি থেকে নাওরিন কে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম ! এবং নিজেই সেটা গ্রহন করে নিলাম নাওরিনের আইডি থেকে !
এখন অপু তানভীর ইজ ফ্রেন্ড উইথ নাওরিন নাহিন !
হিহিহিহিহিহি !
নাওরিন নাহিনের খোজ কেমন করে পেলাম ? বলা যায় এটা খনিকটা ভাগ্য গুনেই পেয়েছি ! আজকে ক্লাসে যাওয়াটা বিরাট এক ভুল ছিল ! দু ঘন্টা জ্যামে আটকে যখন ক্লাসে পৌছালাম তখন ক্লাসের অর্ধেক টা হয়ে গেছে । বিরক্ত হয়ে ক্লাস করতে শুরু করার আগেই শেষ হয়ে গেল ! এবং ম্যাডাম জানালো যে আজকে আর কোন ক্লাস হবে না ! আজকে নাকি ক্যাম্পাসে সেমিনার আছে কিসের না কিসের উপরে !
বিরক্তির সীমা রইলো না ! আমার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম ! আবার সেই জ্যাম !
বাসে বাসে ঢুলতে ঢুলতে আসতেছি তখন বাস সিটি কলেজের সামনে এসে দাড়ালো ! মর্নিং সিফট ছুটি হয়েছে কেবল ! মেয়েরা কিছু উঠলো বাসে ! তবে বেশির ভাল সিটই ফাঁকা ! আমার সামনের সব গুলো সিট ফাঁকা ! সামনের কয়েকজন এদিক ওদিক বসে আছে ।
তখনই মেয়ে দুটো কে উঠতে দেখলাম । এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আমার দিকে চোখ পড়লো একজনে ! তারপর চোখ সরিয়ে নিল ! এবং বসার জায়গা খুজতে খুজতে আমার সামনেই সিটের এসেই বসলো ! আমি পা তুলে বসে ছিলাম, পা নামিয়ে বসলাম ! হাজার হোক মেয়েদের সামনে অভদ্র হয়ে বসে থাকা যায় না !
বাস চলতে শুরু করলে মেয়ে দুটো কথা শুরু করলো ! কত কিসিমের কথা রে ভাই ! একবার মনে আরও পেছনে চলে যাই ! এতো বকর বকর ভাল লাগছে না । যাবো যখন মনস্থির করলাম তখনই একজন আরেকজন কে বলল
-এই তোর মোবাইল টা দে তো !
-কেন ?
-আমার টাকা শেষ । একটু ফেসবুকে ঢুকবো !
-এই নে !
মেয়েটা নিজের সামনে মোবাইল ধরে ফেসবুক অন করলো ! মেয়েটা মোবাইলটা এমন ভাবে ধরেছিল যে আমার সিট থেকে মেয়েটার মোবাইলের স্ক্রিন একেবারে পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল ! আমি এক ভাবে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম ! মেয়েটি নিজের আইডি দিল । এবং যে পাসওয়ার্ড দিল সেটাও দেখলাম কি-প্যাডের প্রতিটি টাচ স্পষ্ট করে দেখতে যাচ্ছিলাম ! এবং সত্যি বলতে কি এতো সহজ যে মনের ভিতর সহজেই ঢুকে গেল ! পেয়ে গেলাম তার আইডি আর পাসওয়ার্স !
রাতের বেলা নাওরিন নাহিন আমাকে নক করলো !
-হ্যালো !
-হাই !
সে বলল
-আমি তো ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না ! আপনি কে বলেন তো ?
-আশ্চর্য আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করলেন আর আপনি জানেন না আমি কে ?
-আমি ? কখন ?
-আজকেই তো ?
-কই না তো ? আপনাক নতুন দেখছি ! আপনাকে আমি ঠিক চিনতে পারছি না !
আমি বললল
-আপনি আপনার এক্টিভিটি লগ চেক করে দেখেন !
নাওরিন কিছুক্ষন কি করলো যেন ! একটু পরে একটা অবাক হওয়ার ইমো দিল ! তারপর বলল
-আপনাকে আমি সত্যিই চিন্তে পারছি না !
-তবে আমি কিন্তু তোমাকে ঠিকই চিনি !
-তুমি ? আপনি থেকে তুমি ?
-আসলে তোমাকে চিনি তো আর তুমি আমার থেকে ছোটই হবে ! তোমাকে তুমি করে বলি ?
-কিভাবে চিনেন বলেন ?
আমি আস্তে আস্তে বেশ কিছু কথা বললাম ! সব গুলোই আমি ওর মেসেজ থেকে জেনেছি । সাথে সাথে ওর ইনফো থেকেও কিছু নেওয়া ! সব শেষে বললাম যে ওর মোবাইল নাম্বারও আমার কাছে আছে !
নাওরিন এটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না ! কিন্তু যখন ফোন দিলাম ওকে ও সত্যি সত্যই অবাক হল বেশ ! মানে ওর কন্ঠ স্বর শুনে তেমন মনে হচ্ছিল !
সেই দিন থেকেই শুরু ! ওর সাথে টুকটাক কথা শুরু করলাম ! মেয়েটা তো কিছুতেই আমার সাথে কথা বলবে না কিন্তু কিভাবে ওর সম্পর্কে এতো কিছু জানলাম এটা না জেনেও মেয়েটা শান্তি পাচ্ছিলো না ! এভাবেই কথা চলতে থাকলো ! আস্তে আস্তে মেয়েটা স্বাভাবিক ভাবে কথা শুরু করলো ! আমি কোথায় থাকি কি করি সব কিছুই মেয়েটার সাথে শেয়ার করার পরে মেয়েটা কথা বলতো ! আমি ফোন দিতাম মেয়েটাও মাঝে মাঝে দিত ! এভাবে দিন ভালই যাচ্ছিল !
তবে প্রতিদিন সে আমার কাছে একই প্রশ্ন করতো ! আমি কিভাবে তার পরিচিত হলাম, তার ফেসবুক ফ্রেন্ডই বা কিভাবে হলাম ! একদিন মনে হল মেয়েটা সত্যি সত্যি বলেই দেই ! এমন করে আর কত দিন !
ক্লাস শেষ করে বাসায় আসছিলাম । ওদের কলেজের সামনে এসে ফোন দিলাম !
-কোথায় তুমি ?
-এই বাইরে বের হচ্ছি ! কলেজ ছুটি হল মাত্র !
-সাথে কেউ আছে ?
-কেউ বলতে ?
-না মানে তোমার বন্ধুরা ?
-কেন বলুন তো ?
-আসলে আজকে তোমাকে সত্য কথাটা বলতাম ! কিভাবে তোমাকে চিনি ? কিভাবে তোমার নাম্বার পপেলাম ! এই !
-ও ! তা বলুন !
-না মানে তোমাকে লাঞ্চ করাতাম ! যদি আপত্তি না থাকে !
কিছুক্ষন নিরবতা ! তারপর নাওরিন বলল
-আচ্ছা ! আমি ওদের কে কাটিয়ে আসতেছি ! কোথায় আসবো বলুন ?
-স্টারে আসো !
-ওকে !
একটু অন্য রকমই লাগছিল ! দেখলাম নাওরিনও একটু যেন অস্বস্থিতে আছে । বিশেষ করে আসে পাশে অনেকেই ওদের কলেজের ছেলেমেয়েরা রয়েছে । আমরা কোনার দিকে একটা টেবিলে বসে কাচ্চি দিতে বললাম !
-আচ্ছা এবার বলুন !
-শুনবেই ?
-হুম ।
-আসলে একটু ভয়ে আছি যে তুমি আবার রাগ না করো ?
-আমি তো জানি আপনি রাগ করার মত কোন কাজই করেছেন । কেবল জানতে চাচ্ছি কিভাবে করেছেন !
-বলবো ?
-হুম ! বলুন !
কাচ্চি চলে এল ! খেতে ওকে সব কিছু বললাম ! বারে বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ও ওঠে চলে যাবে । কিন্তু নাওরিন আস্তে আস্তে খেতে লাগলো ! আমি চুপকরে রইলাম ! এক সময় নাওরিন বলল
-এটা কি আপনি ঠিক করেছেন ?
-নাহ !
-তাহলে এখন আপনার কি শাস্তি পাওনা বলুন ?
-আমি জানি না !
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নাওরিন বেশ জোরেই হেসে ফেলল ! আমিও খানিটা অবাক হলাম ! হাসার মত এমন কি বললাম !
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনারা ছেলেরা নিজেদের কে খুব বুদ্ধিমান মনে করেন,তাই না ?
-মানে কি ?
-মানে এতোই সহজ ? একটা মেয়ে কি এতোই গাধা যে নিয়ে আইডি পাসওয়ার্ড এতো সহজে কাউকে দিয়ে দিবে ? কিংবা হাত ছাড়া হয়ে যাবে ? আমি জানতাম না আপনি আমার পিছনে আছেন ?
-তাহলে ?
আমি চোখ বড় বড় করে নাওরিনের দিকে তাকিয়ে আছি !
নাওরিন বলল
-আমি ইচ্ছে করে আপনাকে আমার আইডি পাসওয়ার্ড দিয়েছি ! বুঝছেন ? আমি এমন ভাবে মোবাইল টা ধরেছিলাম যাতে আপনি সেটা দেখটে পারেন !
-মানে কি ?
-জি এটাই মানে ! আমি তো জানতাম । আপনার চেহারায় লেখা ছিল আপনি ঠিকই আমার আইডিতে ঢুকবেন !
-চেহারায় লেখা ছিল ?
-জি জনাব ! লেখা ছিল !
-তাই বলে অপরিচিত একজন কে নিজের আইডি দিয়ে দিবে ?
-ওটা আমার আসল আইডি না ! এমনি এমনি খুলেছিলাম ! আর যে মোবাইল নাম্বার টা দিয়েছি ওটাও সব সমসয় বন্ধই থাকতো ! কেবল আপনার জন্য চালু করেছিলাম !
নাওরিন খেতে খেতেই হাসতে লাগলো ! আমি বেকুবের মত ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম !
নাওরিন বলল
-হা করে কেন তাকিয়ে আছেন ! খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো !
আমি চুপচাপ খাওয়াই মন দিলাম ! এই বদ মেয়ে আমাকে কিভাবে বেকুব বানালো ! এখন আবার দাঁত বের করে হাসতেছে !
শানে নূযুলঃ আজকে বাসে করে এমন করে একজনের আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করতে দেখলাম ! পাসওয়ার্ড টা দেখতে পেলাম পরিস্কার ! মনে হল একবার লগিন করেই দেখি ! কিন্তু বাড়ি আসতে আসতে সেটা ভুলে গেছি !
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন