|
খেয়া ঘাট
|
|
এক মিনিটের গল্প -আশা।
31 August 2014, Sunday
উজ্জ্বল শান্তির মতো নেই আমাদের আর এখন কোনো রাত্রি দিন। সময়ের সুদীর্ঘ শরীর যেন রক্তে লাল বর্ণ।বাতাসের কন্ঠে জন্তুর আর্তনাদ। সবুজাভ বৃক্ষ বজ্রবাতাসের ঝড়ে আজ অন্তর্লীণ। এমনি পরিবেশে জীর্ণ শীর্ণ ছোট একটি ঘরের ভিতর জ্বলছে চারটি প্রদীপশিখা।
প্রথম প্রদীপ শিখার মন আজ খুব খারাপ। নিজের ওপর যেন সে নিজেই বিরক্ত। মরে গেলেই মুক্তি হতো। যে বসতকুন্জে ভালোবাসা নেই সেখানে ভালোবাসার প্রদীপ কেমন করে জ্বলবে। আমি ভালোবাসা শিখা আজ আত্মাহুতি দিলাম। নিভে গেলো প্রথম ভালোবাসা শিখা।
২য় প্রদীপ শিখাও কেঁদে ওঠে। গোঙাগীর শব্দ চারপাশটাকে কেমন যেন বিষাদময় করে তোলে। আমি শান্তি প্রদীপ শিখা। আজ চারপাশে শান্তি কই। যেখানে পরস্পরের ভালোবাসা নেই, যেখানে যুদ্ধ করতে করতে, ঘৃণা দেখতে দেখতে, লোভের কথা শুনতে শুনতে ভালোবাসার শিখা আত্মাহুতি দেয়।সেখানে আমি শান্তি প্রদীপ কেমন করে জ্বলি। ঠিক সে মহুর্তে সমস্ত বিশ্বাসের জানালার ভিতর দিয়ে নেমে আসে এক দমকা হাওয়া। শান্তি প্রদীপ কেঁপে কেঁপে ওঠে। তারপর নিভে যায় শান্তি প্রদীপ শিখা।
বিশ্বাস শিখা তখন এসব কিছু চেয়ে চেয়ে দেখে। নিজের চোখের সামনেই আপন দু সহোদরদের মৃত্যু। মনের ভিতর হাহাকার করে ওঠে। নিজের সাথে শুরু হয় তার নিজের যুদ্ধ। অবিশ্বাসের হিংস্ররুপ বারবার হানা দেয় বিশ্বাসের প্রজ্জ্বলিত শিখায়। একসময় বিশ্বাসেরও শ্বাস রোধ হয়।
এবার সবকিছু অন্ধকার। সময়ের আর নেই কোনো রাত্রি দিন। শুধু টিম টিম করে এক কোনে জ্বলছে একটি নিঃসঙ্গ একাকী প্রদীপ শিখা।
সে একা একা ভাবে। সবকি তবে শেষ হয়ে যাবে? কিছুইতো ভালো করে দেখা যায়না। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। বাড়ছে ভয়। অগুনিত শৃগাল,কুকুর,হায়েনা, সরিসৃপ,ব্যাঙ,গিরগিটি সহ নানা জন্তুর বিকট চীৎকার।সাপের হিঁস হিঁস শব্দ। এরা সবাই একদিন মানুষ ছিলো। একজনও কি নেই। ছোট একাকি শিখা একা একা ভাবে।
ঠিক এমনি মুহুর্তে ঘরে ঢুকে এক শিশু। ধীরে ধীরে একাকি আলো'র শিখার দিকে এগিয়ে আসে।তারপর বলে, তুমি কে ভাই? একা একা জ্বলছো? আমার যে খুব ভয় লাগছে।
কোনো ভয় নেই। নাম বলছি পরে। তুমি আমার কাছে এসো।আমাকে তোমার হাতে নাও। এইযে আমার সহোদরদের সবাই মৃত পড়ে আছে। ওদের যত দ্রুত পারো জাগাও ভাই।
ছোট শিশুটি ধীরে ধীরে ভালোবাসা, শান্তি আর বিশ্বাসের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়।
বাহঃ।পুরো ঘরটিই আবার আলোকিত হয়ে ওঠছে। তা তোমার নামটি বলো ভাই।
আমি হলাম, আশার ছোট এক প্রদীপ শিখা। এবার আশার শিখা শিশুটিকে বলে-
যতদিন জেগে থাকবে ছোট এক টুকরো আশা,
ততদিন বেঁচে রইবে শান্তি, বিশ্বাস আর ভালোবাসা।
এবার চারটি প্রদীপ শিখা শিশুটিকে বলে- ওপরের দিকে তাকাও।
শিশুটি দেখে ঘরের ভিতর ঝলমল করে হেসে ওঠেছে একটি দেশের লাল-সবুজের স্বাধীনতার পতাকা।
আমাদেরও একটুকু আশা এখনো জেগে আছে। নতুন শিশুরা সমস্ত স্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে আবার একদিন মৃত ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর শান্তির প্রদীপগুলো আশার আলোতে জ্বালিয়ে দিবে। আর সে আলোতে ঝলমল করে ওঠবে আবারো একটি লাল সবুজ পতাকা।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন