|
ডি মুন
|
|
একটি সাধারণ আটপৌরে গল্প
27 August 2014, Wednesday
দীর্ঘ অন্ধরাতে সে জ্বালিয়েছে অশ্রুগোলাপ। দেয়ালে বিষণ্ণ মাকড়সার দীর্ঘশ্বাস। উত্তরের খোলা জানালায় একঝাক নির্জনতা। দক্ষিণের বন্ধ দরজায় দাঁতকপাটি মেরে পড়ে থাকা নিশ্চল কিছু মুহূর্ত। আর সম্মুখে তাকভর্তি এলোমেলো গল্পের হাঁটাচলা। ছিটকে বেরিয়ে আসা দু'একটা বিরহী গানের সুর কিংবা কবিতার ঘুনেকাটা সুপরিচিত গন্ধ। পেছনে অব্যর্থ ইটের দেয়াল। শক্ত। নির্মম। আর পূর্বেই জানিয়েছি, সে দেয়ালে এখন শুধুই বিষণ্ণ মাকড়সার দীর্ঘশ্বাস। অথবা টিক টিক শব্দ। বলছিলাম,দীর্ঘ অন্ধরাতে সে জ্বালিয়েছে অশ্রুগোলাপ। আর তার বুকের ভেতরটায় একটা আগুনমুখো রমণীর মুছে যাওয়া ছায়া। গল্পটার এভাবেই আরম্ভ।
কিছু ভালোলাগা মুহূর্ত জমে যায় রঙিন চশমায়। এলোমেলো গল্পের মধ্যভাগ আনন্দময় হয়ে ওঠে অহেতুক আবর্তনে। অবশেষে আবারো সেই সাদাকালো ফ্রেম। জীবন বদলায় না। আমরা ভুল ভাবি। আসলে সবাই আকাশের মতো একা। নিজের ভেতরে আবিষ্কার করা এক অদ্ভুত ঘ্রাণ। অচেনা স্বাদে তেতো হয়ে যাওয়া চেনা অনুভূতি।
অপরিপক্ক আবেগেরা আপতত নির্বাসনে। কবিতার বই থেকে মুছে যাক অশ্রুভেজা দাগ। ভালো লাগে না কিছুই। সে ভীষণ একা। তার ঘরে কেবলই গোলাপপোড়া গন্ধ। অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া আগামী। অস্ফুট বেদনার বুদবুদ আর সদা-সংক্রমিত অবসন্ন হৃদয়। রমণীয় মুখটি ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসে নোনাজলে। বা হাতে বিচ্ছিন্নতার ক্ষত।
শহুরে ব্যস্ততা পকেটে করে অবিরাম ছুটে চলা। বৃষ্টিভেজা ফুটপাতে পড়ে আছে দু’একটা বর্ষাকদম। খালি পা। অদ্ভুত সমীকরণে মলিন জীবনরেখা। রুগ্ন সব ইচ্ছেরা আজ মৃত। পকেটের সুগন্ধি রুমালে মুছে যায় বৃষ্টির শেষ কণা। রুমালটা রমণীয় দান। ভালোবাসা কিংবা ওরকম কিছু একটা লেগে আছে তাতে। ফিরিয়ে দেয়া হয় নি। কিছু জিনিস ফিরিয়ে দিতে নেই। ঠিক যেমন স্মৃতিগুলো শুধু আহত বুকে ফেরি করে ফেরে অহেতুক অপেক্ষা। যেন পুকুরের জলের উপর দিয়ে উড়ে গেছে শিকারী পাখি। ছায়াটুকু বুকে করে জলাশয় এখনও নিস্তব্ধ। আগুনমুখো রমণীর আগুনের উষ্ণতা অন্তর্হিত। এখন সেখানে দহনের বিষবাষ্প। প্রেম নেই। শুধু কামনার কর্মীতে জ্বলজ্বলে জলসাঘর।
মানুষটার প্রত্যাশার ঘরে বছরের পর বছর ধরে কেবলই মধ্যরাত জমে যায়। দৃশ্যমান সকল বস্তুতে সে দেখতে পায় আগুনমুখো রমণীর কমনীয় প্রতিচ্ছবি। টেবিল ল্যাম্পের নিচের আলোটুকু ছাড়া কেউ জানেনা চোয়াল বেয়ে নোনাজল পতনের শব্দে কতোটা দহনের ক্ষত লেগে থাকে। শুধু টেবিলের উপরে নির্বিকার পড়ে থাকা কলমটা নির্বাক। ভেতরে সকল গতিসূত্র বিলুপ্ত। মানবিক রসায়ণ ও আবেগের ঘেরাটোপে আঁটকে পড়া বিষণ্ণ মানুষটা শুধু আগুনমুখো রমণীর ছায়া নিয়ে নিশ্চুপ। ওষুধের ড্রয়ারে জমে থাকা রক্তাক্ত পাহাড়। আর ঘরভর্তি গোলাপপোড়া গন্ধের উন্মাদনা।
বলছিলাম,দীর্ঘ অন্ধরাতে সে জ্বালিয়েছে অশ্রুগোলাপ। আর তার বুকের ভেতরটায় একটা আগুনমুখো রমণীর মুছে যাওয়া ছায়া। এবং গল্পটার এভাবেই সমাপ্তি
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন