|
অপু তানভীর
|
|
মেয়েটি অথবা কবির সাথে তার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প
24 August 2014, Sunday
-আচ্ছা আপনার ঘরে সব পুরুষ মশা নাকি মেয়ে মশা আছে ?
আমি প্রশ্ন শুনে হাসালাম । এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন সব প্রশ্ন করে যে না হেসে পারা যায় না ! যত সব উদ্ভট প্রশ্ন এই মেয়ের মাথায় আসে !
আমি বললাম
-কেন ?
-না ! আপনাকে মশায় কামড়ায় না তো ? আমার মনে হয় আমার এখানে সব পুরুষ মশা ! আপনার ওখানে সব মেয়ে মশা !
হেসে বললাম
-সব কামড় দেওয়া মশাই মহিলা মশা ! পুরুষ রা কামড়ায় না !
-ইশ ! কি কথা ! মহিলা মশা কি কথা ! বলেন মেয়ে মশা !
-কেন মহিলাতে সমস্যা কি ?
-সমস্যা আছে ! বলা যাবে না ! হুহ !
কদিন আগেও অদ্রির এরকম উদ্ভট উদ্ভট কথাতে বড্ড বিরক্ত লাগতো ! দুনিয়ার সব আজগুবি প্রশ্ন তার কাছে । প্রথম দিন যখন অদ্রির সাথে কথা হয় সেদিন বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম বেশ । তবে এটা নিশ্চিৎ মেয়েটা খানিটা ভড়কেও দিয়েছিল সেদিন । পরের দিন পরীক্ষা ছিল । বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ছিলাম । মোবাইল টা পাশেই ছিল । এমন সময় ম্যাসেঞ্জারের টোন বেজে উঠলো । কেউ মেসেজ দিয়েছে ।
অপরিচিত একটা আইডি ! নাম দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত মেয়ে ! সব থেকে অবাক লেগেছে তার কথা গুলো
"আপনার নাকটা সুন্দর। আয়নার সামনে গিয়ে নাকটা ধরে বলুন, গুলুগুলু বাবুটা"
মানে কি ?
কিছুক্ষন বোকার মত চেহে রইলাম মেসেজ টার দিকে । সমস্যা কি ?
রিপ্লাইয়ে লিখলাম
-সরি কে আপনি ? ঠিক চিনলাম না !
-চেনা লাগবে না ! কেবল শুনবেন ?
-আশ্চর্য ? কে আপনি ?
-বললাম না আমি কে সেটা চেনা লাগবে না ! কেবল শুনবেন ! ঠিক আছে । আর আজকের এটা কি কবিতা লিখেছেন ? জানেন আমি কবিতা টা পড়ে কতক্ষন কেঁদেছি ? তোমার জন্য সেই সে কথা, না বলাটাই থাক, তবুও যদি জীবন থেকে কিছুটা স্বপ্ন হারাক !
এই লইনের মানে কি ?
-কোন মানে নেই । কবিতার মানে থাকে না !
-না ! এমন টা হবে না ! এবার থেকে আর কষ্টের কবিতা লিখবেনা না ! অন্য কে কাঁদানোর কোন অধিকার আপনার নেই !
সত্যি কি চাই
তোমায় ছেড়ে, তোমার কথা শুলো !
আমার সকল স্বপ্ন গাথা, সকল রূপকথার গল্প
আজকে তোমার সাথেই হারালো !
তুমি যদি বুঝতে তবুও
যদি জানতে মেয়ে
একটি বারেও পিছন ফিরে আমার চোখটি দেকতে যদি চেয়ে !
-আচ্ছা কবি সাহেব আপনি কি কোন দিন ঘুরে ঘুমান বলেন ?
-মানে কি ?
-না মনে ডান দিকে ঘুরে নাকি বাঁ দিকে ঘুরে ?
-কেন ?
-আহা বলেন না ! চিৎ হয়ে হয়ে ঘুমান ?
-জি না ! আমি উপুর হয়ে ঘমাই !
-ইয়াক ! এমন টা কেউ করে ! শুনে ডান দিকে ঘুরে ঘুমাবেন আজ থেকে !
-কেন ?
-কারন আমি বাঁ দিকে ঘুরে ঘুমাই ! তাহলে আমরা মুখো মুখি হই ! হিহিহিহি !
######
-আচ্ছা জানেন ? আজকে একটা কাক এসেছিল আমার জানালায় ? কালো কুককুচে ! মনে হয় দাড় কাক ! বেশ বড় সাইজ !
-ঢাকায় দাড় কাক আছে নাকি ?
-নেই !
-মনে হয় নাই ! সব পুচকে কাক !
-আপনাকে বলেছে !
-তা কাক এসে কি করলো ?
-আমার সাথে অনেক কথা বলল ! চারিদিকে কি হচ্ছে ? আমি নিচে যাই না তো তাই আমাকে বাইরের খবর দিতে এসেছে !
-আপনি নিচে কেন যান না ?
-যাই না !
এই লাইনটা লেখার পরেই মেয়েটা কেমন চুপসে গেল ! কেন গেল ঠিক বুঝতে পারলাম না । অন্য দিন এমন হয় না স্বাধারনত । এতো কম কথা বলে না মেয়েটা !
#####
-কি ব্যাপার কোথায় ছিলেন গতকাল ?
আজকে আমি নিজেই নক দিলাম মেয়াটকে !
-কেন ?
-না, কালকে আর কোন কথা বললেন না যে ?
-আসলে এখানে বেশি রাত জেগে থাকার নিয়ম নেই ।জলদি জলদি ঘুমিয়ে পড়তে হয় !
-এখানে বলতে কোথায় ?
কোন কথা নেই ! আমার মনে হল মেয়েটা মনে হয় বলতে চায় না ! আমিও আর খুব বেশি জোড় করি না । মেয়েটা বলল
-আজকে আমাকে একটা কবিতা শোনাবেন ?
-কবিতা ?
-আনন্দের কবিতা ! কষ্টের না !
-আচ্ছা দেখি
তোমার পশে ছিলাম যেন তোমার পাশেই আছি
তোমার জন্য নিয়ে আসবো রয়েল বেঙ্গল খাসি !
-এই এটা কি লিখলেন ?
-কেন ? তোমার জন্য খাসী কিনে আনছি এটা আনন্দের কথা না ! খসীর মাংসের কেজি কত জানো ?
-আপনি খুব পঁচা ! আপনার সাথে কথা নেই ! আপনার সাথে আড়ি !
একটু একটু করে স্বপ্ন দেখেছি ! একটু একটু করে স্বপ্নটাকে সাজিয়েছি !
শুধু এমন দিনে !
তোমার মুখে একটুকরো হাসি ফোটাবো বলে !
বল তুমি কিভাবে মন খারাপের সাথে সন্ধি করবে ?
#####
কয়েকদিন পরেই মেয়েটি নিজের একটা ছবি দিল ফেসবুক ওয়ালে । সাদা ধবধবে একটা বিছানায় বসে আছে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ! কোলের উপর বালিশ তার উপর একটা ল্যাপটপ ! ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে । চেহারায় একটা ক্লান্তি ভাব থাকলেও আশ্চার্যএকটা দূত্যি ছিল । মুখের হাসিটাই বলে দিচ্ছিল যে এতো সহজে হার মানবো না আমি ! তবুও মেয়েটার ছবি দেখে খানিকটা মন খারাপ হয়ে গেল !
বুঝতে কষ্ট হল না সেদিন মেয়েটা কোথায় আছে এই কথা কেন বলতে চায় নি !
কি হয়েছে মেয়েটার ?
একবার মনে হল জানতে চাই । কিন্তু পরে মনে হল হয়তো মেয়েটা এই কথাটা আমাকে বলতেই চায় নি । যদি আমি নিজ থেকে জিজ্ঞেস করতে চাই তাহলে হয় তো কষ্ট পাবে !
একদিন মেয়েটি নিজ থেকেই বলল কথা টা !
-আজকে অনেক দিন পরে নিজের বাসায় এসেছি !
-এতো দিন কোথায় ছিলেন ?
-আপনি বুঝি জানেন না ?
কিছুক্ষন নিরবতা ! আমি জানি কিন্ত বলতে ইচ্ছে হল না ! কিন্তু তারপর মেয়েটা যা বলল তাতে আমি খানিকটা স্তব্ধ হয়ে গেলাম ! মেয়েটা খানিকটা অসুস্থ এটা আমি অনুমান করে নিয়েছিলাম কিন্তু এমন টা হবে কো দিন ভাবতেই পারি নি ।
কি একটা বিদঘুটে ইংরেজি নাম বলল রোগটার । সহজ বাংলা যাকে বলে ক্যান্সার ! প্রথম স্টেজে আছে । এতো দিন দেশেই চিকিৎকাস হচ্ছিল কিন্তু এখন বাইরে নিয়ে যাওয়া লাগবে । সপ্তাহ খানেকের ভিতর বাইরে যাবে এই জন্য আজকে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে ।
#####
-জানেন, আমি হয়তো নাও ফিরতে পারি ?
-ছি কি বলছেন এসব ! সবে তো প্রথম স্টেজ !
-আমি জানি ! তবুও ! এই জন্য আমাকে বাসায় আনা হয়েছে । সবাই আস্তে আস্তে আসছে আমার জন্য দেখা করার জন্য ! তাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমি মনে হয় কালকেই মারা যাবো ! হিহিহিহি !
-এটা কি হাসির কথা ?
-আমার কাছে মনে হচ্ছে ! সবার সাথে ভাল ভাবে যেন দেখা করতে পারি এজন্য সবার জন্য দিন ঠিক করা । এই যেমন বড় ফুপু ওমুখ তারিখ বিকাল তিনটা ! ছোট ফুপু বিকেল পাঁচটা ! মনে হচ্ছে আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী ! এটা আমার টাইম সিডিউল ! হিহিহিহি !
-খুব হাসি আসছে ?
-বারে আসবে না ! এতো গুরুত্বপূর্ন মানুষ আমি ! তবে যাওয়ার আগের দিন ঠিক করেছি আমি কারো সাথে দেখা করবো না !
-কেন ?
-ঐ দিন খুব বৃষ্টি হবে ! শেষ বারের জন্য হলেও ঐ দিন খুব করে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই ! আমি জানি ঐ দিন বৃষ্টি হবে খুব !
আমি চুপ করে রইলাম ! তারপর অদ্রি হঠাৎ করেই বলল
-আপনি ভিজবেন আমার সাথে ?
-আমি ?
-হুম ? ভিজবেন ?
####
-আফা ! আপনে বাইরে গেলে আমার চাকরি থকাবো না ! বড় সাহেবে আপনেরে গাড়ি থেইকা বাইর হইতে মানা করছে !
-ড্রাইভার সাহেব আব্বুকে কেউ বলতে যাচ্ছে না ! চিন্তা করবেন না !
ড্রাইভার সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম অদ্রির দিকে ! বললাম
-উনি তো ঠিকই বলছেন ! এই সময়ে বাইরের রোদের বের হওয়া ঠিক না !
অদ্রি আমর দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি ডাক্তার ? এমবিবিএস পাশ করেছেন ?
-এটা বলার জন্য তো ডাক্তার হওয়া লাগে না !
-শুনেন ! এমনিতেই ডাক্তারদের যন্ত্রনায়
আমি অস্থির আর কারো যন্ত্রনা চাই না ! আমি এখন রিক্সায় চড়বো ! ঠিক আছে ? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড না যে আপনার কথা আমি শুনবো ? আপনি আমার কথা শুনবেন !
কোন ভাবেই অদ্রিকে বোঝানো গেলো না ! শেষ মেষ এই ঠিক হল যে রিক্সায় চড়বো কিন্তু হুড তুলে । আমি জানি সেটাও সে শুনবে না ! আমরা যখন রিক্সায় উঠলাম ড্রাইভার সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখের ভাব টা করুন হয়ে গেছে । কোন ভাবে যদি অদ্রির বাসায় এটা জানে তাহলে তার চাকরি নট হয়ে যাবে ।
-বৃষ্টি হবে না তো মনে হচ্ছে !
রিক্সার হুড ততক্ষনে উঠে গেছে । অদ্রিকে প্রথমবারের মত দেখলাম সরাসরি কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে আমাকে যেন কত দিন ধরে চিনে । কালো রংয়ের একটা কালোয়ার কামজের সাথে কপালে কালো টিপ পরেছে । চুপ গুলো খোলা !
অদ্রি বলল
-আমি জানি বৃষ্টি হবে ! হবেই হবে !
এবং সত্যি সত্যি আমাকে অবাক করে দিয়ে আকাশ কালো করে বৃষ্টি চলে এল । রিক্সাওয়ালা কিছুক্ষন গাইগুই করছিল বৃষ্টিতে চালাবে না বলে কিন্তু পরে টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে রাজি হল !
অদ্রি আর আমি রিক্সায় বসে বসেই বৃষ্টিটে ভিজতে থাকলাম ।ওর মুখের বৃষ্টি পানি গড়িয়ে পরছিল ! আমার মনে হল
তোমার মুখের বৃষ্টির জল
যেন সকালের শিরির বিন্দু
অথবা রোদের চিকচিক কোন বালু কনা !
অদ্রি একটু একটু কাঁপছিল বৃষ্টির ঠান্ডা ফোঁটার কারনে । কিন্তু সেটা নিয়ে ওর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ! ওর মুখে একটা একটা অন্য রকম আনন্দ ছিল ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি তোমার হাতটা একটু ধরবো ?
অদ্রি বলল
-আমি তো ভাবলাম আপনি এই কথা বলবেনই না ! আমি আপনার জায়গায় হলে আরও আগেই ধরতাম ! আপনি এতো বোকা কেন বলেন তো ? একটা মেয়ে কি চায় বোঝেন না ?
-হুম ! একটু বোকাই !
-আচ্ছা ঐ যে তখন বললাম আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড না এটা শুনে রাগ করেছেন ?
-রাগ কেন করবো ? তুমি তমি তো সত্যি করাই বলেছো ?
-হবেন ?
-কি ? কি বললে?
অদ্রি অদ্ভুদ ভাবে হেসে বলল
-আপনি যে আমাকে তুমি করে বলতে শুরু করেছেন এটা কি আপনি লক্ষ্য করেছেন ?
-তাই নাকি ? আগে কি আপনি করে বলতাম !
অদ্রি আমার কথার জবাব না দিয়ে নিজের হাত টা বাড়িয়ে দিল !
আমি অদ্রির হাত ধরে বসে রইলাম । রিক্সা এখনই ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে দুজন মানুষ কে নিয়ে !
মাঝে মাঝে মনে গল্পের জীবন টা বাস্তবের মত না । কিন্তু সব গল্পের উৎস এই জীবন থেকেই। গতকাল রাতের একজন ফেসবুক ফ্রেন্ডের একটা স্টাটাসই তেমন এক জন অদ্রির কথা জানলাম ! মেয়েটা কেবল প্রথম স্টেজে আছে ক্যান্সারের ।
কবির সাথে তার কথপোকথন যেন কখনও থেমে না যায় এই কামনা করি !
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন