|
আপেক্ষিক
|
|
থ্রিলারঃ অসমাপ্ত
20 August 2014, Wednesday
গুরু
সেই ৩০ মিনিট আগে থেকেই শুরু।
চোখে কিছু দেখছি না। সব ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথার ভেতরে গরম হয়ে গেছে কানের কাছে চিনচিনে অনুভূতি। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে।সারা গায়ে ঘাম। আমি ঘেমে যাচ্ছি। আহহহ.... আহহহ..... আর পারছি না। ওহ ইয়েস!!! ওহ ইয়েস!!!! ইয়ে............!!"
আমি রিক্সাওয়ালার ফিলিংস টা এতক্ষন অনুভব করছিলাম। বেচারা সেই ৩০ মিনিট আগে আমাকে রিক্সায় নিয়েছে। এতক্ষন যেভাবে চালাচ্ছিল তাতে মনে হল যে তার প্রচন্ড হিসু চেপেছে এবং আর পারছে না। আশাপাশে বসার জায়গাও নাই। ধানমন্ডি জায়গাটাই এমন কোন প্রাইভেসি না যেখানে বসে আমার এই রিক্সাওয়ালারা হিসু করতে পারে। ওদিকে প্রেমিক প্রেমিকার জন্য ঠিকই চিপা আছে। ঠোট এ ঠোট, মাথায় মাথা লাগিয়ে তারা যে শান্তি পায় আমার মনে হয় তার চেয়ে এই রিক্সাওয়ালা ব্যাটা হাজার গুনে বেশি শান্তি পাচ্ছে হিসু করে। ড্রেনের উপরে গিয়ে সে বসে পড়ল আর আমি আমার রিক্সায় বসা ফারুর সাথে রোমান্স করতে শুরু করলাম।
-অ্যাই গালে একটা চুমো দাও না পিলিজ!!!
-তুমি এত্ত সেকেলে গালে চুমো দেব ক্যান আমি কি তোমার বড় বোন লাগি????
-ইয়ে মানে ইয়ে.... আমি এত স্ট্রেইট নাহ তো।
-তুমি একটা খ্যাত।
-আচ্ছা ঠিকাছে যাও আর গালে চুমো দিতে বলব না।
-এখন আবার বলো।
আমি এরপর সাহস সঞ্চয় করলাম। যা থাকে কপালে এবার চুমো দেওয়ার কথা যেখানে সেখানের কথাই বলব।
- জানু আমার কপালে একটা চুমো দাও
ফারুর চোখে আর তাকাতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল কেঁদে দিবে। আহহহ..... এই কথাটা এত পরে বললাম ক্যান আফসোস লাগছে। ওয়াও।
-তুমি একটা গাধা!!!
-কি করলাম আমি???
-কপালে কেউ চুমো দেয়। আল্লাহ আমারে ঊডায় নাও।
আরে কি কয়। আমার মুখে তো আর কোন জায়গাও নাই কপাল আর গাল ছাড়া। এই ফারু...এই......কাঁদছ ক্যান????
-স্যার কার লগে কথা কন?
আমি রিক্সাওয়ালার দিকে ফিরে আবার পাশে ফিরে দেখি কেউ নাই। তখনি মনে পড়ল ফারিয়া আমার বউ। ২ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। একটা ঘটনা আমাদেরকে আলাদা করে দেয়। আমি ওকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলি।
আজও সেই ঘটনার পেছনে আমি ছুটছি। সেই রহস্যের সমাধান আমাকে করতেই হবে।
রিক্সাওয়ালা রিক্সা চালান শুরু করলেন। গোপাল ভাড়ের সেই গল্পের মত লাগছে।
রাজা তার পূত্রের জন্মের পর গোপাল ভাড়কে চুন্নি সাহার মত জিজ্ঞেস করলেন,"তোমার অনুভূতি কি?"
গোপাল ভাঁড় বললেন," অনেকক্ষণ চেপে রাখার পর মল ত্যাগের আনন্দ যেমন আমার তেমনই লাগছে জাঁহাপনা। "
জাঁহাপনা তো রেগে আগুন। "ব্যাটা মশকরা পেয়েছিস!!!" সেই থেকে গোপালের সাথে তার কোন কথা নেই।
গোপালও বুঝলেন যে রাজাকে বুঝিয়ে ছাড়বেন যে তিনি আসলে কোন খারাপ কিছু বলেন নি।
যেই ভাবা সেই কাজ।
একদিন গোপাল আর রাজা গেলেন বনভোজনে অনেক দূরে।
সেখানে হেব্বি খাওয়া দাওয়া করালেন রাজাকে। এরপর তারা নৌকায় চড়ে ঘুরতে লাগলেন।
কিছুক্ষন পর রাজার বেগ আসলো। তিনি গোপালকে নৌকা সাইড করে রাখতে বললেন।
গোপাল-"না না জাঁহাপনা এখানে বাঘ আছে। আমরা সামনে নামব।"
এর কিছুক্ষন পর আবার রাজা চিৎকার দিয়ে উঠলেন
" ওরে গোপাল এখানে থামাও। আর না।"
"না না জাঁহাপনা এখানে কুমির আছে।আমি থাকতে আপনাকে আমি কুমিরের হাতে তুলে দিতে পারি না। আরেকটু সামনে যাই।"
এর কিছুক্ষণ পর রাজা চিৎকার করে উঠলেন
"গোপাল তুমি নৌকা থামাও। এখানেই আমি নামব।"
"জাঁহাপনা এখানে বিষধর সাপ আছে....."
"আরে রাখো তোমার সাপ। আমি এখানেই নামব। "
এই বলে রাজা দিলেন নৌকা দিয়ে লাফ।(ভাগ্য ভাল সেই মুহুর্তে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি)
কিছুক্ষন পর রাজা ফিরে এলেন।
"আহহহ......গোপাল!!! আহহহহ.....এর চেয়ে শান্তির আর কিছু হতে পারে না। এই অনুভূতির সাথে আর কিছু তুলনীয় নয় গোপাল!!"
গোপাল রাজাকে সেদিনের কথা মনে করিয়ে বললেন," আমি সেদিন যা বলেছি তা মোটেও ভুল ছিল না।"
রাজা গোপালের দিকে ফিরে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন,"তুমি অনেক নির্মম। অনেক নির্মম।"
আহহ গল্পটা মনে পড়ে বেশ ভাল লাগছে।
রিক্সাওয়ালাকে একটা পুরনো বাড়ির সামনে দাড়া করালাম। ভাড়া মিটিয়ে আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম।
ভেতরে আরেকটা বাসা আছে। সেখানে দরজায় নক করলাম। দরজা খুলল আমার সেই পুরনো বন্ধু সাবিত। দরজা খোলার সাথে সাথেই ওর গলায় একটা ঘুষি মারলাম। ও নিচে পড়ে গেল। ওঠার আগেই পেছনে ঘাড়ের কাছে একটা জায়গায় আঘাত করলাম ও বেহুঁশ হয়ে গেল। আমি ওকে আমার সাথে আনা দড়ি দিয়ে বাঁধলাম চেয়ারের সাথে। এরপর আমার আসল শিকারের জন্য অপেক্ষা করলাম। ভেতর থেকে সেও বের হয়ে আসল। এর আগেই হাতে একটা শো পিস নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। দরজা থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথেই কাজটা করলাম।
এরপর শুরু হলো আমার খেলা।
আমার বন্ধু চোখ মেলল প্রথমে। বললাম,
"ভাল আছিস। বহুদিন পর দেখা হল। "
ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে আছে।ওহহো মুখ তো বেধে দিয়েছি কথা বলবে কিভাবে। হাহা....
পাশের চেয়ারে বসে আছে ওর বউ মানে আমার ভাবি। আমি আমার বন্ধুর দিকে ফিরলাম। এক ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সে। মনে মনে আমি বেশ আনন্দিত।
-কিরে সাবিত বলেছিলি না কোন একটা মুভিতে দেখেছিস বন্ধুর বউকে নির্যাতন করে হত্যা করার আনন্দের সাথে নাকি অন্য কিছুর তুলনা হয় না।
সাবিত চোখ বড় করে মাথা নাড়াচ্ছে এবং আমাকে কি যেন বলতে চাচ্ছে।
আমি জানি সে কয়েকমাস আগের সেই ঘটনার কথাই ভাবছে যার জন্য সে বেশ অনুতপ্ত। আমি জানি। সবই জানি। কিন্তু আমার আর কিছুই করার নেই।আমার মধ্যে মানুষের আদিম রুপ চলে এসেছে। প্রতিশোধ এর আগুনে চোখ জ্বলজ্বল করছে আমার।
আমি আমার পকেটের ভেতরে রাখা চাকুটা বের করলাম। আস্তে করে ভাবি মানে সাবিতের বউর দিকে এগিয়ে গেলাম। গলায় চাকু দিয়ে আলতো করে ছোঁয়ালাম আর ঘোষলাম। এরপর সাবিতের দিকে তাকালাম। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওকে এখন খুলে দিলে ও আমাকে সিংহের মত থাবা দিয়ে এফোড় ওফোঁড় করে ছিন্নভিন্ন করে দিবে।
আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম। কোন লাভ নেই আজ আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।
আমি চাকুটা উঠালাম। আমার দিকে চরম আকুতি নিয়ে তাকিয়ে আছে সাবিত। আমি চাকুটা ঢুকিয়ে দিলাম। আর মাথার উপরে রাখা বেলুন ফেটে জড়ি বের হয়ে এল। আর আমি চিৎকার করে উঠলাম -
"হ্যাপি থার্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি!!!!"
ভাবি চোখ খুলে হাসতে লাগলেন সাবিতের দিকে ফিরে। অভিনয় ভালই করেছেন ভাবি। সাবিতের এখনও তব্দা কাটেনি। ও তাকিয়ে আছে।
আমার বউ ফারিয়া ঘরে ঢুকল তখনি।
"হ্যাপি অ্যানিভার্সারি সাবিত ভাই ও সাবিতা ভাবি!!! ওর মাথায় যে কি হয়েছে জানি না সে আপনাদের এভাবে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে তাই আমাদের দিয়ে নাটক সাজিয়েছে। আপনাকে মারার ব্যাপারটা জানতাম না সরি।"
"শালা বিয়া কইরা এক্কারে ভুইলা গেসস আমাগোরে। বউ পাগলা কুহানকার। ছয় মাস আগে আমাগো অ্যানিভার্সারি ছিল।শালার ভাই তুই একটা উইশও করস নাই। ওরে সরি কমু না। ওরে আরো ঘুইষামু!!!!"
তারপর ওর অ্যানিভার্সারি সেলিব্রেট করলাম। গাল ফেটে রক্ত বের হয়েছে সেটা আবার মুছিয়ে দিল আমার বউ।
ওর হাত পা খুলে দিলাম। উঠেই আমাকে একটা ঘুষি মারল। আমি ছিটকে পড়ে গেলাম।
"অবশেষে তোকে হাতে পেয়েছি। হা হা হা। মনে আছে মাহিক তুই আমার বউ ফারিয়াকে ৬ মাস আগে হত্যা করেছিলি নির্যাতন করে। আজ তুই নিজে এসে ধরা দিতে এসেছিস। হা হা হা। তারমানে তোর ফারিয়াকে নিয়ে অবসেশন ও হ্যালুসিনেশন এখনও কাটেনি। নাকি মদ গিলেছিস??? হা হা হা"
আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।মানে কি??? এগুলা কি বলে ও।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম এরপর আবার তাকালাম।তার মানে এতক্ষন যা করেছি কিছুই বাস্তব না। কি আজিব।
আমি চারপাশে তাকালাম। দেখলাম আশেপাশে কোন বেলুন মানুষ কেউ নেই।
আমি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম।
সাবিত আমার হাত পা বাধছে। আমি চুপচাপ বসে আছি। খুব খিদে পেয়েছে আমার। না খাইয়ে আমাকে মেরে ফেলা ঊচিৎ হবে না।
"দোস্ত আমাকে কিছু খেতে দে খুব ক্ষুধা লাগছে আমার।"
সাবিত আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালো।
এমন সময় পেছন থেকে একটা শব্দ হল "কাট!!!!"
তখনই খেয়াল হল আমি তো ফিল্মে শুটিং করছিলাম এতক্ষণ। ক্ষুধা লাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। এর প্রমান আবারো পেলাম। উহহ। লোকজন সবাই হাসাহাসি শুরু করল।
পরিচালক মিঃ মেহেরাফ শামীম এসে আমাদের খাবার ব্যাবস্থা করে চলে গেল। আমরা খেতে বসে গেলাম। নতুন একটা থ্রিলার মুভি হচ্ছে। আমরাই বানাচ্ছি স্কুলের বন্ধুরা মিলে। নামটা পরেই জানাই।
আগে খেয়ে নেই।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন