২০০৮ সালের দিকে যখন প্রথম গল্পকণিকা লিখি, তখন এর সাইজ ছিল এক লাইন। এরপর এক লাইন থেকে দেড় লাইন, তিন লাইন, এক প্যারাগ্রাফ। সর্বোচ্চ ৩ অনুচ্ছেদের গল্পকণিকা লিখেছিলাম সেই সময়ে।
সম্প্রতি গল্পকণিকা লিখবার একটা নতুন উদ্যম আমার মধ্যে লক্ষ করছি গত মাসখানেক ধরে। প্রথম দিককার গল্পগুলো ৫-৭ লাইনের হলেও এখন ওগুলোর দৈর্ঘ্য আধা-পৃষ্ঠা থেকে দেড় বা দুই পৃষ্ঠা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। দৈর্ঘ্য বেড়ে গেলে সেগুলোকে আর ‘গল্পকণিকা’ বলার কারণ দেখি না।
গল্পকণিকা লিখতে বসে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। মনে মনে ৩ বা ৪ লাইনের মধ্যেই গল্প শেষ হয়ে যায়। লিখতে বসার পর দেখি কলেবর ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। অন্য সমস্যাটি প্রকটতর। যে থিম বা কাহিনির উপর গল্প লিখতে বসি, দেখা যায় আমার নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষা করে গল্প মোড় নিচ্ছে অন্যদিকে। গল্পে যে ভাবটি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি, সেটি কিছুতেই পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে না। মনের ভিতর তখন বড় একটা অতৃপ্তি যন্ত্রণা দিতে থাকে। সেই যন্ত্রণাকে লাঘব করার জন্য প্রথম ড্রাফটের উপর ক্রমাগত ক্ষুর চালাতে গিয়ে দেখি এটি একটা সম্পূর্ণ নতুন গল্পের রূপ নিয়েছে। এভাবেই একটা থিম বা প্লট থেকে অনেকগুলো গল্পকণিকার জন্ম হতে থাকে, কিন্তু মূল থিমটা একেবারে অধরাই থেকে যায়।
কনটেম্পোরারি বিষয়াবলির চেয়ে মানব-চরিত্রের বিচিত্র বৈশিষ্ট্যগুলোই আমাকে বেশি ভাবিত করে। এরকম একটা বিষয় নিয়ে বর্তমান গল্পকণিকার কথাটি ভাবছিলাম, যেটি মাত্র দেড় বা দুই লাইনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখানেও ব্যত্যয় হলো না। এই দেড়-দুই লাইনকে লেখ্যরূপ দিতে গিয়ে দেখি সেটি প্রায় দেড় পাতার গল্প হয়ে গেছে। সেই দেড় পাতাকে একটা ছিমছাম, নিখুঁত গল্পকণিকার রূপ দেয়ার জন্য আমি ক্রমাগত পুনর্লিখন ও ছাঁটাছাটি শুরু করলাম। সবার উপরের গল্পটি হলো সর্বশেষ গল্পের আগের রূপান্তর, আর শেষ সংস্করণটি দেয়া হয়েছে সবার নীচে।
৫
নিতু মেয়েটা বড্ড বেশরম আর বেহায়া। তাকে যার-তার সাথে যেখানে-সেখানে যেতে দেখি। যার-তার সাথে কলকলিয়ে হাসতে দেখি। পারে তো পুরুষ মানুষের কোলে গিয়ে বসে। এতো ঢলাঢলি কীসের লক্ষণ! ছিনালের লক্ষণ। শি ইজ ভেরি সেক্সি এ্যাজ ওয়েল।
একদিন হঠাৎ কোত্থেকে উড়ে এসে আমার ডেস্কের উপর হাতে ভর করে উবু হয়ে দাঁড়ালো। ‘কী লিখেন?’ বলে আমার ড্রাফটের দিকে সে আরেকটু এগিয়ে এসে পড়তে থাকে। তার বুক তখন বেশ ঝুলে পড়ছিল। মেয়েদের আমি চিনি। রুমে কেউ নেই, সে একটু স্পর্শ চায়।
‘কেমন আছো, নিতু?’ বলেই তার দিকে তাকিয়ে হাসি। আর আলগোছে একটা হাত উঠিয়ে তার বুক বরাবর তুলতেই সে চমকে উঠে সরে পড়ে।
এরপর আর কোনোদিন সে আমার অফিসে আসে নি, আমার সাথে কথাও বলে নি। অথচ বাকি সবার সাথে তাকে আগের মতোই অবাধে চলতে দেখি।
আমার বোধোদয় হয়, এবং খুব কস্ট পেতে থাকি- আমি নির্মল আনন্দকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি ভালো মানুষ নই।
৪
আমার অফিসের সুন্দরী কলিগ নিতু আমার প্রেমে পড়লো। তাকে যখন জানালাম আমি একজন বিবাহিত পুরুষ, সে ক্রোধে ফেটে পড়ে বললো, ‘ভণ্ড কোথাকার, প্রেম করার আগে বলো নি কেন তোমার বউ আছে, ছেলেমেয়ে আছে? আমি তোমার নামে কেইস করবো।’
নিতু আমার নামে শ্লীলতাহানির কেইস করলে আমার চাকরি চলে গেলো, আর ৬ মাসের জেল হলো।
স্ত্রীর চাকরি করা বেতনে আমি এখন বসে বসে খাই। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিতুর সাথে কিছু সন্ধি করি। সন্ধি মোতাবেক সে এখন আমার স্ত্রী। আমাকে সে ৬ মাসের জেল খাটিয়েছে, আমি তাকে যাবজ্জীবন জেলহাজতের স্বাদ দিব।
৩
অফিসে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই নিতু আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো। আমরা একই রুমে পাশাপাশি বসি। অনেক সুখ-দুঃখের বিষয়াদি একে-অপরের সাথে শেয়ার করি। মাঝে-মাঝে ক্যান্টিনে বসে একত্রে চা-নাস্তা খাই, অফিসে যাতায়াতের সময় প্রায়ই আমরা একই বাসে উঠি, এবং নিতু আমার পাশের সিটটায় বসে পড়ে গল্প করতে করতে রাস্তা পার হই।
একদিন ওকে একলা পেয়ে বললাম, ‘নিতু, তোমাকে একবার চুমু খেতে চাই।’ নিতু এতোই অপ্রস্তুত হলো যে মুহূর্তে ওর পুরো মুখাবয়ব লাল হয়ে উঠলো, এবং অপমান, ক্ষোভ ও লজ্জায় ওর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো।
এরপর বেশ কিছুদিন নিতু অফিসে না এলে আমি খুব অনুতপ্ত হই। তারপর একদিন হঠাৎ তাকে বাসে উঠতে দেখলাম। আমার সাথে চোখাচোখি হতেই সে মাথা নীচু করে বাস থেকে নেমে গেলো। নিতুর চলে যাওয়া আমার বুকে তিরের ফলার মতো বিঁধলো। তবু ভালো লাগলো, অনেকদিন পরে হলেও নিতু আজ অফিসে ফিরে আসছে। অফিসে আসার পর নিরালায় ওর কাছে গিয়ে আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইব।
কিন্তু অফিসে আমার পাশের ডেস্কে সেদিন নিতু বসলো না, বসলেন এক নতুন কলিগ আলম সাহেব। তিনি জানালেন, নিতুর এ অফিস থেকে অন্য অফিসে ট্রান্সফার হয়েছে, যার বদলে তিনি এখানে এসেছেন।
২
‘আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে, ভাইয়া।’ নিতু যেদিন আমাকে এ কথাটা বলেছিল, সেদিনই বুঝেছিলাম আমার প্রতি ওর একটা দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। অফিসের বিভিন্ন মিটিঙে সে আমার পাশের সিটে বসে। ক্যান্টিনে চা-নাস্তা করতে গেলেও আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। রাস্তার ও-পাশের রেস্টুরেন্টে আমরা প্রায়শ লাঞ্চ করতে যাই। নিতু যথারীতি আমার সাথে একই টেবিলে পাশাপাশি বসবে। আমি দেখতে পেলাম, মেয়েটা ধীরে ধীরে আমার উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে উঠছে। অফিশিয়াল কাজে বিভিন্ন উপদেশ-পরামর্শের প্রয়োজন হলে সে আর কারোটা না, কেবল আমার পরামর্শগুলোই অক্ষরে অক্ষরে গ্রহণ করে এবং মেনে চলে।
‘আপনি লোকটা খুব ভালো, ভাইয়া। অন্যদের মতো না।’ মাঝে মাঝে খুব নিবিড় হয়ে আমার চোখে গাঢ় দৃষ্টি ফেলে ঘাড়খানি ইষৎ কাত করে নিতু যখন কথাটা বলে, তখন গর্বে আমার বুক স্ফীত হতে থাকে।
আমি নিশ্চয়ই অন্যদের মতো না। আমার কিছু নারী-ঘেঁষা কলিগ আছেন, তাঁরা কারণে-অকারণে মেয়েদের সাথে যেচে কথা বলেন, চটুল হাসিঠাট্টা করতে তাঁদের জুড়ি নেই। তাঁদের আদিখ্যেতা আমার অপছন্দ, এবং আমি খেয়াল করে দেখেছি এরা ‘ব্যক্তিত্বহীন’ পুরুষ, রমণীদের সামনে তাঁরা খুব নিম্নরুচি বা হালকা চরিত্রের মানুষ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে থাকেন।
আমি সুপুরুষ, সুদর্শন, ব্যক্তিত্ববান। অফিশিয়াল কর্মকাণ্ডে আমার পারদর্শিতা ও সাফল্য ঈর্ষণীয়। মেয়েরা আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে অতি সহজেই। মেয়েদের সহজাত বৈশিষ্ট্যের কারণেই নিতু আমার প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়ে।
‘ভাইয়া, চলুন আমরা একদিন সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে যাই।’
বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্সে আমরা একটা ইংলিশ মুভি দেখলাম। পেছনের সারিতে একেবারে কোনার দিকে আমাদের সিট পড়েছিল। আমরা কী কী করলাম তা যেমন কারো চোখে পড়লো বলে মনে হলো না, তেমনি আমাদের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন রংতামাশা দেখবার কারো কোনো গরজ ছিল বলেও মনে হলো না।
শো-টাইম শেষ হলে আমরা টপ ফ্লোরে গিয়ে বার্গার খেলাম। বার্গার তার মেয়ের খুব ফেভারিট, কথা প্রসঙ্গে নিতু এটা আমাকে জানানোর পর আমি ওর মেয়ের জন্য বার্গার কিনে প্যাকেট করে দেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
‘না না ভাইয়া, থাক। কিচ্ছু নিতে হবে না। আমি বরং বাসার কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে ওর জন্য কয়েকটা চকোলেট কিনে নিয়ে যাব। চকোলেটও ওর অনেক প্রিয়।’
আমরা সিএনজি নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম। মাঝপথে আমি নেমে পড়বো, এরপর সে ঐ সিএনজি নিয়ে ওর বাসা অব্দি যাবে।
নামার আগে মানিব্যাগ থেকে একটা ১০০০ টাকার নোট বের করে নিতুর হাতে গুজে দিয়ে বললাম, মেয়ের জন্য চকোলেট কিনে নিবে। নিতু প্রথমে বাধা দিলেও পরে নিল, এবং সিএনজির ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়া টুকরো আলোয় হাতের নোটটায় একবার চোখ বুলিয়ে পরখ করে দেখলো- ওটা ১০০, নাকি ১০০০ টাকার নোট। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব বেদনাময় মনে হলো।
এরপর মাঝে মাঝেই আমরা মিলিত হতাম। বাসায় ফেরার পথে ওর হাতে ১০০০, কখনোবা ৫০০ টাকার নোট গুজে দিতাম। প্রতিবারই ‘লাগবে না, টাকা দিয়া আমি কী করবো’ ইত্যাদি বলতে বলতে আমার জোরাজুরির কারণে সে টাকাটা শেষ পর্যন্ত নিতে বাধ্য হতো।
১
নিতুকে দেখার পর থেকেই ওর প্রতি আমার লালসা জাগ্রত হতে থাকে। নৃত্যকলা বা সঙ্গীতে ওর কোনো দখল নেই। কিন্তু ওর সুমধুর বাচনভঙ্গি ও বাঁকানো শরীর একটা উচ্চমার্গীয় কবিতার চেয়েও অধিক উপভোগ্য। দূর থেকে, কিংবা ওর পাশে গেলে আমার তীব্রতা বেড়ে যায়। কোনদিন আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এ নিয়ে আমার অশেষ ভয় রয়েছে।
আমার পাশের ডেস্কে ৯টা-৫টা খুব চপলতা ও দক্ষতার সাথে নিতু কাজ করতে থাকে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাজের কথাই শুধু বলে না, হালকা ও সিরিয়াস উভয় ধরনের ফান করে, আর প্রতিটা কথার শেষে দুষ্টুমির হাসি হাসে। হাসতে হাসতে দৃষ্টি গাঢ় করে আমার দিকে তাকায়। অফিসের সবাই হয়তো মনে মনে বলে- নিতু আর আমি পরকীয়ায় জড়িয়ে গেছি।
ক্যান্টিনে চা-নাস্তা খাওয়ার সময় আমরা একসাথে বের হলে, কিংবা রাস্তার ওপারে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাসায় ফেরার পথে পাশাপাশি সিটে বসি, বাস মিস করলে সিএনজি বা রিকশায় উঠি। ওর শরীরের সাথে সামান্য ছোঁয়া লাগলেই আমার যেন ইলেক্ট্রিক শক লাগে।
আমারও মনে হয়, নিতু ঠিক ঠিক আমার প্রেমে পড়ে গেছে। আমার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রেম-ট্রেম কিছু না, আমি শুধু নিতুকে ভোগ করতে চাই।
আমরা ঘনিষ্ঠ হতে থাকি। নিতু ওর ঘরের কথাও মাঝে মাঝে হুট করে বলে ফেলে। সে স্বামীকে নিয়ে খুব সুখী নয়, তেমন সন্তুষ্টও নয়। শূন্যস্থান কখনো অপূর্ণ থাকে না। আমি নিতুর শূন্যস্থান, হাহাকারময় জীবনে কিছুটা সুখ এনে দিতে অগ্রসর হই। আমিও অনেক কিছু শেয়ার করি।
একদিন রিকাশয় হুড ফেলে দিয়ে, কিংবা সিএনজিতে, কিংবা বাসের ভিতরে যদি কোনোদিন বাতি নেভানো থাকে, ওর ঘাড়ের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিব, তারপর কৌশলে সেই হাতের থাবা আরও নীচে নামিয়ে ওর বুকে চেপে ধরবো।
‘একদিন তো দাওয়াতও দিলেন না?’ নিতু যেদিন হাসতে হাসতে ইঙ্গিতে আমাকে ওর মনের ইচ্ছেটা বুঝিয়ে দিল, অমনি আমার মাথায় মোক্ষম আইডিয়াটা ভর করলো।
একদিন সব আয়োজন পাকা করে বললাম, ‘আজ তোমাকে তোমার ভাবীর হাতের রান্না খাওয়াবো। অফিস শেষে সোজা আমার বাসায় চলে যাবো। ঠিক আছে, নিতু?’
‘দাওয়াতের জন্য অনেক ধন্যবাদ’ বলে নিতু মিষ্টি চোখে আমার দিকে তাকালো।
বাসায় ঢুকে নিতুকে নিয়ে সরাসরি বেডরুমে ঢুকে পড়ি। নিতু চারদিকে তাকিয়ে বলে, ‘কী ব্যাপার, বাসার মানুষজন কোথায়? ভাবীকে দেখছি না যে!’
‘তাইলে আর কী বলছি তোমাকে! ছেলেমেয়েসহ পুরা গুষ্টিরে গতকাল বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দিছি। আমরা এক্কেবারে স্বাধীন। কোথাও কোনো জঞ্জাল রাখি নাই।’ বলেই নিতুর দিকে তাকাই। নিতুর হাসিমুখটা অন্ধকার হয়ে যেতে থাকে।
‘বুঝলাম না।’ নরম স্বরে নিতু বলে।
‘এসো সোনামণি। আর কোনো কথা না।’ বলেই ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করি। আর অমনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিতু তীব্র ঝাঁঝালো শব্দে ছিঃ ছিঃ করে উঠলো। ‘এই আপনার চেহারা? আপনারে আমি দেবতার মতো মনে করতাম। আপনি অন্য পুরুষদের মতো লুইচ্চা না মনে কইরা আপনার সাথে স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতাম। আপনার মনের ভিতর এই ছিল? ছিঃ! ছিঃ! আপনি একটা নোংরা মানুষ।’
দরজা খুলে হনহন করে নিতু বের হয়ে গেলো।
৬
নিতুকে দেখলেই আমার ছোটোবোন অলেছার কথা মনে পড়ে। অলেছা আড়াই বছর বয়সের সময় কলেরায় মারা গিয়েছিল। ও আমার দু বছরের ছোটো। ঐ বয়সে অলেছা কী যে সুন্দর করে হাসতো, তা আমার এখনও স্ফটিক মনে পড়ে।
‘ভাইয়া কী খবর’ বলতে বলতে যখন প্রতিদিন সকালে নিতু অফিসে ঢোকে, তখন মনে হয়, এ নিতু নয়, অলেছা। আমার সোনাবোন অলেছা আজ কত্ত বড় হয়েছে!
একদিন নিতুকে বললাম, ‘নিতু, এসো না, আমার বাসায় একদিন বেড়িয়ে যাবে।’
নিতু কাজ করছিল। হাতের ফাইলটি গোছাতে গোছাতে সে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু কোনো উত্তর দিল না। একটুপর আবার বললাম, ‘কিছু বললে না যে! আমার বাসায় কবে আসবে?’
নিতু কী মনে করলো জানি না। হাতের কাজ থামিয়ে বললো, ‘ভাইয়া, আপনি বোধহয় একটু ভুল করছেন। আমাকে নিয়ে যদি কিছু ভেবে থাকেন, দয়া করে আর ভাববেন না। আমি ও-ধরনের মেয়ে নই।’
এর পরের দিন অন্য সেকশনে আমার ট্রান্সফার হয়ে গেলো।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন