|
এনটনি
|
|
গল্প: মৃত্যুর নয়, মৃতদেহের অপেক্ষায়
14 August 2014, Thursday
“কিরে? ঈদের পর তো ব্যবসা ভাল হওয়ার কথা, তোর হয়না কেন? মরা বাড়ির লোকের চোখেও পড়িসনা নাকি?”
ইয়াকুবের ব্যবসা টা মরা মানুষ নিয়ে। লাশ ঢাকার চা-পাতা, কাঠের/স্টীলের কফিন, কাফনের কাপড়, কর্পুর, মোমবাতি এইসব এর। সেই দোকানেই কাজ করে জিল্লুর। বয়স ১২-১৩। দোকানেই ঝাপি ফেলে রাতে থাকে, ২ বেলা খাওয়া পায়, সকালের খাওয়া দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় দিনই মালিক আসতে ১২ টা একটা বেজে যায় বলে খাওয়ার টাকা পায়না বলে খাওয়া হয়না। সারাদিন বেচা-কেনার কাজে সাহায্য করা আর রাত ৮ টার পর রাত ১২ টা পর্যন্ত বিক্রি-বাট্টা সামলানোই ওর কাজ। পুরনো একটা “সুযোগ চাই মানুষ হবো” এর ব্যানারকে চাদর বানিয়ে শোয়ার কাজ চালায়। এখন লেখা উঠে যেয়ে শুধু “চাই মানুষ” টুকু বোঝা যায়। জিল্লুরও তাই চায়, মানুষ, লাশের জন্য যত মানুষ আসবে তত মালিকের মুখে হাসি, দুই বেলা খাওয়ার টাকার বাইরে মালিক মাঝে মাঝে সোয়া লিটারের কোক এনে খেয়ে বাকিটা দিয়ে যাবে। জিল্লুর একদিন মালিকের রেখে যাওয়া কোক পাশের হোটেলের ফ্রিজে ম্যানেজ করে আধা-ঘন্টা রেখে খেয়ে দেখেছে। বেহেশতী স্বাদ তার।
“কিরে, কথা কস না কেন? আমি যাওনের পরেই দোকান বন্ধ কইরা পইড়া পইড়া ঘুমাস তাইনা? ঈদে কত্ত মানুষ রাস্তায় মরল, আধমরা হয়্যা সামনের হাসপাতালে আইসা মরল, আর তুই বেঁচছস মাত্র একটা কাফনের কাপুড় আর ধুপ??”
একগাদা মোটর পার্টসের দোকান আশেপাশে, দুইটা হোটেল আর একটা ছোট হাসপাতাল সামনে। এর মধ্যেই এই “বিদায় বেলা স্টোর”। বাইরে থেকে দুইটা খাটিয়া ছাড়া কিছু দেখা যায়না। বিক্রি বাট্টা এমনিই কম থাকে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির জন্য আরো লোকজন আসেনা।
ঝাড়ি মারা শেষ হলে ইয়াকুব তার চাইনিজ মোবাইলে গান ছাড়ল “বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, করেছ দান…!” জিল্লুর ভাবে, এই বৃষ্টিতে দুই একটা এক্সিডেন্ট হলেও তো বিক্রি বাট্টা হতো কিছু। ছোট মাথায় এর বেশি কিছু আসেনা জিল্লুরের।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন