সব পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার আইজিপির নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছে বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যরা। নব নিযুক্ত পুলিশ প্রধানের সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই পুলিশ সদস্যরা নিজেদের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাজে যোগদান না করার কথা জানিয়েছে। এমনকি পুলিশের বর্তমান পোশাককে কলঙ্কিত পোশাক আখ্যা দিয়ে অনেকেই ইউনিট প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে পুলিশের পোশাক ঘিরে জনগণের মধ্যে ঘৃণা জন্ম নিয়েছে।
তারা বলছে, “পোশাক দেখে জনগণ তেড়ে আসছিল খুন করতে। শুধু জীবন বাঁচাতে ওই পোশাক খুলে পালিয়েছি। সেই পোশাক পরতে চাই না।”
পুলিশ প্রধানের সংবাদ সম্মেলন শেষে পুলিশ থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত অর্ধ শত সদস্যর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপ-কমিশনার জানান, আইজিপি বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার কর্মকর্তা ও ফোর্সকে নিজ নিজ পুলিশ লাইনসে যোগদানের জন্য। কিন্তু তার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে কাজে যোগদান না করার কথা জানিয়েছে অধস্তন পুলিশ সদস্যরা। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে ফোর্সের সাথে প্রতারণা করেছে। ভুলভাল নির্দেশ দিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বাহিনীর সদস্যদের আজ খুনি রূপে পরিচিত করেছে।
তারা বলছে, পুলিশকে কোন সরকারই পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেনি। রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে পুলিশকে গড়ে না তুলে সরকারের বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে প্রত্যেক সরকারই লালন পালন করে পুরো বাহিনীকে কন্ট্রোল করেছে। ফলে বাহিনীর সুযোগ সুবিধা, আবাসন ব্যবস্থা, নিজেদের পরিচালনার সক্ষমতা না বেড়ে বেড়েছে সরকারের তৈরি ফ্রাংকেনস্টাইন্দের পকেটের সাইজ। মোটা তাজা হয়েছে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। পুলিশ বাহিনীর ৩৫০০ হাজার ক্যাডার সদস্য থাকলেও পুরো বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হয় এডমিন ক্যাডারের কয়েকজন সদস্য দ্বারা।
পুলিশের পদায়ন, প্রমোশন নিয়ে বিরাট খেলা ও মোটা অঙ্কের ব্যবসা চলে বলে অভিযোগ তাদের। এই মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ এতই প্রবল যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার শুধু পোস্ট বক্স হিসেবে কাজ করে। কার্যত আইজিপির কোন ক্ষমতা নেই। বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নাই। ফলে বাহিনীর ভেতরে নেতৃত্ব এবং ওনারশিপের চর্চা না হয়ে চর্চা হয় তেলবাজির। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ফ্রাংকেনস্টাইনদের নিকট প্রতিদিনের হাজিরা খাতার চর্চা। এই চর্চাই পুলিশকে আজ জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই মহা বিপদে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকারের প্রতি পুলিশের অতি আনুগত্য। এই মহাবিপদে পুলিশকে জনরোষের অগ্নিকাণ্ডে নিক্ষেপ করে যাদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা, উদ্ধার করার কথা, তারা ছিল নিশ্চুপ। নিজেরা পালানোতে ব্যস্ত যা ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যদের কেউ মেনে নিতে পারছে না বলে দাবি করেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
গোপন সূত্রে পুলিশের একটি গ্রুপ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় আইজিপির নির্দেশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকল পুলিশ অফিসারের কর্মস্থলে ফেরার। তিনি নিযুক্ত হয়ে এই আদেশ দেবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সকল স্তরের পুলিশ সদস্যরা এখনও ভয়াবহ রকমের আতঙ্কিত। পুলিশ পরিচয়ে কেউ রাস্তায় বের হওয়ার সাহস পাচ্ছে না। রাস্তায় কোন লোক, সবজিওয়ালা বা রিকশাওয়ালা যদি জানে যে সে পুলিশ সদস্য, তাহলে তারা আক্রমণ করবে। প্রথমে নিজে মারবে এবং পরে মারার জন্য অন্যদের হাতে তোলে দেবে।
পুলিশের ক্যাডার সার্ভিসে যারা আসে তাদের অধিকাংশ ক্যাডার হতে আসে, পুলিশ হতে আসে না। অধিকাংশের প্রথম চয়েজ পুলিশ থাকে না ফলে পুলিশের প্রতি বা পুলিশের জব ন্যাচারের প্রতি তাদের ভালোবাসা বা দায়িত্ববোধ তৈরি হয় না। পুলিশিংকে তারা শুধু একটা পেশা হিসেবই দেখে। ফলে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়। এই পেশার প্রতি ভালোবাসা বা দায়িত্ববোধ তৈরি হয় না। পুলিশ ইউনিফর্মকে তারা প্রাইড হিসেবে দেখে না। ফলে ইউনিফর্মটাকে তারা কলঙ্কিত করে ফেলে। আর যারা এই ইউনিফর্মটাকে প্রাইড মনে করে, এই পেশায় তারা চাটুকারদের অতি তৈলাক্ততায় বিরক্ত হয়ে এই পেশার প্রতি ঘৃণা তৈরি হয়।
অন্য একটা মাধ্যমে জানা যায় যে পুলিশ সদস্যদের নিজে এবং তার ফ্যামিলি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখনও পুলিশ ফ্যামিলি তাদের আত্মীয় স্বজনের বাসায় লুকিয়ে আছে। এই অবস্থায় কর্মস্থলে যোগদান কোনোভাবেই নিরাপদ মনে করছে না তারা।
পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপার জানান পুলিশের চাকরির ন্যাচারই হলো অন্যের উপর ইমপ্রেশন সৃষ্টি করে কাজ সমাধান করা। যেখানে সমাজে আমরা চোর ডাকাতের মতো ট্রিট হচ্ছি, সেখানে আমাদের কথা বা বাচন ভঙ্গিতে ইমপ্রেশন সৃষ্টি হবে কোথা থেকে। কেউ আমাদের কথা শুনবে না। যেহেতু ইউনিফর্ম সার্ভিস একটা প্রাইড জব এবং সকল রাষ্ট্রে অত্যন্ত সম্মানিত প্রফেশন। আজকে এই ইউনিফর্মের প্রাইডটা নষ্ট হয়ে গেছে। জনগণের কাছে পুলিশের ইউনিফর্মের এখন আর কোন সম্মান নাই। প্রাইড ফেরত না এনে তড়িঘড়ি করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ সকলের জন্য অনিরাপদ এবং অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।
কয়েকজন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের ইউনিফর্মের প্রাইড ফেরত আনার একটা পদ্ধতি হতে পারে জনগণকে চাইতে হবে পুলিশ আবার কর্মে ফিরে আসুক। যে দুষ্কৃতকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করে অগনিত পুলিশ সদস্য নৃশংস মৃত্যু নিশ্চিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের সোচ্চার হওয়া। জনগণের রাস্তায় নেমে এসে মিছিল বা সমাবেশ করে পুলিশকে কর্ম বিরতি পরিহার করে কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান করা। সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়া সুধীজন কর্তৃক পুলিশদের কর্মস্থলে যোগদানের আহ্বান জানানো। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কথা দিয়ে নয়, কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা।
চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, চলমান আন্দোলনে পুলিশের বিরুদ্ধে সংগঠিত হত্যাযজ্ঞের সঠিক সংখ্যা এখনও অজ্ঞাত। তাদের লাশের সঠিক সৎকারের ব্যবস্থা না করা। পুলিশ সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত ম্যাসাকারে সাহায্য চেয়েও কোন প্রকার সাহায্য না পাওয়া। পুলিশে সদস্যদের উদ্ধারে ব্যাক আপ প্ল্যান না থাকা। সর্বোপরি সিনিয়র অফিসারদের কোন দিক নির্দেশনা না পাওয়া। অধিকাংশ সিনিয়র অফিসার নিজের প্রাণ বাঁচাতে পলায়নপর হওয়া।
অধস্তন পুলিশ অফিসাররা চলমান পরিস্থিতিতে তাদের ক্ষোভ জানিয়ে বিভিন্ন পুলিশ লাইনে আন্দোলন করছে বলে জানা যায়।
কি হয়েছিল শেষ দুদিন
শেখ হাসিনা সরকার পতনের শেষ দুদিন কার্যত পুলিশের কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা ছিল না। আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ এড়াতে পরিকল্পনা দেয়া হয়নি মাঠ পর্যায়ের থানা ও পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে। ফলে আন্দোলন চলাকালে ওই শুক্রবারের সংঘর্ষের প্রভাব প্রতিনিয়ত পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনায় পড়তে থাকে।
রংপুর রেঞ্জের একজন পুলিশ সদস্য জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কি করবে তা নিয়ে কেউ চিন্তা করে কোনো নির্দেশনা দেননি। ফলে পুলিশের অনেক বেশি সদস্য নিহত হয়েছে। এর জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তারা, যে জন্য পুলিশের মধ্যে তীব্র অশান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
ডিএমপির এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার ও প্রতারণার শিকার হয়েছে পুলিশ বাহিনী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকার পতনের বিষয়টি আন্দোলনের শেষ দিন আইজিপি এবং কমিশনাররা জানত। তারপরও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করেই আন্দোলন প্রতিহত করতে ভোর পাঁচটা থেকে ঢাকার প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে স্যুট এ্যাট সাইট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। বেলা ১২ টার দিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করে দেশ ত্যাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও পুলিশ সদর দফতরের কর্তারা বিষয়টি গোপন করেছেন। কন্ট্রোল রুম থেকে মাঠ ছাড়তে বা আন্দোলনকারীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কৌশলে পুলিশ নিজেদের ও স্থাপনা রক্ষা করবে। অর্থাৎ পুলিশ সদস্যদের জীবনের কথা কেউ ভাবেনি।
রাজারবাগ থেকে পুলিশ ছুটে যায় বাড্ডা থানায়
শেখ হাসিনা যখন পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়, তখনও বাড্ডা থানা পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। অথচ সেই সময় পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যেতে শুরু করে। কেউ কেউ কাছাকাছি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু বাড্ডা থানার পুলিশ কোনো খবর জানতে পারে নাই। মোবাইল কিংবা টিভি চ্যানেল দৃষ্টি রাখার সুযোগ ছিল না। ফলে সংঘর্ষ ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
সন্ধ্যা হয়ে মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বেড়ে চলে। কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। বাড্ডা থানার থানা থেকে যে যার মতো করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু সবাই মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
এসময় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা খবর পেয়ে বাড্ডা থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওসি তাকে সরাসরি বলেন, “স্যার আপনাদের কাছে কি একটা এপিসি নেই। কেউ কি আমাদের উদ্ধার করতে আসতে পারবেন না। যদি না পারেন তাহলে কিছু বলার দরকার নেই।”
ওসির কথার জবাবে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে কেউ নেই। আপনি পুলিশ কমিশনার, আপনিই বাংলাদেশ। আপনাকে বাঁচতে হবে, আপনার ফোর্স বাঁচাতে হবে।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেই রাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে র্যাবের হেলিকপ্টার সহায়তা পাওয়া যায়নি। পরে রাত দুইটার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে বাড্ডা থানার পুলিশ উদ্ধার করা সিদ্ধান্ত নেয়। রাত দুইটার দিকে রাজারবাগ থেকে ফায়ার করতে করতে বাড্ডা থানার দিকে এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে বাড্ডা থানার সামনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে থানা থেকে জীবিত কয়েকজন পুলিশসহ ৩৫টি লাশ উদ্ধার করে রাজারবাগ নিয়ে আসে।
এসময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা ক্ষোভে ভেঙে পড়ে। তখন পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করে। চলমান হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী পুলিশ কমান্ডিং অফিসারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলে। রাজারবাগে সভা সমাবেশও করে ক্ষুব্ধ আইন-শৃঙ্খলার এক মাত্র বাহিনীর সদস্যরা।
লাশ ও অস্ত্রের হিসেব নেই
কোটা আন্দোলনে চলমান সহিংসতা ও সংঘর্ষে নিহত পুলিশ ও লুট হওয়া অস্ত্রের ন্যূনতম কোনো হিসেব রাখা হয়নি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। মোহাম্মদপুর থানার এক পুলিশ সদস্য জানান, সরকার পতনের দিন তার ডিউটি ছিল মোহাম্মদপুর বসিলায়। সেখান থেকে মোহাম্মদপুর থানায় আসেন জীবন বাঁচাতে। সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় থানায় তার অস্ত্র জমা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে খবর পান মোহাম্মদপুর থানা লুট করা হয়েছে। তবে তিনি জানেন না তার অস্ত্র ওখানে আছে না খোয়া গেছে।
সারা দেশে এমন ১৫০টি থানা ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটসহ শতাধিক স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর করে লুট হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘটনায় অস্ত্র লুট হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কি পরিমাণ অস্ত্র লুট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে তার হিসেব কেউই জানেন না।
এ ছাড়াও পুলিশের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত লাশের সংখ্যা ছাড়া কোনো তথ্য নেই পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সংঘর্ষের প্রথম দিন তিনজন ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ ১৪ জন, সরকার পতনের দিন বাড্ডা ৩৫ জন ও যাত্রাবাড়ী থানার ১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এর বাইরে কত পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও লোক মারফত জানা গেছে শতাধিক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। যে তথ্য সংগ্রহ করা খুব জরুরি ছিল, সে কাজ করতে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
এমন অবস্থায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী এক জেলার পুলিশ সুপার জানান, বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে কেউ পুলিশ পরিচয়ে রাস্তায় বের হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবে না। অনেকটা চোরের মতো মাথা নিচু করে থাকতে হবে। এই অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা গোটা দেশের কোথাও নিরাপদ স্থান মনে করছে না। পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য জনগণ ও ছাত্রসমাজের এগিয়ে এসে পুলিশকে কাজে যোগদান করতে মিছিল বা ফুল দিয়ে পুলিশের স্থাপনা সাজিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়াও পুলিশের পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণা চালিয়ে কাজে নামতে বাধ্য করা যেতে পারে।
যোগদান না করতে মধ্যরাতের নোটিশ
পুলিশ প্রধানের আদেশের পর পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগদান না করার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন সারা দিন। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে জানা নব নিযুক্ত পুলিশ প্রধান। সেখানে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন জোরালো দাবি জানিয়ে কাজে যোগদান না করার কথা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন। আইজিপি রাজারবাগ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর পুলিশের বিভিন্ন গ্রুপে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়— “আইজিপি যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেগুলো তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের দাবিগুলো নিয়ে রাষ্ট্রপতি মহোদয়সহ অন্যান্যদের সাথে নিয়ে বলবেন এবং দাবি গুলো তুলে ধরবেন। তবে তার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পুলিশের ডিউটি অফ থাকবে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মে ফেরার নির্দেশনা তুলে নিয়েছেন। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা রাজারবাগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসে, অথবা যতক্ষণ না ঢাকা রাজারবাগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কগন পোশাক পরিধান করে লাইভে এসে কর্মবিরতি বন্ধ করার কথা না বলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলমান থাকবে। অতএব, দেশের প্রত্যেক জেলা/ইউনিট সমূহে পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সকল পুলিশ সদস্য স্যার/ভাইরা আমাদের কর্মবিরতি আগামীকাল সকাল থেকেই চলমান থাকছে।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন