বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের গড়মূল্য নেমে এসেছে প্রতি টন ৯১২ ডলারে। ২০২২ সালে এই দাম ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। সেই হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে জাহাজ ভাড়াও কমেছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলেও সয়াবিন তেলের দাম অনেক কমার কথা। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টোচিত্র। এই সময়ে পণ্যটির দাম নামমাত্র কমানো হলেও বাজারে তার প্রভাব দেখা যায়নি। ভোক্তাদের বাড়তি দামেই ভোজ্য তেল কিনতে হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম অর্ধেকের বেশি কমেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে জাহাজ ভাড়াও কমেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য খাতে তেল পরিবহন খরচ কমেছে। সয়াবিন আমদানির খরচও কমেছে। ফলে তেলের দাম অনেক কমার কথা। কিন্তু দেশের বাজারে সেভাবে কমেনি। আর নির্ধারণ করে দেয়া হলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে সরকার কিছুই করতে পারছে না। এছাড়া পণ্যের দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের অ্যানালাইসিসে সমস্যা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। ২০২৩ সালে গড় মূল্য নেমে আসে ১ হাজার ১১৯ ডলারে। বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তা ১ হাজার ১০৫ ডলারে লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে বাজারদর আরও কমে ৯১২ ডলারে স্থির হয়েছে। তবে দেশের বাজারে এর উল্টো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এরপর জানুয়ারিতে কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রতি লিটারে দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা ঘোষণা করেন ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে রোজার আগে পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এরপর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভ্যাটে ছাড় দেয় সরকার। এতে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমে আসে। গত ১৫ই এপ্রিল সেই ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গতকাল থেকে আবারও লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মিলমালিকরা। বাণিজ্য সচিবকে দেয়া চিঠিতে তারা বলেছেন, প্রতিলিটারে ১০ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭৩ টাকা। এছাড়া বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮৪৫ টাকা। ফলে ৫ লিটার বোতলের লিটারপ্রতি দাম বাড়বে ৯ টাকা। আর প্রতি লিটার খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২ টাকা।
সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু মানবজমিনকে বলেন, সয়াবিন তেলের আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিয়ম অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম পরিবর্তন করতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। আমরা আগামীকাল ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বসবো। বিশ্ববাজার যাচাই-বাছাই করে তেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য মো. ওয়াদুদ হোসেন জানান, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। মন্ত্রণালয় বা এসোসিয়েশন থেকেও ট্যারিফ কমিশনকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে যদি কেউ দাম বাড়িয়ে থাকে, তাহলে সেটির কারণ পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন ট্যারিফ কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের অ্যানালাইসিসটা ঠিকমতো হচ্ছে না। রিফাইনারিদের অ্যানালাইসিসে সিল-স্বাক্ষর দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অনেক কমেছে। সেই প্রতিফলন আমরা দেশের বাজারে দেখতে চাই। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন