বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ভাঙচুর ও লুটের আগে ম্যানেজানকে খুঁজতে মসজিদে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তারাবিহ নামাজরত মুসল্লিতে অস্ত্রের মুখে ঘিরে রাখে তারা। মুসল্লিদের মধ্যে থেকে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারকে শনাক্ত করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্র আর গুলি লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
মসজিদে আধুনিক অস্ত্রসহ ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত গিয়েছিলেন। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রুমা উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন রাকাত নামাজ শেষ না হতেই দেখলাম আশপাশ ও সামনে অস্ত্র নিয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। তারা মসজিদে ঢুকে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের ম্যানেজারের কথা জিজ্ঞেস করে। প্রথমে তাকে চিহ্নিত করতে না পারলেও পরে তাকে চিহ্নিত করে তুলে নিয়ে যায়।’
মসজিদে ২০ জনের মতো দুর্বৃত্ত প্রবেশ করেছিল। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র ছিল বলে জানিয়ছেন ইমাম। অস্ত্রধারীরা মুসল্লিদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি। তবে কয়েকজন মুসল্লি অভিযোগ করেছেন, তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন দুর্বৃত্তরা।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা ও ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ধারণা করা হয়েছিল, ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে নেয় দুর্বৃত্তরা। তবে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ জানিয়েছেন, ওই ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি। ওই ব্যাংকের ভল্টে থাকা সব টাকা অক্ষত আছে।
সোনালী ব্যাংকের ওই শাখায় ভাঙচুর চালানোর আগে চাবি নেওয়া হয় ব্যাংকের ক্যাশিয়ার উথোয়চিংয়ের কাছ থেকে। এ সময় তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় বলে অভিযোগ।
উথোয়চিং দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডরমেটোরিতে যাওয়ার পথে তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে ঘিরে ধরে। এরপর মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে প্যান্টের পকেট থেকে ব্যাংকের চাবি এবং আমার কাছে থাকা টাকা নিয়ে যায়।’
এ ঘটনার পর ব্যাংকে গিয়ে ভাঙচুর অবস্থায় দেখতে পান ক্যাশিয়ার উথোয়চিং।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিদারুল আলমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে ১০টি অস্ত্র ও ৩৮০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের অদূরে থাকা আনসার ব্যারেক থেকে চারটি অস্ত্র ও ৩৫টি গুলি ছিনিয়ে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে বান্দরবানের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় কুকি চীনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এ ঘটনার পর আজ বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলা শহরের সোনালী ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। থানচি থানা থেকে ব্যাংক দুটির দূরত্ব ২০০ গজ। উপজেলা পরিষদের দূরত্ব ৩০০ গজ।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫ লাখ এবং কৃষি ব্যাংক থেকে প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তিনি বলেন, ‘ডাকাতরা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে পারেনি। তারা কাউন্টারে রাখা ও গ্রাহকদের উত্তোলন করা টাকা নিয়ে গেছে। ভীতি সৃষ্টি করতে ডাকাতরা ব্যাংকের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলি করেছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন