|
ইকতেদার আহমেদ
|
|
রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির সফলতা-বিফলতা
17 October 2023, Tuesday
পৃথিবীর যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে তার অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রধান দু’টি দল সরকারি ও বিরোধী দল হিসেবে পাল্টাপাল্টি জনগণের দেয়া ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে থাকে। এসব দেশে কদাচিৎ তৃতীয় কোনো দলের সরকার পরিচালনার সুযোগ হয়। তবে তৃতীয় দল বা কতিপয় ক্ষুদ্র দলের সমন্বয়ে সরকারি ও বিরোধী দল উভয়ের সরকার গঠনের নজির একাধিক দেশে রয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দলের মধ্যে যখন যে দল সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তখন সেটি রাজনীতিতে প্রথম শক্তি এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব লাভকারী দলটি দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। এ দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে কখন কোন্ দল সরকারি বা বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে জনগণের ভোটাধিকারের ওপর।
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধ কোনো শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিলে তাকে তৃতীয় শক্তি বলা হয়। আবার অবৈধ তৃতীয় শক্তি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনপূর্বক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখলে সে তৃতীয় শক্তিটির রাজনীতিতে প্রথম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ ধরনের ক্ষমতাচ্যুতি সাধারণত সামরিক বাহিনী সংঘটিত করে থাকে। সামরিক বাহিনী দিয়ে কাজটি সমাধা করতে কোনো ক্ষেত্রে সরকারি দলের একটি অংশ আবার কোনো ক্ষেত্রে বিরোধী দল এগিয়ে আসে। সেনাকর্মকর্তা হতে রাজনীতিকরূপে আবির্ভূত হয়ে দল গঠনপূর্বক ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় নির্বাচন দিয়ে বিজয় লাভ যতটুকু সহজ ক্ষমতা থেকে বিদায়-পরবর্তী বিজয়ী হওয়া সেভাবে সহজ নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ দেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির সফলতা ও বিফলতা উভয় রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের দলত্যাগী কিছু নেতার নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিল। সে সময় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ ছিল। পাকিস্তানের সময়কার প্রধান রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধী ভূমিকার কারণে সেটিকেও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে দেয়া হয়নি। তাই এ দু’টি দলের সমর্থকদের নিরঙ্কুশ সমর্থন জাসদের ভোটবাক্সে গিয়ে পড়ে। প্রথম সংসদ নির্বাচনে মূল বিরোধী দল হিসেবে জাসদের প্রতি যে জনসমর্থন ছিল নির্বাচনী ফলে ক্ষমতাসীনদের কারসাজিতে তা প্রতিফলিত হতে পারেনি। নির্বাচনটি শেষে দেখা গেল ৩০০টির মধ্যে জাসদের আসনসংখ্যা মাত্র ছয়। জাতীয় দল প্রধান অন্য একটি আসনপ্রাপ্ত হয়েছিল। এতে সম্মিলিতভাবে বিরোধী দলের আসনসংখ্যা হয়েছিল সাত। কিন্তু সংখ্যার দিক থেকে নগণ্য হওয়ায় সে বিরোধী দলকে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়া হয়নি।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় শাসন প্রবর্তন করা হলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ছেদ পড়ে। বাকশাল প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী প্রধান চারটি সংবাদপত্রের প্রকাশনা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্য সব সংবাদপত্রের প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়। তৎকালীন সরকারের এই দুই পদক্ষেপ তাদের দীর্ঘদিনের লালিত গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ ব্যক্তি ও বিবেকের স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিল। সে সময় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ হতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে বাকশাল প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও মূলত এ জাতীয় ঐক্য সম্ভব ছিল যদি মুক্তি সংগ্রাম-পরবর্তী সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হতো। বাকশাল প্রতিষ্ঠার সাত মাসের মাথায় সামরিক বাহিনীর একটি অংশ তৎকালীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের একটি অংশের সহযোগিতায় রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে দু’কন্যা ছাড়া সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু সে পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তিন মাসেরও কম সময়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ওই সরকারের পতন হলে অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপ্রত্যাশিতভাবে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের রাজনীতিতে আবির্ভাব। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলি অবলোকন করলে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি-পরবর্তী সেনাবাহিনী এবং জনগণের কাছে তিনি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বিবেচনায় তাকে দেশের নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান নিজ যোগ্যতায় রাজনৈতিক দল গঠনপূর্বক বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের মধ্য দিয়ে তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে সমর্থ হন। দ্বিতীয় সংসদে প্রথম সংসদের সরকারি দল ৪০টি আসনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বিরোধী দলের মর্যাদা লাভ করেছিল। ১৯৮১ সালে সামরিক বাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ দ্বারা জিয়াউর রহমান নিহত হলেও সে ক্ষুদ্র অংশটি রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে পারেনি। এর ফলে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও তার দল ১৯৮২ সারে অবৈধভাবে অন্য সামরিক শাসক এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ পর্যন্ত শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে। জিয়াউর রহমান হত্যায় সামরিক বাহিনীর ক্ষুদ্র অংশটিকে নেপথ্যে সামরিক বাহিনীর কোন শক্তিধর সমর্থন জুগিয়েছিল সেটি আজো রহস্যাবৃত হলেও অজানা নয়।
রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও তার প্রতিষ্ঠিত দল যেমন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল ঠিক তেমনি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত থাকাকালীন তার প্রতিষ্ঠিত দলটি প্রথম ও দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে কখনো সরকারি আবার কখনো বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পায়।
রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিগণিত সামরিক বাহিনী এরশাদের নেতৃত্বে ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে সে সময়কার রাজনীতির দ্বিতীয় শক্তি আওয়ামী লীগ নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণ বিষয়ে বলেছিলেন এতে তিনি অখুশি নন। তার এ মন্তব্য হতে অনুধাবন করা যায় ১৯৮২ সালে তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের পিছনে তার দলের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি এরশাদ ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে বলপূর্বক মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগকে পরাভূত করে প্রথম শক্তি হিসেবে তার নিজের ও দলের অবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন। চতুর্থ সংসদ নির্বাচন-পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সামরিক শাসকের অধীন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান নেয়। কিন্তু পরে কোনো এক অজানা কারণে আওয়ামী লীগ নেত্রীর একক সিদ্ধান্তে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছিল।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কাক্সিক্ষত বিজয় থেকে বঞ্চিত হলে অচিরে আওয়ামী লীগের ভ্রমের অবসান হয়। আওয়ামী লীগ সে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে দেশের মূল বড় দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যৌথ নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতন হলে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের ক্ষমতা ত্যাগকে গণ-আন্দোলনের ফসল বিবেচনা করা হলেও তার প্রতি সেনাসমর্থন প্রত্যাহার না হলে তিনি যে সহজে ক্ষমতা ছাড়তেন না এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
বাংলাদেশ অভ্যুদয়-পরবর্তী ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচন তুলনামূলক বিচারে সার্বিকভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলা যায়। তবে এ কথাও ঠিক, সে নির্বাচনে পতিত সামরিক শাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ন্যায় সমসুযোগ লাভ করলে তার দলের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা আরো কিছুটা বাড়ত।
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনটি তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও এর অনুগামী জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপি তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ ব্যতীত স্বপ্রণোদিত হয়ে জন-আকাক্সক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সপ্তম সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের পথ সুগম করেছিল। ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী তৎকালীন সেনাপ্রধান নাসিমের নেতৃত্বে তৃতীয় শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হলেও সেনাবাহিনীর বৃহদংশের সমর্থন না থাকায় সফলতা পেতে ব্যর্থ হয়। এরপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনের কোনোটিতে অব্যবহিত পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হতে পারেনি।
অষ্টম সংসদের মেয়াদ অবসানের পর সেনাসমর্থিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল সেটি সাংবিধানিকভাবে বৈধ ছিল না। সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পিছনে তৃতীয় শক্তি সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছাড়াও প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের অন্যতম আওয়ামী লীগের সমর্থন ছিল। আর আওয়ামী লীগের সমর্থনের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন আওয়ামী লীগ প্রধান বলেছিলেন, এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করলে আমরা এ সরকারকে বৈধতা দিয়ে দেব। আওয়ামী লীগ প্রধানের এ দু’টি বক্তব্যে প্রমাণ হয় সেনাসমর্থিত এই সরকারকে নেপথ্য থেকে সমর্থন দিয়ে কোন্ দল রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ প্রধান এ সরকারকে বৈধতা দেয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে দেখা গেল সংসদের মাধ্যমে বৈধতা না দিয়ে আদালতের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তবে আদালতে যে মামলাটির মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হয়; মামলাটি দায়েরকালীন এ ঘটনার অস্তিত্ব না থাকায় এ বৈধতাদান আইনসম্মত এবং তাতে সংসদের ক্ষমতা হরণ হয়েছে কিনা এ প্রশ্ন দু’টি সুরাহায় আমাদের হয়তো আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।
বিগত যে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়েছে উভয়ের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠুতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রশ্নবিদ্ধ। যে কোনো দেশে জাতীয় নির্বাচন এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলে তা দেশের স্থিতিশীলতায় ক্ষতিকর এবং সমভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তির জন্য হানিকর।
অভিজ্ঞতা আমাদের ধারণা দেয়, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে তৃতীয় শক্তির আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এ ক্ষেত্র রাজনীতিবিদরা শুধু তৈরি করে দিয়ে ক্ষান্ত থাকেন না বরং সমর্থন জুগিয়ে ও বৈধতা দিয়ে স্বীয় কার্যসিদ্ধি করেন। রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির ব্যর্থতায় তিনবার এ দেশে সামরিক তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। প্রথমোক্ত দু’বার তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দল গঠনপূর্বক নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথম শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পেরেছিল। কিন্তু শেষোক্ত তৃতীয় শক্তির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ দল গঠন না করায় প্রথম শক্তিতে রূপান্তরিত হতে শুধু যে ব্যর্থ হয়েছেন তা নয়; এর কুশীলব অনেকে আজ দেশান্তরী। গণতন্ত্রকে তার স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যেতে না দিলে রাজনৈতিক বা সামরিক যে কোনো তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটবে এটি ইতিহাসের চিরায়ত নিয়ম। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই যে, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত করে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম না করলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরে আসতে দীর্ঘ ২১ বছর অপেক্ষা করতে হতো না।
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আমাদের বর্তমান প্রধান দুই দলের যে কোনোটির একটি নির্বাচনে পরাজয়-পরবর্তী অপর একটি নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা পুনঃবিজয়ের শতভাগ সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলবে। এ উপলব্ধি থেকে বড় দুই দলের কর্ণধাররা গণতন্ত্রকে যদি তার স্বাভাবিক পথে চলতে দেন তাহলে রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির আগমন বিলম্বিত হলেও সামরিক তৃতীয় শক্তির আগমন যে রুদ্ধ হবে সে বিষয়ে কারো মধ্যে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন