ইস্ট লন্ডন মসজিদে ইফতারি ও তারাবির নামাজের চিত্র.. ছবি ব্লগ
লিখেছেন লিখেছেন চেয়ারম্যান ০৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:০২:৩৬ রাত
টেবিলের উপর সাজানো ইফতারি
ইস্ট লন্ডন মসজিদ , মুসলিম ও মারিয়াম সেন্টার
ইউরোপের সর্ববৃহত মসজিদ হলো ইস্ট লন্ডন মসজিদ। দেখতে যত না সুন্দর তার চেয়ে ও বেশি সুন্দর এই মসজিদের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম। মূলত আমাদের দেশের মসজিদগুলো নামাজ পড়া ছাড়া তেমন কিছু হয় না। কিন্তু এই মসজিদকে ঘিরে চলছে সমাজ পরিবর্তনের কাজ।
রমজান যখন শুরু হয় বা তার ও আগে ইস্ট লন্ডন মসজিদের আশে পাশে চললে মনে হয় লন্ডন নয় আমি কোনো মুসলিম দেশে আছি। তারাবির আগে নারী পুরুষ দল বেধে মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছে। আর এই রমজানে তো মহিলাদের জন্য আলাদা একটি বিল্ডিং বানানো হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে মারিয়াম সেন্টার।
এই মসজিদে রমজানে অন্যতম আকর্ষণ হলো, মসজিদ ফান্ড থেকে রোজাদারদের ফ্রি ইফতার করানো।
যার জন্য স্থান হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টারের (LMC ) নিচের ফ্লোর। দৈনিক প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ এই মসজিদে ইফতার করেন।
ইফতার পূর্ব দৃশ্য। পরিপূর্ণ মুসলিম সেন্টারের হল
গড়ে একজনের পিছনে ইফতার বাবদ মসজিদের খরচ হলো ৩ পাউন্ড ( বাংলা ৩৬০ টাকা ) । তবে কেউ ইচ্ছা করলে এক দিনের ইফতারি স্পন্সর করতে পারে। যার জন্য উনাকে ১৫০০ পাউন্ড মসজিদ ফান্ডে দিতে হবে। ঠিক ইফতারের আগে ভলন্টিয়ার ভাইয়েরা টেবিলের উপর এইভাবেই ইফতারি সাজিয়ে রাখেন।
ইফতারের যখন ২০ মিনিট বাকি , মসজিদের মাইক থেকে মসজিদে অবস্থানরত (যারা আসরের নামাজ পরে মসজিদে বিশ্রাম নেন )ভাইদেরকে LMC এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাওয়ার জন্য বলা হয়। আর বোনদেরকে LMC এর তৃতীয় তলায় ইফতারের করতে যাওয়ার জন্য বলা হয়।
লাইনে দাড়িয়ে ইফতার নেওয়ার দৃশ্য
ইফতারের সময় হলে মসজিদের মাইকে আযান দিলে সবাই ইফতার করা শুরু করেন। ৫০০ মানুষ একসাথে এখানে ইফতার করেন , নেই কোন বিশৃঙ্খলা। সবাই সুশৃংখল ভাবে এখানে ইফতার করেন।
অনেকেই এখানে ইফতার করতে আসলে নিজেদের সাথে বিভিন্ন ফল , খেজুর , বিস্কিট। জিলাপী নিজেদের সাথে নিয়ে আসেন এবং অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেন।
এই রমজানে একজন মুরুব্বি চাচাকে দেখলাম প্রত্যেক দিন বাসা থেকে উনি ইফতারি (বিরানি , ছোলা , পাস্তা ) রান্না করে
নিয়ে আসেন। এবং সবার মাঝে তা বিলিয়ে দেন।
এখানে মূলত যে ইফতারি দেওয়া হয় একজন ব্যক্তিকে তা হলো চিকেন অথবা বিফ বিরানি অথবা খিচুরি (জাউয়ের মত) , সাথে খেজুর , ছোলা তরমুজ , কখনো কলা ও আঙ্গুর থাকে। যেই পরিমান দেওয়া হয় একজন মানুষের ইফতারীর জন্য যথেস্ট।
তবে অনেকেই আছেন একবার শেষ করে দ্বিতীয়বার ও ইফতারি নেন।
দ্বিতীয়বার ইফতারি নিচ্ছেন কিছু ভাই।
ইফতারি শেষে আবার সবাই সুশৃংখল ভাবে মসজিদে নামাজ পড়তে যান।
তারাবীহ : সবাই এখানে দলবদ্ব ভাবে তারাবিহ পড়তে আসেন। মহিলাদের সংখ্যা ও অনেক। যা সচারচর আমাদের দেশে দেখা যায় না। সব বয়সের মুসলিম তারাবীতে অংশগ্রহণ করে।
এখানে তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত হয়। যে কেউ ইচ্ছা করলে ৮ রাকাত পড়ে চলে যেতে পারেন। তবে বিতরের নামাজ আমাদের দেশের মত একসাথে তিন রাকাত শেষ করে না। প্রথমে ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরান। তার পর আবার নিয়ত বাধেন। রুকু থেকে উঠে ঈমাম সহ সবাই হাত তুলে লম্বা একটি দুয়া করেন। তার পর সিজদাহ করে আত্তাহিয়াতু পড়ে নামাজ শেষ করেন।
এখানে সবচেয়ে মজাদার বিষয় হলো ইতেকাফে অংশগ্রহণ করতে হলে লটারীতে অংশগ্রহণ করতে হয়। কারণ হলো এত বেশি মানুষ ইতিকাফে অংশগ্রহণ করতে চায় , যার ব্যবস্থাপনা করা মসজিদ কমিটির পক্ষে সম্ভব হয় না। এই বছর এক হাজার মানুষ ইতিকাফে অংশগ্রহণ করতে আবেদন করে। তবে এদের মধ্য থেকে সম্ভবত ৭৫ জনকে লটারির মাধ্যমে সিলেক্ট করা হয়।
ইতিকাফে অংশগ্রহনকারীদের রুম।
রমজানের শেষ দশ রাতে এখানে কিয়ামুল লাইল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমান মুসুল্লি অংশগ্রহণ করে।
মসজিদের নিচ তলায় কিয়ামুল লাইলে অংশগ্রহণকারী মুসুল্লি। এই ছবিটি শুধু নিচ তলার। কিন্তু মেইন হল , LMC গ্রাউন্ড ফ্লোরে আরো বেশি মুসুল্লি কিয়ামুল লাইলে অংশগ্রহণ করে।
এবারের ঈদের নামাজের জন্য এই মসজিদে ৬ টি জামায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জামায়াতে এত মুসুল্লি হয় যেন মসজিদে তিল ধরণের ঠাই নাই। বাস ট্রেনে করে মানুষ দূর দুরান্ত থেকে এই মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য ছুটে আসে। রমজান ও ঈদের সময় এই মসজিদের মাঝে বেহেস্তী পরিবেশের একটু হলে ও ছোয়া পওয়া যায়।
বিষয়: বিবিধ
৯৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন